প্রিয় পাঠক ও বন্ধুরা,এই যে এই মানুষটিকে দেখছেন, উনি আমার ভীষণ প্রিয় শিক্ষক।যার কারনে আজকে আমার লেখক হয়ে ওঠা।(যদিও এখনো হতে পারিনি)আমি তখন নবম শ্রেণিতে শরীয়তপুর গার্লসে পড়তাম।স্যার শরীয়তপুর সরকারী কলেজের অধ্যাপক।বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে স্যারের সাথে প্রথম পরিচয়।ঐ সময় বন্ধু রেজাউল হক রেজাও বিশ্বসাহিত্য করতো।সে সময় আমাদের মাঝে বই পড়ার তুমুল প্রতিযোগীতা ছিল।আমাদের মাঝে এই সু অভ্যাসটিও গড়ে তুলেছিলেন জিয়াউল হাসান স্যার। ঐ সময় স্যার কার কাছে যেনো শুনেছিলেন আমি কবিতা লিখি।আমার কবিতা দেখার জন্য একদিন বিশ্বসাহিত্য শেষে স্যার নিজ থেকেই আমার কবিতার খাতা দেখতে চাইলেন।
স্যার আমার কবিতা পড়বেন!! শুনে সেদিন আনন্দে চোখে জল এসে গিয়েছিল।স্যারকে খাতাগুলো দিয়ে রোজার ছুটিতে আমার ছোট চাচার বাসা কুষ্টিয়াতে বেড়াতে গেলাম।ছুটি শেষে ঈদের পরে বাসায় এসে দেখি আমার পড়ার টেবিলে একটা ম্যাগাজিন নাম “দিশারী”।ওটা খুলে পৃষ্ঠা ওল্টাতেই দেখি ওখানে আমার লেখা একটা কবিতা।আমি বার বার ম্যাগাজিনটি উল্টে পাল্টে দেখছি।সত্যি কিনা সেটা শিওর হওয়ার জন্য বার বার কবিতাটি পড়ছি আর নিজের নামটি বার বার দেখছি।
আমার কবিতা ম্যাগাজিনে!!!বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম।ওটাই ছিল ছাপার অক্ষরে আমার জীবনের প্রথম লেখা।
আমার লেখা ম্যাগাজিনে কিভাবে এলো,কে পাঠালো কিছুই জানিনা।পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম আমার ভীষণ প্রিয় শিক্ষক জিয়াউল হাসান স্যার আমার কবিতার খাতা থেকে “ভেদাভেদ”কবিতাটি বাছাই করে ম্যাগাজিনে পাঠিয়েছিলেন।এটা ১৯৯০ সালের কথা।২৭ বছর আগের ঘটনা হলেও সব চোখের সামনে জ্বল জ্বল করছে।এরপর স্যারের পরিচালনায় “প্রতিভাস আবৃত্তি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হই।শব্দ উচ্চারণের সঠিক নিয়ম শিখেছিলাম স্যারের কাছেই।এরপর একসাথে অনেক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করলাম।ঐসময় স্যারের পরিবারের সাথে চমৎকার একটা পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। স্যারের জ্যেষ্ঠ পুত্র সৌমিক হাসানের প্রথম জন্মদিনে আমি তাকে নিয়ে বেশ কিছু কবিতা লিখে উপহার দেই।স্যার ও ভাবীর সাথে সম্পর্ক যখন গভীর হচ্ছিল তখনি স্যার বদলি হয়ে চলে যান।ব্যস্ততাজনিত কারণে যোগাযোগ না থাকার কারণে স্যারকে আমি হারিয়ে ফেলি।
২৩ বছর স্যারের সাথে যোগাযোগ ছিলনা।পরে নাট্যকার শিহাব শাহীন ভাইয়ের মাধ্যমে গত২০১৫ সালে স্যারের সাথে যোগাযোগ হয়।ঐ বছরই শিখা প্রকাশনি থেকে প্রকাশিত আমার লেখা বই”ভূত ছানার বিদ্যা অর্জন” স্যারকে উৎসর্গ করি।স্যারের বাসায় গিয়ে নিজ হাতে স্যারকে বইগুলো দিয়ে আসি।স্যার একটা কবিতা ম্যাগাজিনে প্রকাশ করে সেদিন আমার ভিতরে যে স্বপ্ন বীজ বুনে দিয়েছিলেন সেটাই এখন চারা গাছ।আমার আজকের আমি হয়েয়ে ওঠার পেছনে এই মানুষটির অবদান অনেক বেশি।
আজ তার শুভ জন্মদিন।এই শুভ দিনে কামনা করি আমার স্যার শতায়ু হোক।জিয়াউল হাসান স্যারের মতো হাজারও জিয়াউল হাসান স্যার জন্ম নিক।আমার স্যার একজন মুক্তিযোদ্ধা,একজন আদর্শ শিক্ষক,সু অভিনেতা,ভালো বাবা।সর্বোপরি একজন ভালো মানুষ। আমি এমন একজন মহান মানুষের ছাত্রী এটা ভাবতেই গর্বে আমার বুক ভরে যায়। আবারও শুভ জন্মদিন স্যার। অনেক অনেক শুভ কামনা ও ভালোবাসা আপনার জন্য।
লেখক
খায়রুননেসা রিমি
কবি ও শিক্ষক