ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস তিনদিনের সফরে আগামীকাল ঢাকা আসছেন। সফরকালে তিনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে বিশাল প্রার্থনা সভায় যোগ দেবেন।
কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দল বিশেষ ব্যবস্থায় এই সভায় অংশ নেবে।
পোপের এই সফরের প্রতি আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও সম্প্রদায়ের নজর রয়েছে। স্থানীয় খ্রিষ্টানদের নিরাপত্তা বিবেচনায় মিয়ানমার সফরকালে পোপ রাখাইনে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর চালানো নৃশংসতার বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো কথা বলেননি। তবে সার্বিকভাবে মিয়ানমারের বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর দুর্ভোগের কথা তিনি বলেছেন।
পোপের সাথে ৭৮ সদস্যের একটি মিডিয়া টিম আসবে। এছাড়া আরো ১৫০ জন বিদেশী সাংবাদিক নিজ ব্যবস্থায় পোপের সফর কভার করার জন্য ঢাকা আসবেন। বাংলাদেশ সফরকালে পোপ রোহিঙ্গা ইস্যুতে কোনো কথা বলেন কি না – সেদিকে মিডিয়ার নজর থাকবে।
বাংলাদেশ সফরকালে পোপ ফ্রান্সিসকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ভিভিআইপি মর্যাদা ও নিরাপত্তা দেয়া হবে।
রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ কাল বিকেল তিনটায় পোপকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে স্বাগত জানাবেন।
বিমান বন্দর থেকে পোপ মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাবেন। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যাবেন। পরে রাষ্ট্রপতির সাথে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য বঙ্গভবন যাবেন। সেখানে আয়োজিত নৈশভোজে সরকারের ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও কূটনীতিকদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখবেন। ঢাকায় অবস্থানকালে পোপ বারিধারা কূটনৈতিক জোটে ভ্যাটিকানের রাষ্ট্রদূতের বাসায় থাকবেন।
শুক্রবার সকালে পোপ সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে প্রার্থনা সভায় যোগ দেবেন। বিভিন্ন ধর্ম বিশ্বাস ও সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে তিনি এ পবিত্র সভায় মিলিত হবেন। এতে ১৬ জন ডিকনকে ধর্মযাজক পদে অভিষিক্ত করা হবে। দুপুরে পোপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাত করবেন। এর পর তিনি কাকরাইলে ক্যাথেড্রেল পরির্দশন করবেন। পোপ বাংলাদেশের বিশপদের সাথে মিলিত হয়ে বক্তব্য রাখবেন।
সফরের শেষ দিন সকালে পোপ ব্যক্তিগতভাবে তেজগাঁওতে মাদার তেরেসা ভবনে যাবেন। এর পর তিনি রোসারি চার্চে খৃষ্ট ধর্মের অনুসারিদের সাথে মিলিত হবে এবং বক্তব্য রাখবেন। দুপুরে নটর ডেম কলেজে যুব সম্প্রদায়ের উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন।
বিকেলে পোপ ফ্রান্সিস রোমে উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যাবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বিমান বন্দরে তাকে বিদায় জানাবেন।
পোপের সফরের ওপর আলোকপাত করে গত সোমবার রাজধানীর কাকরাইলে আর্চবিশপ হাউসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রথম কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও জানান, বাংলাদেশ সফরে এসে সুযোগ হলে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দলের সাথে কথা বলবেন পোপ ফ্রান্সিস। রোহিঙ্গাদের কথা যাতে পোপের কাছে পৌঁছায় সেজন্য চেষ্টা করছে আর্চবিশপ হাউস। পোপ শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশে আসবেন। দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত, শরণার্থীদের পক্ষে কথা বলবেন পোপ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শান্তি, সম্প্রীতি ও পুনর্মিলনের বার্তা নিয়ে রাষ্ট্রীয় এবং পালকীয় সফরে পোপ ফ্রান্সিস বাংলাদেশে আসছেন। পোপের সফরটি হবে সর্বজনীন। তিনি কেবল ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের জন্য নয়, সব ধর্ম ও বিশ্বাসের মানুষের সাথে মিলিত হবেন। বাংলাদেশের তরফে তাকে সর্বোচ্চ সম্মান জানানো হবে।