এম আরমান খান জয়,গোপালগঞ্জ ::
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় একটি পরিবারকে মিথ্যা মামলা, হত্যার হুমকিসহ বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তুচ্ছ ঘটনার বিষয়কে কেন্দ্র করে ক্ষমতার দাপটে কিছু সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক হয়রানি সহ মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রামে আধিপত্য বিস্তার করছে বলে অভিযোগ করেন পরিবারটি। শুধু ওই পরিবারটি নয় ওই চক্রের কবলে পড়েছে গ্রামের অসংখ্য সাধারন মানুষ।
অভিযোগে জানা গেছে, সম্প্রতি কোটালীপাড়া উপজেলার সোনাখালী গ্রামের জমির দালাল ওসমান তালুকদার একই গ্রামের জাহিদ গাজীর একটি জমি গোপালগঞ্জ শহরের মোঃ মিজান কাজীর কাছে বিক্রি করে। ওই জমির পাশের জমির মালিক কালাম গাজীর ছেলে সুজাত গাজী (২৬) ও আয়নাল তালুকদারের ছেলে ওসমান তালুকদার (২৮) গত ১১ নভেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় কোটালীপাড়া-তারাইল সড়কের সোনাখালী গাজীবাড়ী মার্কেটের ইলিয়াস গাজীর চায়ের দোকানে বসে গল্প করছিল। এ সময় সুজাত ওসমানকে বলে তোমরা কি ভাবে জমির দলিল করে দিয়েছ ? পাশেই আমাদের জমি। উত্তরে ওসমান রাগান্বিত হয়ে বলে, তা কি তোকে বলতে হবে। জানতে হলে গোপালগঞ্জে (শহরে) আসিস চাচাকে (মিজান) দিয়ে বুঝিয়ে দেব। এক পর্যায়ে সুজাত ওসমানকে ধাক্কা দেয়। এ সময় দোকানে বসে থাকা লোকজন তাদের সমঝোতা করে দেয়।
সামান্য একটা ধাক্কার প্রতিশোধ নিতে গাজী বংশের জাহিদ গাজী তালুকদার বংশের সাথে একত্ততা ঘোষণা করে পরদিন ১২ নভেম্বর রবিবার সকালে গোপালগঞ্জ শহরের মোঃ মিজান কাজীর সহায়তায় ওসমানের মাথা ব্লেড দিয়ে কেটে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে ১৪ নভেম্বর ওসমানের মা আমিরোন বেগম বাদী হয়ে কালাম গাজী (৫০) ও তার দুই ছেলে সুজাত গাজী (২৬) এবং রোমান গাজী (১৮) কে আসামী করে গোপালগঞ্জের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করে। মামলা নং-সি আর ৪০৪/১৭।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ১২ নভেম্বর রবিবার সকাল ৬ টায় বর্নি বিলে কালাম, সুজাত ও রোমান নৌকায় ওৎ পেতে থেকে দালাল ওসমানকে হাতুড়ি, লোহার রড, লাঠি ও রামদা দিয়ে মারাত্বক ভাবে জখম করে ও তার সাথে থাকা ২০ হাজার টাকা, নকিয়া মোবাইল ফোন ও ১ ভারি ওজনের স্বর্নের চেইন নিয়ে যায়। পরে আশ পাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে।
ওই গ্রামে সরোজমিনে গেলে গ্রামবাসী জানান, মামলা সম্পর্কে আমরা শুনেছি। শনিবারের ঘটনার সময় আমরা অনেকেই উপস্থিত ছিলাম শুধু ২-৩ বার ধাক্কা ধাক্কি ঘটনা ছাড়া সুজাত ও ওসমানের সাথে আর কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এটা গাজী বংশকে ছোট করা ও কালাম গাজীর পরিবারকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যেই এই মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। সর্বপরি রবিবার সকালে এত বড় ঘটনা ঘটলে আমরা জানতে পারতাম। ওসমানকে তাহলে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য গ্রাম্য ডাক্তার বা কোন উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি না করে সদরে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যই প্রমান করে এটা সম্পূর্ণ সাজানো ঘটনা।
স্থানীয় দোকানদার ইলিয়াস গাজী জানান, গত শনিবার সন্ধ্যায় আমার দোকানের সামনে সুজাত ও ওসমানের শুধু কথাকাটি হয়েছে। যা মুরব্বিগণ সাথে সাথে সমাধান করে দেয়। তবে কোন প্রকার মারামারি ঘটনা ঘটেনি।
ওসমানের আপন বড় চাচা খোকা তালুকদার বলেন, সুজাত ও ওসমানের মধ্যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। মামলায় যা যা লেখা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
ওসমানের চাচতো ভাই শহিদ তালুকদার জানান, মামলায় যা যা লেখা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। মোঃ মিজান কাজী ও জাহিদ গাজীর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে কালাম গাজীর পরিবার।
সাবেক ইউপি সদস্য কালাম গাজী বলেন, মামলায় উল্লেখিত তথ্য সম্পূর্ণ বানোয়াট। আমার ও আমার পরিবারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই এমন জঘন্য মিথ্যা কথা দিয়ে হয়রানি মূলক মামলা করা হয়েছে। সাবেক ইউপি সদস্য হিসাবে আমার এলাকায় যথেষ্ট সুনাম আছে। তা নষ্ট করার জন্যই এমন ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। এখনো আমাকে হত্যাসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদান করা হচ্ছে।
তবে বক্তব্য নেওয়ার জন্য জাহিদ গাজীকে গ্রামে ও মিজান কাজীকে তার শহরের বাড়ীতে গিয়ে পাওয়া যায়নি।
জমির দালাল ওসমানের ফোন আলাপের রেকর্ড অনুযায়ী জানা যায়, ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ৩২৬ ধারার হাসপাতালের সার্টিফিকেট নিচ্ছি। এবার একটাকেও ছাড়বোনা দরকার হলে জমি বিক্রির ১০ লক্ষ টাকা সব খরচ করবো। সরাসরি তদন্ত ছাড়া টাকা দিয়ে ওয়ারেন্ট বের করে ওদের হাজতে নেব। জাহিদ গাজী ও কথিত চাচা (মিজান) আমার সাথে আছে।
পিঞ্জুরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আবু সাঈদ জানান, মারামারির কোন ঘটনাই ঘটেনি। আমার তথ্য মতে ওসমান ওরা টাকার বিনিময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ৩২৬ এর সার্টিফিকেট বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে। কালাম গাজী ৪০ বছরের ও বেশি সময় যাবত বিক্রিত জমির পাশের নিজের প্লটে চাষাবাদ করে আসছে। আমি স্থানীয় ভাবে বিষয়টির মিমাংসার চেষ্টা করেছি কিন্তু গতকাল সোমবার আবার হাঁসকে কেন্দ্র করে তালুকদাররা নতুন বাহানা করার কারনে ব্যাপারটি সমাধান করতে পারিনি। তবে তিনি অনুরোধ করে বলেন, আপনারা সত্য ঘটনাটি তুলে ধরেন। আমি সত্যের পক্ষেই আছি।
এ ব্যাপারে কোটালীপাড়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোঃ ওমর ফারুক ছুটিতে থাকায় ওসি তদন্ত মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ঘটনাটি আমি শুনেছি তবে এ ব্যাপারে কোর্ট থেকে এখনো কোন নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা আসলে আমরা অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।