নারীদের মাঠে যেতে মানা করার অভিযোগে আটক ৩

Slider গ্রাম বাংলা

a3c9311dcf6fee83769777d02d809da0-5a308b0ac9752

 

 

 

 

ফসলের মাঠে নারীদের যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার অভিযোগে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে গতকাল মঙ্গলবার তিনজনকে আটক করা হয়েছে। সন্ধ্যা ছয়টায় কল্যাণপুর গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) নূরানী ফেরদৌসের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। সাড়ে ছয়টার দিকে কল্যাণপুর জামে মসজিদের সভাপতি আলতাব হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান ও পেশ ইমাম আবু মুছাকে আটক করা হয়।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম মেহেদী হাসান জানিয়েছেন, আটক হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তিনি আরও বলেন, অভিযান রাতেও চলবে। মসজিদে বৈঠকসহ নারীদের মাঠে যেতে মানার ব্যাপারে যাঁরা সিদ্ধান্ত নেওয়ায় জড়িত ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেককে আটক করে আইনের আওতায় নেওয়া হবে।

এদিকে গবাদিপশুর খাবার সংগ্রহের জন্য কল্যাণপুর গ্রামের নারীরা গতকালও মাঠে যেতে পারেননি। ‘ফসলের ক্ষতি’ ও ‘অসামাজিক কার্যকলাপ’-এর অজুহাতে নারীদের মাঠে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। গত শুক্রবার মাইকে তা প্রচারের পর থেকে নারীরা ভয়ে আছেন। এমনকি মাঠে থাকা পুরুষদের খাবারও নিয়ে যেতে ভয় পাচ্ছেন তাঁরা।

গতকাল দুপুরে কল্যাণপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, জামে মসজিদের সামনে কয়েকটি দোকানে স্থানীয় বাসিন্দারা বসে গল্পগুজব করছেন। তাঁরা জানান, গ্রামে প্রায় ৮০০ পরিবারের ২ হাজার ৪০০ মানুষের বাস। অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বাড়িতে থাকা নারীরা দুই থেকে চারটা করে ছাগল ও গরু লালনপালন করেন।

পুরুষেরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এসব পশুর খাবারের জন্য নারীরা গ্রামের মাঠে যান। সেখানে গিয়ে তাঁরা ফসল কেটে নিয়ে আসেন। মাঠে থাকা ফসল তছরুপ করেন। তাঁদের বারণ করা যায় না। এসব চুরির সঙ্গে গ্রামের শেখপাড়া ও কামারপাড়ার নারীরা বেশি জড়িত। তবে চুরির ঘটনার সঙ্গে কিছু পুরুষও জড়িত বলে জানান তাঁরা। অতিষ্ঠ হয়ে তাঁরা মসজিদে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন গ্রামের মাঠে কোনো নারী যেতে পারবেন না।

শেখপাড়া ও কামারপাড়া এলাকায় গিয়ে এই প্রতিবেদক অন্তত সাতজন নারী ও দুজন পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন। নারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, মাঠে যাওয়া নিষেধ—মসজিদের মাইকে এমন প্রচারের পর থেকে তাঁরা মাঠে যাননি। এতে ছাগলের খাবারও সংগ্রহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমনকি মাঠে থাকা পুরুষদের খাবারও তাঁরা নিয়ে যেতে ভয় পাচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নারী জানান, সব নারীই কি চুরি করে? দু-একজনের দায় কেন সব নারীর ওপর বর্তাবে। তা ছাড়া পুরুষেরাও তো মাঠে গিয়ে চুরি করে ফসলের ক্ষতি করে। তাদের বেলায় কেন কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি হচ্ছে না?

এক বৃদ্ধা জানান, ভোরে তাঁর স্বামী মাঠে গেছেন। দুপুর হয়ে গেলেও মাঠে তিনি খাবার নিয়ে যেতে পারেননি। মনে ভয় কাজ করছে। যদি কেউ দেখে ফেলে, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে কিছু হতে পারে।

এদিকে মঙ্গলবার ‘ফসলের মাঠে নারীদের যেতে মানা!’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশের পর স্থানীয় প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। মসজিদের পেশ ইমাম আবু মুছাকে ডেকে পাঠানো হয়। দুপুরে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে পেশ ইমামসহ মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে আসা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *