রাখাইন থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিজেদের বাসভূমিতে ফেরানোর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে গতকাল মিয়ানমারের রাজধানী
নেপিডোতে দুই দেশের মধ্যে দিনভর আলোচনা হয়েছে। দিনের শুরুতে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক মিয়ানমারের পররাষ্ট্রসচিব মিউন্ট থুর সঙ্গে আলোচনায় বসেন। সকাল ১০টায় শুরু হয়ে ওই আলোচনা তিন ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয়। এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর সঙ্গে টিন্ট সোয়ের একান্তে দীর্ঘ সময় আলোচনা হয়েছে। পরে তাঁরা দুদেশের কর্মকর্তাদের নিয়ে আরেক দফা বৈঠক করেন।
মাহমুদ আলী বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে বলেন, ‘আমাদের আলোচনা ভালো হয়েছে। আগামীকাল একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের আশা করছি।’
রাখাইনে ২৫ আগস্ট তল্লাশিচৌকিতে সন্ত্রাসী হামলার জেরে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনীর নৃশংসতা শুরুর পর থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ৬ লাখ ২২ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
ইয়াঙ্গুন থেকে বাংলাদেশের কূটনীতিকেরা গতকাল সন্ধ্যায় জানিয়েছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী আজ বৃহস্পতিবার সকালে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠক করবেন। ওই আলোচনার পর রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সমঝোতা স্মারকটি সইয়ের কথা রয়েছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশের খসড়া প্রস্তাব নিয়ে গতকাল দুই পক্ষ দীর্ঘ আলোচনা করেছে। বিশেষ করে সমঝোতা স্মারকটির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো চূড়ান্ত না হওয়ায় এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে ২০১৬ সালের অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নাকি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১০ লাখের সবাইকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে, ফেরত পাঠানোর আগে রোহিঙ্গাদের পরিচয় যাচাইয়ে জাতিসংঘকে রাখা না রাখা, রাখাইনে ফেরত পাঠানোর পর রোহিঙ্গাদের কোথায় রাখা হবে। এসবের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে সময়সূচি ঠিক করে দিয়ে কাজ করা এবং এ বিষয়ে দুই দেশ সমঝোতা স্মারক সই করলে প্রত্যাবাসন নিয়ে কোনো ধরনের জটিলতা দেখা দিলে তা নিয়ে তৃতীয় কোনো দেশের সহযোগিতা চাওয়া যাবে কি যাবে না ইত্যাদি আলোচনায় এসেছে।
সমঝোতা স্মারকের এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে গতকাল সন্ধ্যায় মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এ মুহূর্তে এ নিয়ে কিছু বলা যাবে না। তবে বৃহস্পতিবার (আজ) আমরা একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর আশা করছি।’
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে আজ সমঝোতা সইয়ের ব্যাপারে বাংলাদেশ আশাবাদের কথা শোনাচ্ছে। তবে এটির মূল বিষয়গুলো নিয়ে দুই দেশ একমত হতে পেরেছে কি না, তা বাংলাদেশের কর্মকর্তারা এড়িয়ে যাচ্ছেন। অতীতের অভিজ্ঞতায় মিয়ানমারের সঙ্গে তাড়াহুড়া করে কোনো প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার ঝুঁকি থেকে যায়। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর এবারের নৃশংসতা নিয়ে আন্তর্জাতিক জনমত জোরদার হতে থাকায় প্রত্যাবাসনে যেনতেনভাবে একটি চুক্তি করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে মিয়ানমার। এমন পরিস্থিতিতে সবকিছু ঠিকঠাক না করে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি হলে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকবে।