এম এ কাহার বকুল:লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় স্কুলে একদিন ড্রেস পড়ে না আসলে শিশু শিক্ষার্থী কোন বিস্কুট নেই। সেই স্কুলেই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এবারে উঠেছে সরকারি বিস্কুট বিক্রয় করার অভিযোগ। আর ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য সমাপনী পরীক্ষার বিদায় বা দোয়া অনুষ্ঠান না করায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন ঐ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। আর এ অভিযোগটি উঠেছে লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার কেতকীবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ্ জয়নুল আবেদিনের বিরুদ্ধে।
গতকাল সোমবার সকাল ১১টার সময় সরকারি বিস্কুট ক্রয় করে নিয়ে যাবার সময় ঐ স্কুল মাঠেই জাহেদুল ইসলাম নামের এক কাটুন ক্রেতাকে আটক করে ৩০ প্যাকেট সরকারি বিস্কুট উদ্ধার করে ঐ স্কুলের অভিভাবক সদস্য ও স্থানীয় জনতা। তবে ঐ প্রধান শিক্ষকের দাবি কাটুন ক্রেতার কাছে বিস্কুট বিক্রয় নয় তাকে খাবার জন্য ৩-৪ প্যাকেট বিস্কুট দেওয়া হয়েছিলো।
সরকারি বিস্কুট বাহিরে বিক্রয়, বিতরণ ও নিয়ে যাওয়া যেখানে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ সেখানে কিভাবে ৩০ প্যাকেট সরকারি বিস্কুট একজন কাটুন ক্রেতাকে প্রধান শিক্ষক দিলেন এ উত্তর কারও জানা নেই। আর এ ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন ঐ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যবৃন্দ।
এছাড়াও তারা বাহিরে সরকারি বিস্কুট বিক্রয়ের বিষয়ে ঐ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও বিদ্যালয় থেকে অপসারণের দাবী করেছেন স্থানীয় জনতা ও অভিভাবকবৃন্দ।
সরেজমিনে সোমবার দুপুর ১২ টায় উপজেলার কেতকীবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়ে দেখা যায়, একটি ব্যাগের মধ্যে কিছু সরকারি বিস্কুট রয়েছে। পরে সেগুলো মাঠে ঢেলে সেখানে ৩০ প্যাকেট বিস্কুট দেখা যায়। পরে সেই বিস্কুট গুলো নওদাবাস ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম পুলিশের আমজাদ হোসেন বাদশাহর মাধ্যমে জমা দেন উপস্থিত জনতা।
ঐ বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য ও পার্শ্ববর্তী কাপড়ের দোকানদার আলমগীর হোসেন জানান, সোমবার সকালে হাতীবান্ধার জাহেদুল ইসলাম নামের এক কাটুন ক্রেতা ঐ স্কুল থেকে বিস্কুট ক্রয় করে নিয়ে যাবার সময় স্থানীয় জনতাসহ তাকে আটক করি। তার কাছে থাকা একটি কাপড়ের ব্যাগের মধ্যে ৩০ প্যাকেট সরকারি বিস্কুট উদ্ধার করি। ঐ কার্টুন ক্রেতা বিভিন্ন স্কুল থেকে সরকারি বিস্কুট ক্রয় করে বাহিরে বিক্রয় করে থাকেন।
অপর এক অভিভাবক সদস্য মোনাব্বেরুল ইসলাম মোনা আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের বাচ্চাদের গায়ে একদিন স্কুল ড্রেস না থাকলে বিস্কুট দেন না। এভাবেই বাচ্চাদের খাবার বিস্কুট চুরি করে ঐ প্রধান শিক্ষক কার্টুন ক্রেতার নিকট তা বিক্রয় করে ঠিক করেনি। আমি ঐ প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদিনের বিচার চাই।
ভ্যানচালক জাহিদুল ইসলাম বলেন ঐ স্কুল থেকে বিস্কুট ক্রয় করার কথা অস্বীকার করে বলেন, স্কুল থেকেও প্রধান শিক্ষক আমাকে ৫টি বিস্কুটের প্যাকেট খাবার জন্য দিয়েছে। বাকি বিস্কুট গুলো অন্য স্কুল থেকে খাবার জন্য এনেছি।
কেতকীবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আকবর হোসেন গ্রামবাংলা নিউজকে বলেন, বাচ্চাদের বিস্কুট বিক্রয় করার কথা শুনেছি। বাহিরের কাউকেই কোন বিস্কুট দেওয়া বা বিক্রয় করার নিয়ম নাই। এটা প্রধান শিক্ষক কিভাবে করলেন। তা আমার জানা নেই। এবিষয়ে দ্রুত ম্যানেজিং কমিটির মিটিং ডেকে বিস্কুট বাহিরে বিক্রয় বা কাউকে দেওয়ার বিষয়ে প্রমাণিত হলে ঐ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়াও ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য সমাপনি পরীক্ষা আগে বিদায় বা দোয়া অনুষ্ঠান না করায় প্রধান শিক্ষকের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন ঐ সভাপতি।
কেতকীবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ্ জয়নুল আবেদিন কার্টুন ক্রেতার নিকট বিস্কুট বিক্রয়ের বিষটি অস্বীকার করলেও তাকে ৩-৪ প্যাকেট বিস্কুট খাবার জন্য দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। ড্রেস পড়ে না আসলে বাচ্চাদের কেন বিস্কুট দেওয়া হয় না বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দেননি।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আযাদ গ্রামবাংলা নিউজকে বলেন, স্কুলের বিস্কুট বাহিরের কাউ কেউ দেওয়া বা বিক্রয় করার নিয়ম নাই। বিষয়টি শুনেছি। তদন্তপুর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।