সিলেট প্রতিনিধি :: দেখে বোঝার উপায় নেই এটি সড়ক না চাষাবাদের জন্য তৈরিকৃত কোনো জমি। তবুও প্রয়োজনের তাগিদে চলাচল করছে জনসাধারণ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলতে গিয়ে মাঝে মধ্যে ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এটি সিলেট-কালীগঞ্জ-জকিগঞ্জ এবং সিলেট-শেওলা-জকিগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ প্রধান সড়ক।
সড়কের বর্তমান বেহাল দশা দেখে মনে হয়, যেন মৃত্যুফাঁদ। মেরামত ও সংস্কারের অভাবে বেশিরভাগ রাস্তাঘাটের ইট-বালু সরে গিয়ে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি মৃত্যুকূপে পরিণত হলেও সংস্কার করতে এখন পর্যন্ত নেই কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ।
গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি দিয়ে প্রতিনিয়ত শতশত যানবাহন ও পথচারী চলাচল করে থাকেন। রাস্তাটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সাথে জড়িয়ে রয়েছে। সংস্কার এর অভাবে বর্তমানে যান চলাচল হুমকির মুখে পড়েছে। একান্ত বাধ্য হয়ে যাতায়াত করলেও এলাকাবাসীর ভোগান্তির শেষ নেই। রাস্তাটির এমন বেহাল অবস্থা হলেও দেখার কেউ নেই।
রাস্তাটি বহুদিন যাবৎ মেরামতের অভাবে যানবাহন চলাচলে অনুপযোগী হওয়ায় প্রায়ই দুর্ঘটনার মুখোমুখী হচ্ছেন যাত্রী ও পথচারীরা। এ রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় নানা ধরনের যানবাহন উল্টে প্রায়ই আহত হন পথচারী।
বিগত বছর ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের মেরামত করা হলেও এ বছরে কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া পায়নি জকিগঞ্জ-সিলেট সড়ক। খানাখন্দে ভরা এ সড়কে যাত্রীবাহী বাস, টেম্পো, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন ছোট যানবাহন চলাচলে ঘটছে অহরহ দুর্ঘটনা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। জরাজীর্ণ এ সড়কে শিশু, বৃদ্ধ ও রোগী নিয়ে যাতায়াত করতে হয় অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে। এ সড়কে চলাচলকারী যানবাহনেরও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। আর অসুস্থ রোগী নিয়ে এ সড়কে যাতায়াত করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয়।
জকিগঞ্জ থেকে সিলেটে যাওয়া-আসার বিকল্প কোনো পথ না থাকায় বাধ্য হয়ে জনগণকে জরাজীর্ণ এ সড়ক পথেই যাতায়াত করতে হচ্ছে। সরেজমিনে উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘদিন সংস্কার কাজ না করায় অধিকাংশ সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এলাকাবাসী জানান, এই সড়কটিতে এই বছরে সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত। ব্যস্ততম এই সড়কটি দিয়ে চলাচল করতে জকিগঞ্জ এলাকার মানুষের ভীষণ কষ্ট ভোগ করতে হয়। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের দুর্ভোগে অন্ত থাকে না। জকিগঞ্জ উপজেলার বড় বড় রাজনৈতিক নেতা, এমপি-মন্ত্রী ও স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বাররা প্রতিনিয়ত এই রাস্তায় চলাচল করলেও তারা যেন এ দৃশ্য দেখেও না দেখার ভান করে আছেন। স্থানীয়রা জানান, সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
সিলেট-জকিগঞ্জ-বারইগ্রাম-কানাইঘাট বাস মালিক সমিতির স্টেশন ম্যানেজার নজরুল ইসলাম জানান, পরিবহণ সেক্টরের পক্ষ থেকে এই রাস্তা সংস্কার করার অনেকবার দাবি জানানো হয়েছে। পরিবহণ সেক্টর থেকে সরকারের প্রতিদিনের যে আয় হয়, তা দিয়ে হয়তো পুরো দেশের রাস্তা নতুন করে বানিয়ে দেওয়া যাবে। কয়েকদিন আগে একাধারে ১৫-২০ দিন হরতালের ডাক দিলেও সিলেটের বড় নেতাদের উদ্যোগে এই হরতাল প্রত্যাহার করা হয়। বর্তমানে রাস্তাগুলোর বেহাল দশায় পরিবহণ সেক্টরে দেখা দিয়েছে মন্থরতা।
প্রতিদিন গাড়ি সার্ভিসিং, গাড়ির টুকিটাকি যন্ত্রাংশ বদলানো এ যেন এক প্রতিদিনের রুটিন হয়ে গেছে। পরিবহণ সেক্টরে আয়-রোজগারেও ভাটা পড়েছে। তারা দ্রুত এ রাস্তাটির সংস্কার দাবি করেন।
জকিগঞ্জ ফার্মেসি ব্যবসায়ী স্বপন রায় জানান, স্থানীয় এলাকার জনসাধারণ অসুস্থ রোগীদের অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে এ সড়কে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এইসব দেখার পরও এমপিদের নজর কাড়ে না। সিলেট-কালীগঞ্জ-জকিগঞ্জ এবং সিলেট-শেওলা-জকিগঞ্জ সড়কটি দ্রুত মেরামত করা দরকার। সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে রড বেরিয়ে পড়েছে। এতে গাড়ি ও মোটরসাইকেলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে এ সড়কে।
জকিগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী ইমন আহমদ জানান, এ সড়ক দিয়ে স্কুল ও কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী, চাকুরিজীবী, ব্যবসায়ী এবং নানা শ্রেণি-পেশার কয়েক হাজার মানুষ শহরে আসা-যাওয়া করেন। এ ছাড়াও শহরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা সড়কে যাতায়াত করতে মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হন।
জকিগঞ্জের ব্যবসায়ী সাজুল ইসলাম জানান, এ সড়কের অবস্থা এতই খারাপ যে, যে-কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বর্তমানে এই সড়ক দিয়ে মোটরসাইকেল চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। জরুরি ভিত্তিতে সড়কটি মেরামত করা দরকার।
অটোরিকশাচালক খলিলুর রহমান, মোস্তাক আহমদ, রায়হান আহমদ জানান, জরাজীর্ণ এসড়কে অটোরিকশা চালানোর সময় গাড়ির নিয়ন্ত্রণ ঠিক রাখতে না পারায় প্রায়ই দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়। দুর্ঘটনার হাত থেকে জানমাল রক্ষার জন্য সড়ক মেরামত করা দ্রুত প্রয়োজন।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী উৎপল সামন্ত জানান, সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক সংস্কারের প্রকল্প সম্প্রতি একনেকে অনুমোদন হয়েছে। ১৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দও হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা প্রাক্কলন পাঠিয়েছি। তা অনুমোদন হলে শিগগিরই দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে চলতি বছর ডিসেম্বর মাসের দিকে কাজ শুরু করতে পারব।
বিরোধীদলীয় হুইপ ও স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিন জানান, সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক সংস্কারের জন্য একাধিকবার সংসদে দাবি উত্থাপন করেছি। সরাসরি ও লিখিতভাবে যোগাযোগমন্ত্রীকে অবহিত করেছি। কিন্তু আশানুরূপ সাড়া পাইনি। তবে শুনেছি, এ সড়কের জন্য ১৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে এবং অনুমোদিত বরাদ্দের জন্য আগামী ডিসেম্বরে কাজ শুরু হবে। শুধু এ সড়কটি নয়, উপজেলার আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সংস্কারের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। আমরা এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সড়কগুলো সংস্কারের জন্য চিঠি দিয়েছি।