কারা তুলে নিয়ে গেছে আঁচ করতে পারছে পুলিশ

Slider টপ নিউজ

21c1c2ce8146a2e5e9d7a08416b868dc-5a28594f3082f

 

 

 

 

ধানমন্ডি ৯/এ সড়কের যে ভবনে সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান থাকেন, তার বাইরে দুটি নোটিশ ঝোলানো। দুটিতেই লেখা, ভবনটি সিসিটিভির আওতায় আছে। তবে এই নজরদারি কোনো কাজে আসেনি। এর মধ্যেই কালো টি–শার্ট পরা সুঠামদেহী তিন লোক বাসায় এসে ফোন, ল্যাপটপসহ প্রযুক্তি ব্যবহারের জিনিসপত্রগুলো নিয়ে গেছে। তাদের মাথার টুপি নাক পর্যন্ত নামানো ছিল। ফলে ফুটেজ দেখে আগন্তুকদের চেহারা বুঝতে পারছে না পুলিশ।

৪ ডিসেম্বর বেলজিয়াম থেকে আসা মেয়েকে আনতে ধানমন্ডির বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন মারুফ জামান। ওই দিন রাত পৌনে আটটার পর থেকে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। পুলিশ বলেছে, মারুফ জামানের সবশেষ অবস্থান ছিল বিমানবন্দরের কাছে দক্ষিণখানের কাওলায়। তাঁর গাড়িটি গতকাল সকাল পর্যন্ত তিন শ ফুট এলাকায় পার্ক করা ছিল।

ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল লতিফ বলেছেন, ‘আমরা সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েছি। কিন্তু যারা মারুফ জামানের ঘরে ঢুকেছে, তারা সিসিটিভি সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখে। তাদের মাথায় ক্যাপ ছিল এবং এর সেটা ছিল প্রায় নাক পর্যন্ত নামানো। তারা বাসায় ঢুকেছে মাথা নিচু করে। এ কারণে তাদের চেহারা চেনা যাচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, যে ভবনে মারুফ জামান থাকেন, সেই একই ভবনে তাঁর ভাইবোনও থাকেন। তাঁদের পারিবারিক কোনো ঝামেলা আছে বলে তাঁর মনে হয়নি।

ঘটনা তদন্তে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ কাজ শুরু করেছে বলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের প্রধান মনিরুল ইসলাম। তবে অপর একটি সূত্র বলছে, কারা মারুফ জামানকে তুলে নিয়ে গেছে, তা আঁচ করতে পারছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ জন্য তদন্ত বেশি গতি পাবে না বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।

গতকাল বুধবার মারুফ জামানের মেয়ে সামিহা জামান বলেন, ‘বাবা বাসা থেকে বের হবার পর দুবার ফোন করেছেন। পৌনে আটটার দিকে একবার হ্যালো হ্যালো করে রেখে দিয়েছেন। মনে হয়েছে, তিনি কিছু শুনতে পাচ্ছিলেন না। পরেরবার বলেছেন, কয়েকজন লোক যাবে তাদের যেন ল্যাপটপ, বাসার কম্পিউটারের সিপিইউ, ক্যামেরা ও স্মার্টফোন দিয়ে দেওয়া হয়। ফোন ধরেছিল গৃহপরিচারিকা।’ সামিহা আরও বলেন, তাঁর বাবা তিনটি ফোন ব্যবহার করেন। তিনি বাইরে বের হবার সময় স্মার্টফোন নেন না। সাধারণ ফোনটি তাঁর সঙ্গে ছিল। রাত আটটার দিকে তিনজন লোক এসে সবকিছু নিয়ে যায়। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই তিনজন লোক পুরো বাড়িতে তল্লাশি চালায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়ার রেশ না কাটতেই হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের তালিকায় যুক্ত হলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান। তাঁর নিখোঁজ হওয়ার সম্ভাব্য কারণ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ওয়াকিবহাল মহলে শুরু হয়েছে আলোচনা। তাঁর কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না, তিনি ঠিক কোন সময়ে রাষ্ট্রদূত ছিলেন, ভালো জায়গায় পদায়ন হয়েছিল কি না, রাজনৈতিক বা সংবেদনশীল বিষয়ে কারও সঙ্গে কথা বলেছিলেন কি না, বা সম্প্রতি তিনি কারও সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করছিলেন কি না—এমন সব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মানুষের মাথায়।

মারুফ জামানের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলেছে, তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন না। তবে রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী কোনো কাজে লিপ্ত ছিলেন এমন তথ্য মেলেনি। তাঁর বোন শাহরিনা কামাল বলেন, মারুফ জামান ১৯৭৭ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। শারীরিক সমস্যার জন্য ১৯৮২ সালে তিনি ‘মেডিকেল রিটায়ারমেন্ট’ নেন। ওই একই বছর তাঁকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি দিয়ে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে পাঠানো হয়। এরপর থেকেই তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। কাতার ও ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি দেশে এসে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে যোগ দেন। চার বছর পর অবসরে যান। শাহরিনা আরও বলেন, ২০১২ সালে প্রথমে মা ও পরে স্ত্রী এবং পরের বছর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মারুফ জামান মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন এবং তিনি ঘর থেকে খুব একটা বের হতেন না।

মারুফ জামানের গাড়িটি গতকাল সকাল পর্যন্ত তিন শ ফুটের যে জায়গায় পার্ক করা ছিল, এই এলাকা দিনের বেলা একেবারেই নির্জন থাকে। তবে বিকেলে মানুষের সমাগম হয়। ঘটনাস্থল থেকে দুই শ গজ দূরে একটি চায়ের দোকানে গতকাল আড্ডা দিচ্ছিলেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালকেরা। তাঁর মূলত ওই এলাকাতেই যাত্রী পরিবহন করে থাকেন। ইদ্রিস আলী নামের এক চালক বলেন, তিনি মঙ্গলবার রাত ১১টাতেও একটা সাদা গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন। ভেবেছেন, কেউ হয়তো গাড়ি পার্ক করে আশপাশে কোথায় গিয়েছেন।’

খিলক্ষেত থানার উপপরিদর্শক এম এ জাহিদ গতকাল বলেন, গাড়ির ভেতরে একটা অ্যারোসল, একটা বাটি ও পানির বোতল পেয়েছেন। গাড়িতে ধস্তাধস্তি বা অন্য কোনো রকম অস্বাভাবিকতার চিহ্ন ছিল না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *