তুরস্কের অ্যাকটিভিস্ট এবং বিরোধীদলীয় রাজনীতিকরা বলছেন দেশটির নতুন বিয়ে আইন নারী অধিকার এবং সেক্যুলারিজম এর ওপর সরাসরি একটি আঘাত। এবং তুরস্কের বিভক্ত সমাজে ধর্মীয় মূল্যবোধ চাপিয়ে দেওয়ার চলমান প্রচেষ্টারই একটি অংশ।
ওই আইনে নজিরবিহীন মুফতি বা ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞদেরকে সিভিল ম্যারেজ বা কোর্টে গিয়ে রাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় বিয়ে করার বিষয়টির তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যেমনটা মূলত মধ্যযুগের ইসলামি শাসনের সময় ছিল।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ানের প্রস্তাবিত ওই আইনটি তুরস্কের সংসদে পাশ করার পর গত শুক্রবার গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। সুশীল সমাজ অ্যাকটিভিস্ট এবং বিরোধীদলীয় আইনজীবিদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও আইনটি পাশ করা হয়েছে।
ইয়েডিটেপ বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার এবং লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরন আইন বিশেষজ্ঞ নাজান মোরোগলু বলেন, ‘নারীদের অধিকার ধ্বংস হতে চলেছে। এই দেশে নারীদের ওপর যা কিছু চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে তা করা হয়েছে মূলত ধর্মের নামে। ’
মুফতিরা এখন দৈনন্দিন জীবনের নানা বিষয়ে ধার্মীয় মতামত প্রদানের ক্ষমতাও পেয়ে গেছেন। আগে শুধু পরিবার বিষয়ক রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তারাই সিভিল বিয়ে করাতে পারতেন। বাংলাদেশে যেভাবে কোর্ট ম্যারেজ হয়ে থাকে।
ওই আইনে বিয়ের আগে কেউ ‘অনৈতিক কর্মকাণ্ড’ করলে তাকে তুরস্কের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করারও বিধান করা হয়েছে।
তুরস্কের অনেকেই সিভিল বিয়ের পাশাপাশি ধর্মীয় ও পারিবারিকভাবেও বিয়ের উৎসব করেন। তবে অন্যান্য মধ্যপ্রাচ্যীয় দেশে সিভিল বিয়ের প্রচলন নেই। কেননা সেসব দেশে ভিন্নধর্মীয়দেরকে বিয়ে করা যায় না।
তুরস্কের নতুন ওই বিয়ে আইনের সমর্থকরা বলছেন, এই আইনে সিভিল বিয়ের শর্তগুলো পরিবর্তন করা হয়নি। তাদের মতে এই আইনের ফলে বাল্য বিয়ের আর কোনো সুযোগ থাকবে না এবং বহু বিয়ের সুযোগও রহিত হবে।
কিন্তু বিরোধীদের মতে তুরস্কের সমাজ থেকে সেক্যুলারিজমকে উৎখাতের চলামান প্রচেষ্টারই অংশ এটি। সেক্যুলারিজমের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা তুরস্কের রাষ্ট্র ও সমাজে সুন্নী ইসলামের প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়ানোর প্রকল্পের আরো কিছু সাম্প্রতিক উদারহণও দেন তারা। যেমন স্কুলের পাঠ্যসুচি থেকে বিবর্তনবাদ সম্পর্কিত শিক্ষাকে বাদ দেওয়া এবং জিহাদ ধারণার রাষ্ট্রীয় ব্যাখ্যা প্রবর্তন।
এছাড়া সরকার বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে উদাসীনতা প্রদর্শণ করছে বলেও অভিযোগ করেছেন বিরোধীরা। তুরস্কের আইনে মেয়েদের বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৭ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে ১৬ বছর বয়সেও বিয়ে করতে পারবে মেয়েরা। গত চার বছরে বাল্য বিয়ের ঘটনা ঘটেছে ২ লাখ ৩২ হাজার। আর নারী অধিকার কর্মীদের মতে, তুরস্কের মোট বিয়ের এক তৃতীয়াংশ বিয়েরই কনের বয়স ১৮ বছরের নিচে।
আর তাছাড়া সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত নিয়ে আইনটি তৈরি করা হয়নি। বরং একতরফাভাবে এরদোয়ানের সরকারের পক্ষ থেকে আইনটি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সেক্যুলারদের দাবি এরদোয়ান তার জনসমর্থনের ৫০ শতাংশকে আরো সুদৃঢ় করার কৌশল হিসেবে এই আইন পাশ করেছে। মূলত বিরোধী রাজনীতিকদের কাছ থেকে তার সমর্থকদেরকে আরো দূরে সরিয়ে নেওয়ার জন্যই এরদোয়ান এই কাজ করেছেন।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান