জাহিদুর রহমান তারিক,ঝিনাইদহঃ
ঝিনাইদহে ৩৭৫জন আর্টিশান নারীকে জেন্ডার সম্পর্ক উন্নয়ন ও সামাজিক ক্ষমতায়ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। নারীর জীবনে পরিবর্তন আনতে ভুমিকা পালন করছে ব্র্যাক জেন্ডার জাস্টিস এন্ড ডাইভারসিটি কর্মসূচি কর্তৃক আয়োজিত জেন্ডার সম্পর্ক উন্নয়ন ও সামাজিক প্রশিক্ষণ। এ প্রতিবেদকের কথা হয় এমনি এক জন নারীর সাথে। রেশমা (ছদ্মনাম) শৈলকুপা উপজেলার ভগবান নগর গ্রামে কাজ করে। ২ ছেলে ১মেয়ে এবং স্বামীকে নিয়ে সংসার। স্বামী আল-আমীন ( ছদ্মনাম) মিস্ত্রির যোগালের কাজ করে। যা আয় হয় তা দিয়ে অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে কোন রকমে সংসার চলে। ফলে নানা কারনে-অকারনে রেশমা শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হতো। স্বামীর কাছ থেকে কখনও স্ত্রীর মর্যাদা পাননি। পরিবারে তার মতামত প্রদানের কোন সুযোগ ছিল না। সকল ক্ষেত্রে স্বামী যা ভাল মনে করত তাই সিদ্ধান্ত নিত। রেশমা দীর্ঘদিন আগে সংসারে সুখ-শান্তি ফিরিয়ে আনতে আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশনের সাব সেন্টারের সেলাইয়ের শুরু করে। কাজ করে ভালই আয় করে রেশমা তারপরও স্বামী তাকে নানাভাবে নির্যাতন করত। ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে লাভলী বেগম সব নির্যাতন মুখ বুজে সহ্য করে। ব্র্যাক জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি প্রোগ্রাম আর্টিসানদের নিয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করে। রেশমাও সেই প্রশিক্ষণ পায়। প্রশিক্ষণে নির্যাতন, নারী ও শিশু নির্যাতন, মতামত প্রদানের অধিকার, বাল্য বিবাহ ও নির্যাতনের ফলে পরিবার ও সন্তানের উপর যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতো। রেশমা যেন তার জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনার মিল খুজে পেতেন । রেশমা তার সমস্ত কথা প্রশিক্ষক ও সহকর্মীদের সাথে খুলে বলে। সবাই মিলে যখন রেশমার স্বামীকে নির্যাতনের ও স্ত্রীর মর্যাদার বিষয়গুলো বোঝায় তখন স্বামী আল-আমীন তার ভুল বুঝতে পারে এবং ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আর নির্যাতন করবে না বলে প্রতিজ্ঞা করে। স¦ামী এখন স্ত্রী সন্তানদের সাথে ভাল ব্যবহার করে ও স্ত্রীর মতমতাকে গুরুত্ব দেয়। এখন অভাব অনটনের মধ্যে যেন তাদের পরিবারে সুখের কমতি নেই। ব্র্যাক জেন্ডার জাস্টিস এন্ড ডাইভারসিটি কর্মসূচি কর্তৃক ঝিনাইদহে নভেম্বর/২০১৭ পর্যন্ত ১টি আয়েশা আবেদ সেন্ট র ও ১০টি সাব সেন্টারে ১২মাসে ১৫ব্যাচে ৩৭৫জন আর্টিশানকে জেন্ডার সম্পর্ক উন্নয়ন ও সামাজিক ক্ষমতায়ন প্রশিক্ষণ প্রদান করে অর্থাৎ প্রতি প্রশিক্ষনার্থী বারো বার করে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। প্রশিক্ষণটি প্রশিক্ষনার্থীদের মনোবল বৃদ্ধিতে ভুমিকা রাখছে। জেলা ব্র্যাক প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান,স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে জেন্ডার সম্পর্ক উন্নয়ন ও সামাজিক ক্ষমতায়ন, শারিরিক নির্যাতন, নারী ও শিশু নির্যাতন, নারীর মতামত প্রদানের অধিকার, বাল্য বিবাহ,বহুবিবাহ ও নির্যাতনের প্রতিকার বিষয়ে প্রশিক্ষন দেওয়া হয়। ফলে পরিবার ও সন্তানের উপর বিরুপ প্রভাব থেকে বাচার জন্য এ প্রশিক্ষন। ব্র্যাক জেন্ডার জাস্টিস এন্ড ডাইভারসিটি কর্মসূচি এ প্রশিক্ষন দিচ্ছে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডাক্তার জাহিদ আহমেদ জানান,পারিবারিক সমস্য সমাজের উপরও প্রভাব পড়তে পারে।তাই ব্র্যাক যে আর্টিশান নারীকে জেন্ডার সম্পর্ক উন্নয়ন ও সামাজিক ক্ষমতায়ন প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন সেটা খুবই ভাল কাজ।সে ব্যাক্তিগত ভাবে লাভবান হবে,তার যদি মেয়ে সন্তান থাকে তাকে বুঝাতে সক্ষম হবে। নারী উন্নয়নে দেশ এক ধাপ এগিয়ে যাবে।