জেরুজালেম কি তাহলে ইসরায়েলেরই?

Slider সারাবিশ্ব

25c24438d2c3e0a07e2eb20073d2897b-5a27c0698b6c7

 

 

 

 

 

প্রাচীন শহর জেরুজালেম। এই শহরে মুসলিম, ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের পবিত্র স্থান। তাই এই শহরকে নিজেদের করতে চায় তারা। এ নিয়ে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে যুগের পর যুগ ধরে চলছে দ্বন্দ্ব-সংঘাত-সহিংসতা। তবে শেষ খবর হচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তে প্রশ্ন উঠছে—জেরুজালেম কি তবে ইসরায়েলের হতে চলেছে?

বিবিসি বলছে, ১৯৬৭ সাল থেকে ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেমে ইহুদি বসতি গড়তে শুরু করে। ১৯৮০ সালে জেরুজালেমকে রাজধানী ঘোষণা করে ইসরায়েল। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তখন তাদের সমর্থন দেয়নি। পশ্চিম তীর ও গাজায় ইসরায়েলি দখলদারত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনে প্রথম ইন্তিফাদার (এর অর্থ গণ-অভ্যুত্থান) সূচনা হয়েছিল ১৯৮৭ সালে। ১৯৯৩ সালে ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের মধ্যে শান্তি চুক্তির মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটে। ওই শান্তি চুক্তি অনুযায়ী, ফিলিস্তিনও চায় পূর্ব জেরুজালেম তাদের রাজধানী হবে।

শান্তি চুক্তির এত বছর হয়ে গেলেও সংকটের সমাধান হয়নি, সমাধানের কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই চুক্তির প্রতি সম্মান দেখিয়ে নিজেদের দূতাবাস জেরুজালেমে রাখেনি। ইসরায়েলে যেসব দূতাবাস আছে, সবই তেল আবিবে অবস্থিত। মার্কিন দূতাবাসটি সেখান থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করা হবে কি না, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি ছয় মাস অন্তর সে সিদ্ধান্ত জানাতে হয়। এত দিন পর্যন্ত সব প্রেসিডেন্টই পরবর্তী ছয় মাসের জন্য সিদ্ধান্তটি স্থগিত করতেন। তবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তা করবেন না বলে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছেন। আজ বুধবার এ-সংক্রান্ত ঘোষণা আসতে পারে। তখন মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে সরিয়ে জেরুজালেমে নিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেবেন। বিবিসি বলছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানীর স্বীকৃতি দিলেও মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে সরিয়ে জেরুজালেমে নেবেন না।

ওয়াশিংটন ডিসিতে এক অনুষ্ঠানে রোববার ট্রাম্পের জামাতা ও মধ্যপ্রাচ্যে শান্তিপ্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের দূত জ্যারেড কুশনার বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট এখনো জেরুজালেম প্রশ্নে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি। তবে জেরুজালেমকে ট্রাম্প ইসরায়েলের রাজধানীর স্বীকৃতি দেবেন বলে যে খবর বের হয়েছে, সেটি অগ্রাহ্য না করারও পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তাঁর কথাই সত্য হতে যাচ্ছে।

ট্রাম্পকে এমন সিদ্ধান্ত না নেওয়ার জোরালো দাবি মুসলিম বিশ্বের। আরব লিগের প্রধান আহমেদ আবুল গেইত স্পষ্ট করে বলেছেন, এমন অবিবেচকের মতো সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যসহ পুরো বিশ্বের স্থিতিশীলতা নষ্ট করবে। জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি টুইট বার্তায় বলেছেন, এমন সিদ্ধান্ত ‘বিপজ্জনক পরিণতির’ দিকে ঠেলে দেবে সবাইকে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান জেরুজালেম নিয়ে ‘সীমা লঙ্ঘন’ না করতে ট্রাম্পের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, জেরুজালেমকে নিয়ে ওই ধরনের সিদ্ধান্ত মুসলমানদের বিপক্ষে ‘রেড লাইন’ অতিক্রমের পদক্ষেপ বলে বিবেচিত হবে। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘মি. ট্রাম্প! জেরুজালেম মুসলিমদের জন্য একটি রেড লাইন। এমনটা করলে এ বিষয় নিয়ে আমরা ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পর্যন্ত ছিন্ন করতে পারি।’

এমন পদক্ষেপে স্বভাবতই চিন্তায় পড়েছে ফিলিস্তিনিরা। গার্ডিয়ান বলছে, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বিশ্বনেতাদের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন সিদ্ধান্ত কী বিপদ আনতে পারে তিনি বিশ্বনেতাদের তা বোঝানোর চেষ্টা করছেন। আর স্বাধীনতাকামী হামাস হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলে নতুন করে তারা ইন্তিফাদা বা গণ-অভ্যুত্থান শুরু করবে।

ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তের কারেণ এখন কী হবে, সে ব্যাপারে বিবিসির মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরবিষয়ক প্রতিনিধি বারবারা প্লেট-উসার বলেছেন, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য ট্রাম্প এমনটা করছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, প্রেসিডেন্ট শুধু বাস্তব পরিস্থিতির স্বীকৃতি দিতে এমনটা করছেন। তবে ঘটনা যা-ই হোক না কেন, ফিলিস্তিনিরা যে কিছুই পাচ্ছেন না, বঞ্চিত হচ্ছেন—এটা নিশ্চিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *