আলোচনার শুরুতে সঞ্চালক জানতে চান, ‘যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই এখন বাংলাদেশে আছেন। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন। আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি, তিনি বাংলাদেশে আবার একটি অর্থবহ নির্বাচনের বিষয়ে কথা বলেছেন। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে কি না?’
জবাবে মোহাম্মদ জমির বলেন, ‘নির্বাচন আদৌ প্রয়োজন আছে কি না তা জনগণই ভালো বলতে পারবে। তবে আমার কাছে মনে হচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে জনগণের কোনো ভাবনা নেই। যত ভাবনা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর, যারা গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের ট্রেন ফেল করেছে। সম্প্রতি আমেরিকান একজন নাগরিক আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তোমাদের দেশে কি উন্নয়ন হয়েছে? জবাবে আমি বলেছি, তুমি একটু দাঁড়াও। তারপর তাকে বললাম, তুমি দেখো যারা এখন রাস্তায় হাঁটছে তাদের সবার কাছে মোবাইল, কেউ কথা বলছে, কেউ হাতে নিয়ে ঘুরছে। তাহলে কি দাঁড়াল, জনগণের ইনকাম বেড়েছে বলেই সবাই মোবাইল ব্যবহার করতে পারছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, দেশে আবার কখন নির্বাচন হবে কি হবে না, সেটা সাধারণ জনগণের দেখার বিষয় নয়। সাধারণ মানুষ চায় দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি। তিনি বলেন, ‘আমেরিকার সরকারের একজন প্রতিনিধি এখন আমাদের দেশে সফরে রয়েছেন। তিনি নাকি আগামী নির্বাচন নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলতে চান। আমরা বলতে চাই, নির্বাচন একটি সাংবিধানিক বিষয়। নির্বাচন নিয়ে সংবিধানে যেভাবে বলা আছে, সরকার সেভাবেই এগোবে। এখানে অন্য দেশের প্রতিনিধিদের আগ বাড়িয়ে জানতে চাওয়ার কিছু নেই।’
আলোচনার এ পর্যায়ে সঞ্চালক জানতে চান, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের বিষয় ভারতের নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেন বিভিন্ন লেখা লিখে যাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের দেশের অর্থনীতিবিদরা সেভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে কোনো আলোচনা করছেন না কেন?’
জবাবে অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ‘বাংলাদেশের যে উন্নয়ন হচ্ছে সেটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের দেশের অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টচার্যসহ সবাই এটা স্বীকার করবেন। তবে আমাদের বক্তব্য হলো, শুধু উন্নয়ন দিয়েই হবে না। উন্নয়নের পাশাপাশি সুশাসনও থাকতে হবে। অবশ্য উন্নয়নের বিষয়টি কারো কারো কাছে দৃষ্টিভঙ্গিরও বিষয়।’
আলোচনার এ পর্যায়ে জগ্লুল আহ্মেদ বলেন, ‘দেশ এগিয়ে যাচ্ছে বলতে গেলে দেশে সুশাসন আছে কি না সেটাও দেখতে হবে। উন্নয়নের পাশাপাশি দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা থাকতে হবে। গণতন্ত্রকে বাদ দিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যায় না। একজন বিদেশি দেশে এলে আমাদের মিডিয়াগুলো হুমড়ি খেয়ে পড়ে, এটা ঠিক। তবে সেই বিদেশিরা কী বলতে চাচ্ছেন সেটাও জনগণ জানতে চায়। আর জনগণকে সার্বিক বিষয়ে জানানোটাই মিডিয়ার কাজ।
গণতন্ত্র রেখে সুশাসন হয় না
মুনতাসীর মামুন: বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেছেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের ও অগ্রযাত্রায় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো হতাশাগ্রস্ত হলেও আমি আশাবাদী। এখন না হোক, একসময় বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে। কথায় কথায় শুধু সরকারের দোষ দেখলেই হবে না। সরকারের বিশাল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও দেখতে হবে।’ গত শুক্রবার রাতে বেসকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে পর্যালোচনাভিত্তিক টক শো নিউজ আওয়ার এক্সট্রা অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। সাংবাদিক প্রণব সাহা অপুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো আলোচনা করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির, দ্য ফিনানশিয়াল এক্সপ্রেস পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদক জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরী ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ।