আফগানিস্তান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছে খুব বেশি দিন নয়, কিন্তু তারা এর মধ্যেই একজন তারকা উপহার দিয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটকে। তিনি হচ্ছেন টিনএজ স্পিনার রশিদ খান।
যাকে এখনই মানা হচ্ছে একজন বিরাট সম্ভাবনাপূর্ণ স্পিন তারকা হিসেবে। বিপিএলের চলতি পঞ্চম আসরের প্রথম থেকেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হয়ে খেলেছেন তিনি। তারপর জাতীয় দলের সঙ্গে যোগ দিতে উড়াল দিয়েছেন রশিদ।
রশিদ ২০১৫ সালে আফগানিস্তানের হয়ে টি-টোয়েন্টি এবং আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলা শুরু করেন। ২৯টি একদিনের ম্যাচ খেলে ৬৩টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। সব ধরণের টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন ১২৪টি, উইকেট নিয়েছেন ১৫৪টি।
ক্রিকেট দুনিয়ার সবাই নড়েচড়ে বসেন যখন এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ক্রিকেটের সবচেয়ে দামী টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ৪ কোটি রুপি দামে তাকে কিনে নেয়। আইসিসির কোনো সহযোগী সদস্য দেশ থেকে এর আগে আর কখনো এত দামে কোনো ক্রিকেটারকে কেনা হয় নি।
কিভাবে তার ক্রিকেট খেলা শুরু হয়েছিল? রশিদ খান বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকে পাকিস্তানের শাহিদ আফ্রিদি আর ভারতের অনিল কুম্বলের খেলা খুব দেখতাম।
এরাই ছিলেন আমার আদর্শ। যে ভাবে তারা বোলিং করতেন তা আমার খুব ভালো লাগতো। তাদের আদর্শ ভেবে নিয়েই আমার ক্রিকেট খেলা শুরু। ‘
রশিদ খানের বোলিংএর একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তার নির্ভূল লক্ষ্য এবং বৈচিত্র্য । এত অল্প বয়সে এই ক্ষমতা তার কিভাবে এলো? জবাবে রশিদ খান বলছিলেন, পারিবারিকভাবে ক্রিকেট অনুশীলন করার মধ্যে দিয়ে স্বাভাবিকভাবেই এটা হয়েছে।
‘আমি ক্রিকেট খেলা শুরু করি বাড়িতেই। আমার সাত ভাই, এবং তারা সবাই ক্রিকেট খেলত, ক্রিকেট ভালোবাসতো। ভাইয়েরা মিলেই বাড়ির বাগানে আমরা ক্রিকেট খেলতাম। আমি প্রথম বল করা শুরু করি টেপ দিয়ে প্যাঁচানো টেনিস বল দিয়ে। তখনই আমার বল করা দেখে আমরা ভাইয়েরা, পরিবারের অন্যরা বলত- তুমি পারবে। ‘
‘পরে আমরা আসল ক্রিকেট বল নিয়ে খেলা শুরু করলাম। তখনই আমি বেশ জোরে লেগ স্পিন করতে পারতাম। কাজেই এভাবেই বলতে পারেন খুব স্বাভাবিকভাবেই আমার এই বোলিং এর ক্ষমতা তৈরি হয়েছে। ‘
রশিদ খান পৃথিবীর নানা দেশে বেশ অনেকগুলো টি-টোয়েন্টি লিগে খেলেছেন, কিন্তু তার নিজের কথায় আইপিএলে খেলার অভিজ্ঞতার সাথে আর কোনো কিছুর তুলনা হয় না, ‘আমার মনে হয় আইপিএলে আমি ভালো ভালো খেলোয়াড় এবং কোচিং স্টাফদের পেয়েছি। সেখানে কোচদের মধ্যে ছিলেন টম মুডি, মুরলিধরন বা ভিভিএস লক্ষণ। এবং সেখানে আমি অনেক কিছু শিখেছি। ‘
‘বিশেষ করে মুরলিধরন তার অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছু আমার সাথে শেয়ার করেছেন। সেটা এক দারুণ সময় কেটেছে। তাই আইপিএলে খেলাটা আমি দারুণ উপভোগ করেছি, অনেক কিছু শিখেছি। তাই সেই অভিজ্ঞতাটা একেবারেই অতুলনীয়। ‘
আইপিএল ছাড়াও রশিদ খান এর মধ্যে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে গায়ানা আমাজন ওয়ারিয়ার্সের হয়ে খেলেছেন, সেখানে একটি হ্যাটট্রিকও করেছেন। এবার অস্ট্রেলিয়ার নামকরা টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট বিগ ব্যাশেও খেলতে যাচ্ছেন তিনি অ্যাডিলেইড স্ট্রাইকার্সের হয়ে। অস্ট্রেলিয়ায় ইতিমধ্যেই তাকে নিয়ে বেশ আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
‘আমার মনে হয় অস্ট্রেলিয়ায় বিগ ব্যাশের অভিজ্ঞতাটা হবে অনেকটা ভিন্ন ধরণের। ভারতের মতো সেখানকার উইকেটে হয়তো এতটা স্পিন ধরবে না। কাজেই সেখানে আমি আমার মূল জিনিসগুলো ঠিক রেখে বল করতে চেষ্টা করবো, তার পর দেখবো কি হয়। ‘
অস্ট্রেলিয়া হচ্ছে সর্বকালের সেরা লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্নের দেশ । হয়তো তার সাথেও সেখানে দেখা হবে রশিদ খানের । তিনি এ নিয়ে কতটা উদ্দীপনা বোধ করছেন?
‘আমার সাথে তার এখনো দেখা হয় নি। আমি তার সাথে দেখা করতে চেয়েছি কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও সে সুযোগ পাই নি। আমি অপেক্ষা করছি যখন অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়া হবে। তার সঙ্গে নিশ্চয়ই দেখা হবে, তার কাছ থেকে হয়তো কিছু অভিজ্ঞতাও সঞ্চয় করতে পারব। ‘
বিবিসি বাংলা অবলম্বনে