ওজন কমিয়ে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায় যে ৮টি সবজি

Slider লাইফস্টাইল

174943weight-gain

 

 

 

 

ওজন থেকে সাবধান! শরীরে জমতে থাকা মেদ যদি একবার মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তাহলেই বিপদ! সম্প্রতি একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে যাতে দেখা গেছে ওজন বাড়তে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরে ডায়াবেটিস রোগ বাসা বাঁধার ঝুঁকি বাড়ে। আর এক সময়ে গিয়ে ডায়াবেটিস ডেকে আনে ক্যান্সার রোগকে।

কথাটা শুনে যতই অবাক হন না কেন, দা ল্যান্সেট ডায়াবেটিস অ্যান্টি এন্ডোক্রিনোলজি পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণা অনুসারে ওজন বাড়া, সেই সঙ্গে ডায়াবেটিস যদি সঙ্গী হয় তাহলে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে। আর এ কারণেই গবেষকরা ‘বি এম আই’ বা বডি মাস ইনডেক্স সব সময় ২৫ এর নিচে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন। তাদের মতে বি এম আই এর থেকে ওপরে গেলেই বিপদ!

প্রসঙ্গত, সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন নামক সংস্থা ‘ভাইটাল সাইন’ নামক একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতে যা লেখা রয়েছে তা শুধু কপালে ভাঁজ ফেলার জন্য যথেষ্ট নয়, বরং ভয়ঙ্করও বটে! কী লেখা রয়েছে সেই রিপোর্টে জানেন? ধাপে ধাপে একাধিক কেস স্টাডিকে তুলে ধরে বিশেষজ্ঞরা প্রমাণ করেছেন যে ওজন বৃদ্ধির কারণে ক্যান্সার রোগ কিভাবে শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে। এই বক্তব্যটা যে বেজায় ফেলনা নয়, তা আমেরিকায় হওয়া একটি জরিপেও প্রমাণিত হয়েছে। সেদেশ ওবেসিটির শিকার প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষের শরীরেই ক্যান্সার সেলের সন্ধান পাওয়া গেছে, যার পিছনে অতিরিক্ত ওজনকেই দায়ি করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

ইন্টারনেশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার নামক সংস্থার করা একটি কেস স্টাডিতে দেখা গেছে ওজন বৃদ্ধি পেতে থাকলে বিশেষ ধরনের কিছু ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। যার মধ্যে অন্যতম হল মাল্টিপাল মাইলোমা, অ্যাডিনোকার্সিনোমা, থাইরয়েড ক্যান্সার, পোস্ট মেনোপোজাল ব্রেস্ট ক্যান্সার, গলব্লাডার, স্টমাক, লিভার, কিডনি, ওভারি, ইউটেরাস এবং কলোরেকটাল ক্যান্সার প্রভৃতি।

সুতরাং ক্যান্সার থেকে বাঁচতে চাইলে ওজন কমানোর কোনো বিকল্প নেই।

গবেষকদের মতে বাড়িতে নিয়মিত হালকা শরীরচর্চার পাশাপাশি প্রতিদিন যদি কয়েকটি সবজি খাওয়া যায়, তাহলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আসুন জেনে নেওয়া যাক কোন কোন সবজির শরীরে ওজন কমানোর ক্ষমতা রয়েছে…১.পালং শাক
বাঙালির প্রিয় এই সবজিতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় প্রোটিন এবং থাইলেকয়েডস। এই দুটি উপাদানই অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। আর পেট ভরা থাকলে অল্প অল্প করে, বারে বারে খাবার খাওয়ার ইচ্ছাও চলে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে ওজন বাড়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। এই প্রসঙ্গে আরেকটা কথা বলে রাখি, সবুজ এই সবজিটি ওজন কমানোর পাশাপাশি শরীরের গঠনে আরও নানাভাবে ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই প্রতিদিন যদি এক বাটি করে পালং শাক খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন, তাহলে শরীর নিয়ে আরও কোনও চিন্তাই থাকে না।

২. মরিচ
একেবারে ঠিক শুনেছেন! যে কোনও পদের স্বাদ বাড়াতে ব্যবহৃত এই সবজিটি অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে নানাভাবে কাজে লেগে থাকে। আসলে মরিচের শরীরে থাকা ডিহাইড্রোক্যাপসিয়েট নামক একটি উপাদান হজম ক্ষমতা এতটাই বাড়িয়ে দেয়ে যে কোনও খাবারই পুরো মাত্রায় হজম হতে সময় লাগে না। ফলে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমার সুযোগ থাকে না। তবে এখানেই শেষ নয়, মরিচে থাকা ভিটামিন সি-ও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বাড়লে শরীরের মধ্যভাগে মেদ জমার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আর স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ কমাতে পারে একমাত্র ভিটামিন সি। এবার বুঝেছেন তো কীভাবে এই বিশেষ ভিটামিনটি ওবেসিটির লড়াইয়ে নিজেকে কাজে লাগায়!

৩. গাজর
বিটা-ক্যারোটিন এবং ফাইবারে ঠাসা এই সবজিটি খেলে অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে। ফলে বারে বারে খাবার খাওয়ার ইচ্ছা যেমন কমে, তেমনি কাজের ফাঁকে চিপস, কোল ড্রিংসের আনাগোনাও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ওজন কমতে আর কোনও বাঁধাই থাকে না। প্রসঙ্গত, গাজরে থাকা ডায়াটারি ফাইবার নানাবিধ পেটের রোগ এবং কনস্টিপেশনের মতো সমস্যা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা নিয়ে থাকে।

৪. পিঁয়াজ
কুয়েরসেটিন নামে এক ধরনের ফ্লেবোনয়েড একেবারে ঠেসে ঠেসে ভরা রয়েছে পিঁয়াজের শরীরে। এই উপাদানটি চর্বিকে গলিয়ে ফেলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত ওজনের কারণে যাতে কোনোভাবেই হার্টের ক্ষতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতেও পিঁয়াজের জুড়ি মেলা ভার। তাই ওজন কমানোর পাশপাশি হার্টকে যদি দীর্ঘকাল সুস্থ রাখতে চান তাহলে আপনার বাজারের থলেতে কোন সবজিটি থাকা মাস্ট, তা নিশ্চয় এতক্ষণে জেনে ফেলেছেন!

৫. মাশরুম
গবেষণাতে প্রমাণিত হয়ে গেছে যে ওজন কমাতে বাস্তবিকই এই সবজিটির কোনও বিকল্প হয় না। কারণ এতে থাকা ফাইবার এবং প্রোটিন অতিরিক্ত ওজন ঝরানোর কাজটা করে থাকে। আসলে শরীরে ফাইবার এবং প্রোটিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে স্বাভাবিকভাবেই ক্যালোরি গ্রহণের ইচ্ছা কমে যায়। আর একথা কে না জানে যে ক্যালোরি কম মাত্রায় শরীরে ঢোকা মানে ওজন কমার হার বেড়ে যাওয়া।

৬. ফুলকপি
প্রস্টেট, ব্রেস্ট, লাং এবং স্কিন ক্যান্সারকে দূরে রাখার পাশাপাশি এই সবজিটিতে থাকা ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস, টেস্টোস্টেরন হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বিও কমিয়ে ফেলে। শুধু তাই নয়, ফুলকপি এবং ওই একই পরিবারের আরেক সদস্য ব্রকিলতে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি-এর সন্ধান পাওয়া যায়, যা স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ কমিয়ে ওজন কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৭. লেবুর রস
ওজন কমাতে লেবুর রসের কোনও বিকল্প নেই বললেই চলে। আসলে এই ফলটিতে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। ফলে শরীরে মেদ জমার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। প্রসঙ্গত, লেবুতে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে থেকে টক্সিক উপাদানদের বের করে শরীরকে একাধিক রোগ থেকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৮. অ্যালোভেরা
দুটি অ্যালোভেরা পাতার থেকে সংগ্রহ করা জেল, লেবুর রসের সঙ্গে মিশিয়ে যদি নিয়মিত খেতে পারেন, তাহলে ওজন কমতে একেবারেই সময় লাগে না। কারণ এই প্রাকৃতিক উপাদানটির অন্দরে থাকা একাধিক উপাকারি উপাদান মেটাবলিজম রেটকে বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওজন কমতে সময় লাগে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *