যুগে যুগে মানবসভ্যতার এক মারাত্মক হুমকি হয়ে বিরাজ করছে ক্যান্সার। চিকিৎসাবিজ্ঞান এর নিরাময়ে নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিনিয়ত গোটা বিশ্বে অসংখ্য মানুষ ক্যান্সারের কাছে হার মানছেন। প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার ধরা পড়ার পর যথাযথ চিকিৎসায় এটাকে আটকানো হয়তো সম্ভব হয়ে ওঠে। কিছু ওষুধ-পথ্য আর কেমোথেরাপিই শেষ ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এই দুঃস্বপ্ন একবার দেহে বাসা বাঁধলে মৃত্যু যেন অবধারিত। একে সহজে নিরাময়ের কোনো পথ এখনও মানুষ খুঁজে পায়নি। আসলেই কী তাই?
এ প্রশ্নটা উঠতেই পারে যদি সার্জেন্ট রিক শিফের বক্তব্যটা মনোযোগ দিয়ে শোনেন। বিজ্ঞান কত এগিয়েছে! চিকিৎসাবিজ্ঞান কত বড় বড় রোগ নিমূল করেছে। কিন্তু ক্যান্সারের সঙ্গে কেন আজও পেরে উঠছে না?
গত বছর সান ফ্রান্সিসকো পুলিশ ডিপার্টমেন্টের এই কর্মকর্তার বক্তব্য রীতিমতো বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। যেন হাঁটা হাড়ি ভেঙেছেন তিনি।
পেছনে আছে তার জীবনের এক করুণ অধ্যায়। তার বক্তব্যটা তার ভাষাতেই এখানে তুলে ধরা হলো।
‘আমার নাম সার্জেন্ট রিক শিফ। সান ফ্রান্সিসকো পুলিশ ডিপার্টমেন্টে ১১ বছর ধরে দায়িত্বের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। সাহসিকতার জন্যে এ বিভাগের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘মেটাল অব অনার’ অর্জন করেছি। তবে আমার কাছে এর (সম্মাননা) মূল্য এখনকার চেয়ে আগে অনেক বেশি ছিল। আমি আজ আমার ৭ বছর বয়সী মেয়ে আর তার জমজ বোনের কথা বলবো। ওর বোন ক্রিস্টিন আজ মারা গেছে। তার বয়স যখন ৪, তখন মস্তিষ্কে এক মারাত্মক টিউমার ধরা পড়ে। এটা তার মেরুদণ্ড আর মস্তিষ্কে ছড়িয়ে যায়। চিকিৎসকরা আমাদের দুটো পথ দেখান। এক- ওকে বাড়িতে নিয়ে যেতে হবে এবং মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকতে হবে। দুই- তার দেহে উচ্চমাত্রার কেমো ও তেজষ্ক্রিয় রশ্মি প্রয়োগ করতে হবে। দুটো ক্ষেত্রেই ফলাফল একটিই- মৃত্যু। তারা এই দুই নিশ্চিত নিশ্চিত পথের সন্ধান দিয়েছিলেন এবং খুব দ্রুত।
কিন্তু বেঁচে যাওয়ার ক্ষীণ আশা দিয়ে তাকে প্রচলিত মানসম্পন্ন চিকিৎসাই দেওয়ার সিদ্ধান্তই নেওয়া হলো। আমরা তাকে কেমো আর তেজষ্ক্রিয় রশ্মির চিকিৎসা দিলাম। তার কচি করোটি মারাত্মকভাবে পুড়ে গেলো, রীতিমতো সেকেন্ড ডিগ্রি বার্ন বলা হয় যাকে। পড়ে যাওয়া চুল আর কখনই ফিরে আসেনি। তার ডায়পার বদলাতে আমাদের রাবারের গ্লাভস পরতে হতো। কারণ, প্রশ্রাব এতটাই বিষাক্ত হয়ে গেছিল যে তা ত্বক পুড়িয়ে দিতো।
মাস ছয়েক পর অবিশ্বাস্যভাবে সে বেঁচে রইলো। যদিও আমরা সবাই ধরে নিয়েছিলাম সে বাঁচবে না। আমরা কেবল মনে মনে বলছিলাম, মাফ করে দাও, আমরা যথাসাধ্য সব করেছি। সে সম্ভবত মাস দুয়েকের মধ্যে মৃত্যুবরণ করবে। অবশ্য আমি আর আমার স্ত্রী এই মৃত্যুটাকে মেনে নিতে পারছিলাম না। আমি এ বিষয়ে কিছু পড়াশোনা শুরু করলাম। একটি বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ে পেলাম ড. বার্জিনস্কির আলোচনা।
আমার কথায় আপনারা ভাবতে পারেন যে, আমি প্রতারক হিসেবে বেশ দক্ষ। এই কক্ষে (যেখানে বক্তব্য দিচ্ছেন) অনেক অ্যাটর্নি রয়েছেন যারা আমাকে প্রতারক হিসেবে গণ্য করবেন। কিন্তু আমি গভীরভাবে অনুসন্ধান করেছি। আমি নিশ্চিত যে ওই মানুষটি ( ড. বার্জিনস্কি) প্রতারক নন। আমার মনে কোনো সন্দেহ নেই যে তার ওষুধ কাজ করে। এখন এটা কাজ করে কী করে না, তা বুঝতে আপনাদের বিচারকের আসনে বসতে হবে। তবে ওষুধটা বিষাক্ত নয়, তার যথাযথ প্রমাণ পেয়েছে এফডিএ।
১৮ মাস পর আমরা মেয়েটাকে নিয়ে বাড়ি ফিরি। সে মারা যায়নি। তার মাথায় টিউমারের কোনো নিশানাই ছিল না। এই সময়টা ক্যান্সারমুক্ত ছিল সে। কিন্তু পরের একমাসের মধ্যে ক্যান্সার আবারও মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়লো। আবারও তাকে বার্জিনস্কির কাছে নিয়ে গেলাম। আবারও চিকিৎসা, ৯ সপ্তাহের মধ্যে তার ক্যান্সার পুরোপুরি চলে গেলো। কিন্তু নিউরোলজিক্যাল নেকরোসিসের কারণে মেয়েটি মারা গেলো জুলাইয়ে (২০১৬)। তেজষ্ক্রিয় রশ্মির প্রভাবে তার মস্তিষ্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। ময়নাতদন্তে পরিষ্কার দেখা গেছে, ক্রিস্টি যখন মারা যায় তখন তার দেহে কোনো ক্যান্সার ছিল না। ক্যান্সারের কারণে কারো মৃত্যু ঘটলে, তার দেহটা ক্যান্সারমুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় না। কেবল ক্রিস্টিরই এমনটা ঘটেছিল।
কাজেই সে মারাত্মক রোগের আক্রান্ত হয়ে মারা যায়নি। সুষ্ঠু চিকিৎসা প্রদানে আমাদের অক্ষমতা থেকে সে মারা যায়। সে চলে গেছে চিকিৎসাব্যবস্থার বাজে পরামর্শ থেকে। সে মারা গেছে সরকারের ভুল তথ্য ছড়িয়ে রাখার কারণে। সরকারের এই আচরণ মানুষের ভালোর জন্যে নয়’।
সার্জেন্ট রিক শিফের এই বক্তব্য এক বিস্ফোরণ ঘটায়। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, ক্যান্সার নিরাময়ের চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু সরকার সে তথ্য লুকিয়ে রেখেছে। তার এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে আলোচনার ঝড় বয়ে গেছে। উঠে এসেছে একটি বিষয়- বাণিজ্য। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য চলে ক্যান্সারকে কেন্দ্র করে। এর প্রচলিত চিকিৎসাব্যবস্থা বলতে যা বোঝায়, তার পেছনে মানুষ বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে। বিশ্বজুড়ে কেমোথেরাপির বাজার যেন পয়সাখোর এক দানব। ক্যান্সার নিরাময়ের ওষুধ বাজারে চলে এলে বিলিয়ন ডলারের বাজার ধ্বংস হবে। এ কারণেই চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে কাজ করা বড় বড় প্রতিষ্ঠান চায় না তাদের ব্যবসা ধসে পড়ুক। তাদের চাপে বা অর্থের লেনদেনে সরকারও চায় না ক্যান্সার পুরোপুরি বিদায় নিক।
যদিও অনেকে রিক শিফের এ বক্তব্য অনেকেই বিশ্বাস বা সমর্থন করেন না। তবুও বাণিজ্যের দুনিয়ায় সন্দেহটা ঠিকই দানা বেঁধেছে অনেকের মনে, এভাবেই কী জিইয়ে রাখা হয়েছে মানবসভ্যতার এই ভয়ংকর দুঃস্বপ্নকে?
সুত্রঃ ফেসবুক