এম আরমান খান জয়,গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পাটকেলবাড়ি এলাকায় রাতের আধারে চলছে রমরমা কোচিং বানিজ্য। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা প্রতিদিন সন্ধা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত এই কোচিং বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
বিভিন্ন কোচিংয়ে অধ্যায়নরত ছাত্র ছাত্রী সুত্রে ও সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাটকেলবাড়ি এলাকায় প্রায় শতাধিক কোচিং সেন্টারে তৈরী করে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়ানো হচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেনীর ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেনীর ছাত্র-ছাত্রীদের কে ওই কোচিং সেন্টার গুলিতে রাতে পড়ানো হয়। প্রতিটি ক্লাসের প্রায় ৪০/৫০ জন করে ছাত্র-ছাত্রীদের পৃথক পৃথক কোচিং করানো হয়।
সরেজমিন গিয়ে কয়েকজন ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে কথা হলে ৮ম শ্রেনীর, নবম ও ১০ম শ্রেনীর কয়েকজন ছাত্রী জানায়, আমরা প্রতি মাসে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা দিয়ে এই কোচিংয়ে প্রাইভেট পড়ি। তারা আরো জানায়, শুধু কোচিং নয় আমরা অনেকেই স্যারদের নিজস্ব হোষ্টেলে থাকা বাবদ মাসে ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা প্রদান করে থাকি। কোচিংয়ের পাশাপাশি সকল শিক্ষকরাই নিজস্ব বাড়িতে গড়ে তুলেছেন হোস্টেল বানিজ্য। আয় করছেন মোটা অংকের টাকা।
নাম প্রকাশে না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, আমরা আমাদের শ্রেনী শিক্ষকের কাছে কোচিং না করলে আমাদেরকে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়। যার কারনে আমরা এক প্রকার বাধ্য হয়েই কোচিং করি।
পাটকেলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য়, ৪র্থ, ৫ম শ্রেনীর কয়েকজন ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলে, আমরা প্রতিদিন সন্ধা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কোচিং সেন্টারে লেখাপড়া করি। আমাদের স্যারদের কোচিং সেন্টারে কোচিং না করলে আমাদেরকে পরীক্ষায় ফেল করানো হয়। যার কারনে আমরা এখানে কোচিং করি। তারা আরো জানায়, আমরা প্রতি মাসে ৬০০ থেকে ৮০০০ টাকা দিয়ে এই কোচিংয়ে প্রাইভেট পড়ি। তা ছাড়াও আমরা অনেকেই স্যারদের নিজস্ব হোষ্টেলে থাকি। সেখানে থাকা-খাওয়া বাবদ মাসে ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা প্রদান করে থাকি।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের কোচিং বানিজ্য বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রনালয় নীতিমালা বা আইন পাশ করলেও সরকারের কোন নীতিমালার তোয়াক্কা করেছে না অত্র এলাকার শিক্ষকেরা।
এ ব্যাপারে একটি কোচিং সেন্টারের মালিক ও পাটকেল বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আশিষ কুমার সিকদার বলেন, পাটকেল বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ রকম কোচিং বানিজ্য চলে আসছে এটা নতুন কিছু না। তিনি আরো বলেন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কোচিংয়ের বিষয়টি জানেন। আপনাদের যা খুশি লেখেন তাতে কিছুই হবে না। আমার এক ভাই সচিবালয়ে চাকরি করেন।
এ ব্যাপারে একটি কোচিং সেন্টারের মালিক ও পাটকেল বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক অমৃত লাল রায় বলেন, বিদ্যালয়ে ঠিকমত শিক্ষা দিতে পারি না যার কারনে ছাত্র-ছাত্রীদের কোচিং করাই এটা দোষের কিছু না। তিনি আরো বলেন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কোচিংয়ের বিষয়টি জানেন। তাদের মৌখিক অনুমতি নিয়েই আমরা কোচিং চালাচ্ছি। আপনাদের কিছু লেখার থাকলে লিখতে পারে তাতে আমাদের কিছুই হবে না।
এ ব্যাপারে পাটকেল বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলীপ কুমার বিশ্বাসের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা ২০১২ সালের শিক্ষা নীতিমালা বুঝিনা। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশনা অনুযায়ী কোচিং করাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, কোচিং করার কোন অনুমোদন নেই আবার নিষেধও নেই। তবে আমি অনুরোধ করবো নিউজটি না করার জন্য।
শিক্ষা নীতিমালা ২০১২ তে উল্লেখ্য আছে যে, সরকারী ও বেসরকারী বিদ্যালয় কলেজ ও মাদ্রাসার কোন শিক্ষক তার নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোচিং অথবা প্রাইভেট পড়াতে পারবে না। শিক্ষা মন্ত্রালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোচিং বানিজ্য বন্ধে নীতিমালা চালু করলেও ফলাফল দাড়িয়েছে তার ঠিক তার উল্টো। সরকারী নীতিমালার দোহাই দিয়ে যে কোচিং বা প্রাইভেট ঘর ভাড়া নিয়ে চলত তা এখন প্রকাশ্যে প্রতিষ্ঠানের শ্রেনী কক্ষেই অতিরিক্ত ক্লাসের নাম দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন বিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষক-শিক্ষিকা। এর ফলে দেখা যাচ্ছে শ্রেনী কক্ষে পাঠদানে শিক্ষকদের ইচ্ছাকৃত অমনোযোগ। শিক্ষাকে ব্যয়বহুল ও বানিজ্যকরণ রোধকল্পে সরকারী আইন জারী হলে প্রথম পর্যায়ে এই ব্যবসায়ীরা একটু হোঁচট খেলেও নতুন কৌশলে দীর্ঘ দিন যাবত মোটা অংকের অর্থ উপার্জনকারী এক শ্যেনীর শিক্ষক আইনের ফাঁক-ফোকর বের করে সরকারের জারি করা নীতিমালার তোয়াক্কা না করে চালিয়ে যাচ্ছে এই শিক্ষা বানিজ্য।
অবৈধ কোচিং বাণিজ্যে বন্ধের জন্য পাটকেলবাড়ি এলাকার মানুষ শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিব, জেল প্রশাসক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।