রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হল থেকে বের হয়ে বিভাগে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে এক ছাত্রী অপহূত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা হলের সামনে থেকে তাঁকে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী এবং তাপসী রাবেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। বাড়ি নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায়। এ ঘটনায় ছাত্রীর ‘সাবেক স্বামী’ সোহেল রানার বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠেছে। সোহেল রানা পেশায় একজন আইনজীবী। তাঁর বাড়ি নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলায়। ঘটনার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এখন উত্তাল। গতকাল বিকেলে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য্য বাসভবন ঘেরাও করে এবং তুলে নেওয়া ছাত্রীর উদ্ধার দাবিতে আলটিমেটাম দেয়।
সহপাঠীরা বলছেন, সকাল ৯টা থেকে তাঁদের বিভাগে পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সকাল সোয়া ৮টার দিকে হল থেকে বের হন ওই ছাত্রী।
তিনি তাপসী রাবেয়া হল থেকে বের হয়ে হেঁটে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের সামনে পৌঁছতেই পেছন থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে তাঁর সাবেক স্বামীসহ আরো কয়েক যুবক তাঁর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে। এ সময় তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে জোর করে ওই ছাত্রীকে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যায় তারা। মাইক্রোবাসটি সকাল থেকে হলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল বলেও কয়েকজন ছাত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছে।
ওই ছাত্রীর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানেন এমন সূত্র মতে, সোহেল রানার সঙ্গে ওই ছাত্রীর ডিসেম্বরে বিয়ে হয় এবং গত ১০ অক্টোবর তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। তিন মাসের মধ্যে ডিভোর্সদাতা তা প্রত্যাহার না করলে তা নিজে নিজেই কার্যকর হয়ে যাবে। তবে সোহেল চাচ্ছেন যাতে তালাক না হয়। এ জন্য সোহেল তাঁকে ফোনে প্রায়ই বিরক্ত করতেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. লুত্ফর রহমান বলেন, তিনি খবর পেয়েই বিষয়টি পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা, র্যাবকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জেনেছি গত বছরের ডিসেম্বরে ওই মেয়ের বিয়ে হয়। দুই মাস আগে সে স্বামীকে ডিভোর্স দেয়। তবে তার স্বামী ডিভোর্স চাচ্ছে না বলে আজ সকালে দেখা করতে আসে। এ সময় তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে তাকে নিয়ে যায় সে। তাদের খুঁজে বের করার জন্য আমি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি। ’ প্রক্টরকে উদ্ধৃত করে একটি গণমাধ্যমের দেওয়া খবরে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিসিটিভির ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখেছে, অপহরণে ব্যবহূত গাড়িটি মেইন গেট, কাজলা গেট ও বিনোদপুর গেট দিয়ে বের হয়নি। তবে চারুকলা দিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরিবারকে জানানো হয়েছে বলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়।
কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে খবর পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন নগরের মতিহার থানার ওসি মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের জানিয়েছে তাঁরা স্বামী-স্ত্রী। তাঁর স্বামীই নাকি তাঁকে নিয়ে গেছেন। প্রাথমিকভাবে আমাদের বলা হয়েছে তাঁদের খোঁজ করতে। আমরা সব জায়গায় মেসেজ দিয়ে রেখেছি। ’
ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভ : ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ওই ছাত্রীর সহপাঠীরা উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে। ওই ছাত্রীর সন্ধান দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দুই ঘণ্টার আলটিমেটামও দেয় শিক্ষার্থীরা। তারা বলে, ‘আমাদের চোখের সামনে আমাদের সহপাঠীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার স্বামীর সঙ্গে তালাক হয়েছে। আইনত তালাক কার্যকর না হলেও তাকে কেউ এভাবে নিয়ে যেতে পারে না। এভাবে হলের সামনে থেকে একটা মেয়েকে তুলে নিয়ে গেল, ক্যাম্পাসে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? আজ তাকে নিয়ে গেছে, কাল অন্য কাউকে নিয়ে যাবে। ’
শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে প্রক্টর অধ্যাপক লুত্ফর রহমান ও ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস এসে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবদুস সোবহান নিজে বাসভবন থেকে বেরিয়ে আসেন এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি তাদের আন্দোলন স্থগিত করার আহ্বান জানান। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ‘অযৌক্তিক’ উল্লেখ করে বলেন, ‘এটা তাদের স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপার। স্বামী তার স্ত্রীকে নিয়ে গেছে। অন্যায় হলে সেটা আইন দেখবে। ’ উপাচার্য ওই ছাত্রীকে দ্রুত সময়ের মধ্যে খুঁজে বের করার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন কর্মসূচি আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত স্থগিত করে।
এ সময় সাংবাদিকদের উপাচার্য বলেন, ‘স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তালাক হয়েছে। কিন্তু আইনত সেটা কার্যকর হতে তিন মাস সময় লাগবে। এখনো তিন মাস সময় পূরণ না হওয়ায় তালাক কার্যকর হয়নি। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমস্যা থাকতেই পারে। ’
আন্দোলনের একপর্যায়ে ওই ছাত্রীর বাবা ঘটনাস্থলে আসেন এবং উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলার জন্য তাঁর বাসভবনে প্রবেশ করেন। প্রায় আধা ঘণ্টা কথা বলে বেরিয়ে এসে প্রশাসনের পদক্ষেপের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তিনি। ছাত্রীর বাবা শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘আমি এখনো জানি না আমার মেয়েকে কে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। তবে তার স্বামী তাকে ‘উঠিয়ে নিয়ে যাবে’, বিভিন্ন সময় এমন হুমকি দিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমার মেয়েকে উদ্ধারে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। ’