বিশ্বে সবচেয়ে অহংকারী ফার্স্ট লেডির পতন

Slider সারাবিশ্ব

a1afb333ff68a3598bb615a4f8b023d8-5a100952e0cdd

ঢাকা: দুনিয়ার সব চাওয়া গড়াগড়ি খেত তাঁর পায়ের কাছে। কেনাকাটায় যাবেন, উড়োজাহাজ খাড়া। বিলাসবহুল ও আয়েশি জীবন নিয়ে বিশ্বে সমালোচনার ঝড় উঠলেও পরোয়া ছিল না মোটেও। কিন্তু আজ তাঁর সেই দাপট আর প্রভাব কোথায়?

জিম্বাবুয়ের ফার্স্ট লেডি গ্রেস মুগাবের কথাই বলা হচ্ছে। পয়সাকড়ি ছিল গ্রেসের হাতের ময়লা। বিলাসবহুল হোটেল ছাড়া তাঁর চলত না। জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের স্ত্রী হওয়ার সুবাদে সব ক্ষমতা নিজের হাতের মুঠোয় চলে এসেছিল। গত বুধবারের ‘সেনা অভ্যুত্থানের’ পর প্রেসিডেন্ট মুগাবে হারারেতে গৃহবন্দী। ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন অনিশ্চয়তায় গ্রেস মুগাবে। কেন এমন পরিণতি? ক্ষমতার মোহ আর লোভই কি কাল হলো তাঁর?

গ্রেস মুগাবের জীবনের এই দুঃখময় অধ্যায়ের সঙ্গে মিল রয়েছে আরেক ফার্স্ট লেডি ইসাবেল প্যারনের। তিনি আর্জেন্টিনার আরেক ক্ষমতাবান নেতা উয়ান প্যারনের স্ত্রী। ইসাবেলের চেয়ে বয়সে ৩৫ বছরের বড়। প্যারনের দ্বিতীয় স্ত্রী ইভা বা ইভিতার প্রভাব ছিল যথেষ্ট। তবে তাঁকে টপকে ইসাবেল ভাইস প্রেসিডেন্ট হন প্যারনের। স্বামীর মৃত্যুর পর দুই বছর ধরে দেশের শাসনভার ছিল তাঁর করতলে। পরে অবশ্য ইসাবেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। সেনাবাহিনী তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ইসাবেলকেও গৃহবন্দী করা হয়। একপর্যায়ে তাঁকে নির্বাসনে পাঠানো হয়।

জিম্বাবুয়ের নিয়ন্ত্রণ এরই মধ্যে সেনাবাহিনী নিয়েছে। ‘হোয়াট হ্যাপেনস আফটার মুগাবে’ বইয়ে লেখক জিওফ হিল বলছেন, গ্রেস মুগাবের ভাগ্যেও ইসাবেলের পরিণতি হতে পারে।

১৯৯২ সালে মুগাবের প্রথম স্ত্রী স্যালি মুগাবে কিডনির রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। জিম্বাবুয়ের শ্বেতাঙ্গ নীতি নিয়ে মুগাবের বিরোধিতা করেছিলেন স্যালি। সে কারণে তাঁকে ছয় সপ্তাহ বন্দীও থাকতে হয়।

স্যালি যখন কিডনির ক্যানসারে আক্রান্ত, তখনই মুগাবের সঙ্গে প্রেম গ্রেসের। বিভিন্ন ঘটনায় প্রমাণ হয়েছে, গ্রেসের লক্ষ্য জিম্বাবুয়ের ক্ষমতায় যাওয়া। এ পথে গ্রেসের প্রধান বাধা ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগওয়া। তাঁকে বরখাস্ত ও ক্ষমতাসীন দল জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন-প্যাট্রিওটিক ফ্রন্ট (জেডএএনইউ-পিএফ) থেকে বহিষ্কারের জেরে সেনাবাহিনী ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেয়। বরখাস্তকৃত নানগাগওয়া এভাবেই গ্রেসের ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করে দিয়েছেন।

জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন-প্যাট্রিওটিক ফ্রন্ট (জেডএএনইউ-পিএফ) দলের এক সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন গ্রেস মুগাবে। ছবি: রয়টার্স

ওয়াশিংটন পোস্টে আমহার্স্ট কলেজের পোস্টডক্টরাল ফেলোশিপো ডেনডার বলছেন, গ্রেস মুগাবে যে আরও ক্ষমতা চেয়েছিলেন, এটা খুবই স্পষ্ট। গত মাসে জেডএএনইউ-পিএফ দলের সংবিধান সংশোধন করে দুজন ভাইস প্রেসিডেন্টের মধ্যে একজন নারীকে রাখার প্রস্তাব দেন গ্রেস মুগাবে। কতটা তীব্রভাবে গ্রেস জিম্বাবুয়ের ক্ষমতায় বসতে চেয়েছিলেন, তার প্রমাণ দিয়ে ডেনডের বলেন, ৫ নভেম্বর এক সমাবেশে গ্রেস বলেছিলেন, তিনি স্বামীর কাছ থেকে ক্ষমতা নিতে প্রস্তুত। মুগাবেকে তিনি বলেছেন, এই দায়িত্ব দিলে তিনি খুব ভালোভাবে পালন করতে পারবেন।

ডেনডার বলেন, ফার্স্ট লেডি গ্রেস কয়েক হাজার নারী সমর্থককে নিজের দিকে টানতে পেরেছিলেন। নারীরা তাঁকে যথেষ্ট সাহসী ও কঠোর পরিশ্রমী ভাবতেন।

২০০৮ সালে গ্রেসের উচ্চাশা আরও স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। এর ব্যাখ্যা দিয়ে ডেনডার বলছেন, গ্রেস সব সময় নকশাদার পোশাক ও জুতা পরতে পছন্দ করেন। নির্বাচনী প্রতিযোগিতা চলার সময় তিনি সেনাবাহিনীর আদলে ও জেডএএনইউ-পিএফ দলের ছাপ বহন করা পোশাক বানান। মন্ত্রিসভায় যেতে দলের তরুণ ও নারীদের নিয়ে তিনি প্রচার চালান। ক্ষমতায় যাওয়ার পথে প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে—এমন ব্যক্তি, যেমন: ভাইস প্রেসিডেন্ট জয়েশি মুজুরু ও সরকারের সাত মন্ত্রীকেও সরিয়ে দেন।

তবে যতই চেষ্টা করুন না কেন, জিম্বাবুয়ের জনগণ গ্রেসকে সহজে গ্রহণ করতে পারেনি। বিলাসবহুল জীবনযাপন, প্রথম স্ত্রী ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সময় মুগাবের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়াসহ বিভিন্ন কারণে সমালোচিত হয়েছেন গ্রেস। মুগাবের পরিবারের কোনো সদস্যই জিম্বাবুয়েবাসীর কাছে জনপ্রিয় হতে পারেনি। তাঁর দুই সন্তানের বিলাসবহুল জীবনযাপনও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *