রোহিঙ্গা শরণার্থী মেয়েদের মধ্যে বাল্যবিবাহের হার ব্যাপকহারে বাড়ছে। কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে একের পর এক শিশুর বিয়ে হলেও ঠেকানোর কেউ নেই।
বাল্যবিবাহের শিকাররা জানিয়েছে, ভালো থাকার আশায় বিয়ের পিঁড়িতে বসছে তারা।
তসলিমা আর মোমিরার বিয়ে হয়েছে একই ঘরে, মাত্র কয়েকমাস আগে। দুজনেরই বাবা খুন হয়েছেন মিয়ানমারে, এরপর বাংলাদেশে পালিয়ে আসে তারা। তসলিমার বয়স ১৬ বলে জানিয়েছে, পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা সে। মোমিরার বয়সও ১৬, তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তবে তাদের প্রকৃত বয়স আরো কম হতে পারে।
মোমিরা জানান, বাবা নেই, বার্মা থেকে এসেছি, মা খাওয়াতে পারে না। তাই বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। এখন আর লেখাপড়ার সুযোগ নেই।
তবে বাল্যবিবাহের শিকার এই দুই কিশোরী লেখাপড়া করতে চেয়েছিল।
তসলিমা জানান, অবিবাহিত থাকলে লেখাপড়া করতে পারতাম, এখন আর পারবো না।
তসলিমা আর মোমিরার মতো অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থী অল্পবয়সে বিয়ে হয়ে গেছে। বেসরকারি উন্নয়নসংস্থাগুলো মনে করছে, কক্সাবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে বাল্যবিয়ের হার ক্রমশ বাড়ছে। কিন্তু কেন?
কুতুবপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা জনপ্রতিনিধি নুরুল ইসলাম বলেন, মগদের জ্বালাযন্ত্রণায় ওরা মিয়ানমার থেকে চলে এসেছে। এখানে এসে খাওয়া দাওয়া করতে পারে নাই, অভাবে পড়েছে। এজন্য মায়েরা তাদের বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। সরকার যদি আমাদের যেভাবে রেশন দেবে বলেছিল, ১৫ দিন পরপর, সেভাবে দিলে বাল্যবিবাহ ঠেকানো যাবে। নাহলে ঠেকানো যাবে না। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দশ শতাংশ বিয়ে হয় স্বাভাবিকভাবে। আর ৯০ শতাংশ হয় অভাবের কারণে।
রোহিঙ্গা সঙ্কটের কারণে অন্যতম ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু ও নারীরা। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিয়ে দিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে বাল্যবিবাহের শারীরিক ও মানসিক কুফলকে কেউ বিবেচনায় আনছে না।
আইএমও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ড. রোমানা ইসলাম বলেন, বাল্যবিবাহের শিকার মেয়েরা প্রথমত অপুষ্টিতে ভোগে। যেহেত তারা নিজেরাই ছোট এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক, তাদের বাচ্চাগুলোও ছোট এবং অপরিণত হয়। অনেকসময় তাদের ডেলিভারির সময় অনেক বেশি রক্তক্ষরণ হয়। এবং তারা নিজেরা নিজেদের যত্নতো নিতেই পারে না, সন্তানের যে পরিমাণ যত্ন নেয়া দরকার, সেটাও নিতে পারে না।
রোহিঙ্গা শিশুদের খাদ্য, শিক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে বাল্যবিবাহ কমতে পারে।
– ডিডাব্লিউ