আলিশা, অরিশা, আদিবা ও অন্বেষা চার বোন। গত ১৭ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে একসঙ্গে ওদের জন্ম হয়েছে। অন্বেষা ছাড়া অন্য তিনজন আজ সোমবার বাড়ি ফিরছে। ঠোঁট ও তালুকাটা অবস্থায় অন্বেষার জন্ম হয়েছে। তার রক্তেও সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। তবে অন্য তিনজন এখন বেশ ভালো আছে।
সোমবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক বিভাগে কথা হয় চার কন্যার বাবা আলী আকবর ও মা ইয়াসমিনের সঙ্গে। তিন কন্যাকে নিয়ে বাড়ি ফিরবেন বলে প্রস্তুতি হিসেবে মেয়েদের নতুন জামা গায়ে দিয়ে দিয়েছেন। চোখে কাজল দিয়ে সাজিয়েছেন মা। জন্মের পর থেকে এই চার কন্যাকে নবজাতক বিভাগের বিশেষ নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (স্ক্যাবু) রাখা হয়। ওদের অবস্থার একটু উন্নতি হলে কেবিনে বাবা মায়ের কাছে দেওয়া হয়।
নবজাতক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মনীষা ব্যানার্জি জানান, এই চার নবজাতক ৫ কেজি ৩০ গ্রাম ওজন নিয়ে জন্ম নেয়। জন্মের সময় গড়ে ওদের ওজন ছিল সাড়ে ১২০০ গ্রামের মতো। ওদের জন্ম হয়েছে ৩১ সপ্তাহে, নির্ধারিত সময়ের নয় সপ্তাহ আগে। সময়ের আগে কম ওজন নিয়ে একসঙ্গে চার নবজাতকের জন্ম ওদের জন্য বিরাট ঝুঁকির বিষয়। ঠোঁট ও তালুকাটা নিয়ে জন্ম নেওয়া নবজাতকের অবস্থা প্রথম থেকেই নাজুক ছিল। চারজনের বেলাতেই শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, রক্তে শর্করা কমে যাওয়া এবং সংক্রমণের ভয় থেকেই যাচ্ছে। শীতের সময় ওদের বেশি যত্নের প্রয়োজন হবে।
অধ্যাপক মনীষা ব্যানার্জির রুমে আলিশা, অরিশা ও আদিবাকে আনা হয়। বাবা ও মায়ের কোলে দুজন আর একজন তাদের বড় মামার কোলে করে আসে। স্ক্যাবু থেকে আনা হয় অন্বেষাকেও। চার কন্যার বাবা আলী আকবর একটু পরপর মেয়েদের শরীর কম্বল দিয়ে ঢেকে দিচ্ছিলেন, যাতে ঠান্ডা লেগে না যায়। তিনি জানান, ওদের জন্মের আগে থেকেই জানতেন তিনি চার সন্তানের বাবা হতে যাচ্ছেন। দুটি ছেলে ও দুটি মেয়ে চেয়েছিলেন, কিন্তু জন্মের পর দেখেন চারজনই মেয়ে। হাসিমুখে জানালেন, যা হয়েছে ভালোই হয়েছে।
একসঙ্গে চার কন্যার জন্ম দিয়ে মা ইয়াসমিনের অবস্থা বেশ খারাপ। অস্ত্রোপচারের আগেই দেখা দেয় নানান জটিলতা। তিনি জানান, এইচএসসি পড়ার সময় গত দুই বছর আগে বিয়ে হয়। স্বামী ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। কাজের জন্য বিদেশ চলে যাবেন বলে দ্রুত সন্তান নিতে চাচ্ছিলেন। মেয়েদের জন্মের পর এখন চার মেয়েকে দেখাশোনার জন্য বাড়তি লোক রাখতে হবে। ঘরের ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে সবকিছুতেই পরিবর্তন আনতে হবে।
চার কন্যাকে অধ্যাপক মনীষা ব্যানার্জির কাচের বড় টেবিলে শোয়ানো হলে কোন মেয়ের কী নাম জানতে চাইলে লাজুক হাসেন আলী আকবর। মেয়েদের নাম রাখলেও কোন মেয়ের কী নাম তা ঠিক মনে রাখতে পারছেন না। স্ক্যাবুতে যে আছে, তার নাম অন্বেষা শুধু এটুকু মনে থাকে।
স্ক্যাবুতে একজনকে থাকতে হলেও তিনজন বাড়ি ফিরতে পারছে—এটা নিয়ে স্ক্যাবুতে কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সদেরও খুশির অন্ত নেই। স্ক্যাবু থেকে একজন বেশ একটু চিৎকার করেই জানালেন, অন্বেষার ওজন একটু বেড়েছে।