কিশোরগঞ্জের ভৈরবের ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমানকে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে হত্যার অভিযোগে হওয়া মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। এতে চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ওসিসহ ১৯ জন আসামির বিরুদ্ধে আনা হত্যার অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দিতে বাদীর আইনজীবী আদালতে ২৫ নভেম্বর সময়ের আবেদন করেন। ওই দিনই আদালত তা নামঞ্জুর করে প্রতিবেদনটি গ্রহণ করেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে বাদী উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হবেন বলে জানিয়েছেন। হত্যার রহস্য উদ্ঘাটিত না হওয়ায় হতাশ ওই নিহত ব্যবসায়ীর পরিবার।
হাবিবুর রহমানের বাড়ি ভৈরব পৌর শহরের ভৈরবপুর উত্তরপাড়ায়। ২২ বছর ধরে পরিবার নিয়ে তিনি চট্টগ্রামের রিয়াজুদ্দিন বাজারে বাস করছিলেন। চট্টগ্রামে তিনি মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবসা করতেন। ব্যবসার কাজে তিনি গত ১ মে বিকেলে চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে চাঁদপুর যাচ্ছিলেন। ওই দিন সন্ধ্যায় সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড এলাকায় রেললাইনের মাঝখানে হাবিবের লাশ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা লাশ শনাক্ত করেন। পরে ভৈরবে গ্রামের বাড়িতে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।
১৭ মে নিহত হাবিবুরের ছোট ভাই আইয়ুব হোসেন বাদী হয়ে চট্টগ্রামের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে হত্যা মামলা করেন। আদালত পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলায় ১৯ জনকে আসামি করা হয়। তাঁরা হলেন চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ওসি এস এম শহীদুল ইসলাম, সীতাকুণ্ড রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার এএসআই মশিয়ার হোসেন, রেলওয়ে থানার কনস্টেবল নিখিল ভট্টাচার্য, জাকির হোসেন, চাঁদপুর রেলওয়ে থানার এটিএসআই দুলাল চন্দ্র, কনস্টেবল আল আমিন, মাহের ইসলাম, নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের মাস্টার প্রহল্লাদ চন্দ্র দে, সীতাকুণ্ড থানার এসআই আবদুর রব, আন্তনগর ট্রেন মেঘনার প্রহরী শ্যামল কান্তি ঘোষ, ট্রেনের অ্যাটেনডেন্ট দুলাল চন্দ্র দাস, আবদুল কাদের, ক্যারেজ অ্যাটেনডেন্ট সাইদুর রহমান, আনোয়ার হোসেন, দেলোয়ার হোসেন ও নিক্সন চাকমা এবং সীতাকুণ্ড রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল নাজিম উদ্দিন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন দাবি করেন চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ওসি।
মামলার এজাহার ও নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, হাবিবুর ১ মে বিকেলে চট্টগ্রাম থেকে আন্তনগর মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনে চাঁদপুর যাচ্ছিলেন। এ সময় তাঁর ব্যাগে প্রায় ১৭ লাখ টাকা ছিল। ট্রেনটি সীতাকুণ্ড স্টেশন অতিক্রম করার সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্য হাবিবুরের ব্যাগ তল্লাশি করেন। ব্যাগে টাকা দেখতে পেয়ে তাঁরা বগির শৌচাগারের কাছে নিয়ে ব্যাগটি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু হাবিবুর দিচ্ছিলেন না। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা তাঁকে আগ্নেয়াস্ত্রের বাঁট দিয়ে পিটিয়ে ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে যান এবং তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ট্রেন থেকে ফেলে দেন।
এ ঘটনায় মামলা করার সাড়ে ছয় মাস পর তদন্ত শেষে গত ১২ নভেম্বর তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম কার্যালয়ের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম চট্টগ্রাম মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তদন্ত করতে গিয়ে সাক্ষী পাওয়া যায়নি। হত্যার আলামতও পাওয়া যায়নি। এ কারণে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
নিহত ব্যবসায়ী হাবিবুরের স্ত্রী রুমি আক্তার বলেন, ‘আমাদের অভিযোগ ছিল পুলিশের বিরুদ্ধে। মামলাটি তদন্ত করেছে পুলিশ বিভাগ থেকে। সে কারণে আমার ধারণা, পেশার মানুষদের রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে।