তুহিন সারোয়ার,গাজীপুরঃ
সোর্সদের দৌরাত্মে পুলিশের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ। অভিযোগ রয়েছে যে,সোর্সরাই এখন বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজিতে নেমে পড়েছে। এদের বির”দ্ধে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র মাদক ব্যবসা, জমিদখল, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের অভিযোগে একাধিক মামলাও রয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের কাঁধে ভর করে এলাকা দাবড়ে বেড়ায় তারা। অনেক ক্ষেত্রে তারা নিজেদের ‘পুলিশ’ সদস্য বলেও পরিচয় দেয়। আর এ ক্ষেত্রে এলাকার সাধারণ মানুষ তাদের কাছে এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়ে। ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদাবাজি, জমি দখলের মধ্যস্থতা, এমনকি কাঁচামালের আড়ত থেকেও এরা চাঁদাবাজি করছেনা বলে অভিযোগ রয়েছে। সুশীল সমাজ বলছেন,পুলিশের সোর্স বা অনুচরদের বির”দ্ধে অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ নতুন নয়।
অনেক সময় পুলিশের সোর্সের দাপটে সাধারণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়ছেন এমন অভিযোগও রয়েছেন। ভুক্তভোগীরা জানান, এসব সোর্স পুলিশের গাড়িতে চলাফেরা করে বলে তাদের ভয়ে সাধারণ মানুষ তটস্থ থাকে।এ সুযোগে নানা অপরাধ করে বেড়ায় তারা। একটি গোপন সূত্র জানান, অপরাধী গ্রেফতারে নানা তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করাই সোর্সের কাজ। পুলিশ এসব সোর্স নিয়োগ করে অপরাধীদের মধ্য থেকেই। বিনিময়ে তারা অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা পায়। কিন্তু সোর্সেরা অপরাধী ও মাদক ব্যবসায়ীদের ধরিয়ে দিয়ে নিজেরাই ব্যবসা শুর” করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।এরা মাঝে মধ্যে বিরোধী গ্রুপের দু-চার জনকে গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ ধরিয়ে দিয়ে নিজেদের ব্যবসা নিরাপদ রাখেন। বোর্ড বাজার এলাকার ব্যাবসায়ী আলম জানান,খাইলকৈর এলাকার অক্কাস নামের পুলিশ সোর্স পরিচয় দিয়ে গত কয়েকদিন আগে আমাকে রাতে খাইলকৈর রাস্তায় আটকিয়ে পুলিশের সামনে আমার পকেটে ইয়াবা ডুকিয়ে দিয়ে ২০ হাজার টাকা দাবী করেন পরে পাচ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়া পাই। বোর্ড বাজার খাইলকৈর এলাকার জয়নাল জানান, উক্ত এলাকার পাকিস্তানী আরিফ নামের এক সোর্স আমাকে ফোন দিয়ে চাদা দাবী করেন,নইলে ইয়াবা দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেবার হুমকি দেয়।
টঙ্গী কলেজ গেইট এলাকার কলেজ ছাত্র আমিনুল ইসলাম বলেন, মনির হোসেন নামের এক সোর্স টঙ্গী পুলিশের সঙ্গে থেকে প্রতিদিনই কোনো না কোনো মানুষকে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করে। গত এক সপ্তাহ আগে আমার নামে মামলা আছে বলে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে ২৫ হাজার টাকা দাবি করে। পরে আমি ৩ হাজার ৩০০ টাকা দিয়ে ছাড়া পাই।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নূর খান লিটন বলেছেন, “পুলিশের সোর্সরা কখনও কখনও পুলিশের চেয়ে বেশী ভয়াবহতার প্রকাশ ঘটায়।গাজীপুরে গত কয়েক বছরে সোর্সদের অপকর্মে অতিষ্ঠ হয়ে আউচপাড়া এলাকার নাজির নামে পুলিশের এক সোর্সকে গলা ও হাত-পা কেটে হত্যা করে সন্ত্রসীরা।গত ২৪ মে, ২০১৬ ইং টঙ্গীতে কুতুব উদ্দিন (৩২) নামে পুলিশের এক সোর্সকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে তার পায়ের রগ কেটে ও এলোপাথারি কুপিয়ে হত্যা করেছে করেছেন দুর্বৃত্তরা।গত ৭ মে,২০১৫ইং,রাসেল নামের এক পুলিশের সোর্সকে টঙ্গী এরশাদ নগর পুনর্বাসন এলাকার ৭ নম্বর ব্লকে দুর্বৃত্তরা একা পেয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাথাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। ২২মে,২০১৫ ইং, আমিনুর রহমান ওরফে মোমিন নামের এক পুলিশের সোর্সকে টঙ্গীর বেক্সিমকো সড়কের পার্ল প্রিন্স পোশাক কারখানার পেছনে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা ।৩ ফেব্রুুয়ারী,২০১৬ ইং টঙ্গীএরশাদনগর এলাকার ৪নং ব্লকের খোকন নামের এক পুলিশের সোর্সকে গণধোলাই দিয়ে এলাকাবাসী হত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে গত ৮এপ্রিল,২০১৭ইং,কোনাবাড়ী পুলিশ ক্যাম্পের এএসআই আনোয়ার হোসেনের ব্যক্তিগত সোর্স মাসুদ রানা নামের এক কিশোরকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
৮ এপ্রিল, ২০১৭ইং,গাজীপুর দেওলিয়াবাড়ী পেয়ারা বাগান এলাকায় পুলিশের সোর্স আল-আমিন মোল্লাকে গলা কেটে খুন করে দুর্বৃত্তরা।তবে সোর্সদের এসব অভিযোগ মানতে রাজি নন গাজীপুর ভোগড়া পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ এস,আই, জাকির হোসেন। তিনি বলেছেন, “পুলিশের সদস্যরা যাদের সোর্স হিসেবে ব্যবহার করে, বিভিন্ন শর্ত মেনে তাদের কাজ করতে হয়। দু’একজন কোন ঘটনা ঘটালে তাদের বির”দ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়।এদিকে সচেতন মহল বলছেন,সোর্স নিয়োগ ও পরিচালনায় সঠিক কৌশল অবলম্বন না করায় অপরাধ আরো বাড়ছে। সাম্প্রতিককালে বহুল আলোচিত, এগুলোর পেছনে বড় ভূমিকা রয়েছে এই সোর্সদের। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঠিক দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করায় ও ভাবমূর্তি রক্ষায় পুলিশের সোর্স নিয়োগ ও পরিচালনার বিষয়টিতে সংশ্লিষ্টদের বিশেষ গুর”ত¦ দেয়া জর”রী হয়ে পড়েছে। তাই সোর্স নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো সতর্ক হতে হবে।