বেগুনে দিন ফিরেছে মমতাজ-ভানেছার

কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি

Barguna-1417240505বরগুনা : বেগুনে দিন ফিরেছে বরগুনার মমতাজ বেগম ও ভানেছা বেগমের। মমতাজ বেগম বরগুনা সদর উপজেলার সোনাতলা গ্রামের প্রান্তিক কৃষক কুদ্দুস ফরাজীর স্ত্রী। আর ভানেছা একই গ্রামের দিনমজুর নাসির উদ্দিনের স্ত্রী।

এই দুটি পরিবারই স্বামীর আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেত। স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ১৪ কাঠা জমিতে বেড তৈরি করে বেগুন চাষ শুরু করেন মমতাজ। এরপর শুরু হয় তার ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা। দিনরাত বেগুন খেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকেন তিনি। অবশেষে পরিশ্রমের ফল পেতে শুরু করেন। এ মৌসুমে তার বেগুন খেত থেকে প্রতি সপ্তাহে পাইকারি মূল্য প্রতি কেজি বেগুন ৩৫ টাকা দরে ২ থেকে ৩ মণ বেগুন বিক্রি করছেন।

মমতাজ বলেন, ‘স্বামীর একলার কামাইতে সংসার চালাইতে খুব কষ্ট অইত। তাই স্থানীয় একটি সংস্থা থেকে লোন লইয়া বেগুন চাষ শুরু করি। দিনরাইত কষ্ট করলে ভাইগ্যের যে পরিবর্তন অইতে পারে হ্যা জানতাম না। মোর দুইডা মাইয়া পোলা আছে। বড় মাইয়ারে বিয়া দিছি, ছোড ছেলেডার ল্যাহাপড়ার খরচা জোগাই এই উপার্জন দিয়া। এ্যাহোন মোগো সংসারে কোন অভাব নাই। বেগুন বেইচ্চা প্রতি মাসে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাহা আয় করি।’

শুধু মমতাজই নয়, তার সফলতা দেখে প্রতিবেশী ভানেছা বেগমও শুরু করেন বেগুন চাষ। তিনিও সফল হন তার প্রচেষ্টায়। ভানেছার স্বামী চট্টগ্রামে রাজমিস্ত্রির হেলপার হিসেবে কাজ করেন। স্বামীর পাঠানো টাকা জমিয়ে ১২ কাঠা জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন তার ভাগ্য পরিবর্তনের যুদ্ধ। দুই সন্তানের জননী ভানেছার এখন স্বামীর পাঠানো টাকার অপেক্ষায় থাকতে হয় না। প্রতি সপ্তাহে তার বাগান থেকে দেড় থেকে দুই মণ বেগুন বিক্রি করেন তিনি।
ভানেছা বলেন, ‘আমার ইচ্ছা আছে সরকারি কোনো সংস্থা থেকে আর্থিক সাহায্য পেলে জমি লিজ নিয়ে এর চেয়ে বড় একটি বাগান তৈরি করব। আমার গ্রামের অনেক মানুষ জমি থেকেই টাটকা বেগুন কিনে নিয়ে যান। খুব ভালো লাগে যখন কোনো ক্রেতা টাট্কা সবজি কিনতে পেরে খুশি হন। নিজের পরিশ্রমকে তখন সার্থক মনে হয়।’

মমতাজ ও ভানেছা জানান, বেগুন খেতে ইঁদুরের উৎপাত খুব। বেগুন একটু বড় হলেই পলিথিন দিয়ে প্রতিটি বেগুন বেঁধে দিতে হয়। এসব সমস্যায় এ পর্যন্ত কোনো প্রকার সহযোগিতা পাননি কৃষি বিভাগ থেকে। তিনি অভিযোগ করেন, কৃষি বিভাগের কোনো কর্মকর্তা এযাবৎ কোনো খোঁজখবর নেয়নি।

বরগুনা জেলা কৃষি অফিসের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম মাতুব্বর বলেন, ‘বেগুন খেতে ইঁদুরের উৎপাতের ব্যাপারে কেউ আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে আমাদের তরফ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতাম। যা হোক ঘটনাস্থলে ব্লক সুপারভাইজারকে পাঠিয়ে এর ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *