রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় চলতি জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় ৪০ জন ছাত্রী অনুপস্থিত। এদের অধিকাংশ বাল্যবিবাহের শিকার বলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সূত্রে জানা গেছে।
১ নভেম্বর থেকে সারা দেশে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ১০টি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গোয়ালন্দ উপজেলায় জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার তিনটি কেন্দ্র আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ১ হাজার ৮৪৭ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে নাজির উদ্দিন পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয় এবং শহীদ স্মৃতি সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ১ হাজার ৬৪১ জন পরীক্ষা দিচ্ছে। আর দক্ষিণ উজানচর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা পরীক্ষাকেন্দ্রে জেডিসি পরীক্ষা দিচ্ছে ২০৬ জন। তিন কেন্দ্রে মোট ৫৬ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে। এর মধ্যে ৪০ জন মেয়ে ও ১৬ জন ছেলে।
গোয়ালন্দ নাজির উদ্দিন পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও পরীক্ষাকেন্দ্র-সচিব জহুরুল ইসলাম বলেন, তাঁর কেন্দ্রের মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে নিয়মিত-অনিয়মিত মিলে ৩২টি মেয়ে অনুপস্থিত। ছাত্রীদের অনেকে বাল্যবিবাহের শিকার বলে তিনি সহকর্মীদের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন।
দক্ষিণ উজানচর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা পরীক্ষাকেন্দ্র-সচিব ও মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোজাফফর হোসাইন বলেন, তাঁর কেন্দ্রে বর্তমানে পরীক্ষা দিচ্ছে ১৯৩ জন। অনুপস্থিত ১৩ জনের ৮ জন মেয়ে ও ৫ জন ছেলে। ৮ জন মেয়েই বাল্যবিবাহের শিকার।
উপজেলার প্রপার উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২৭৬ জন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছে। এর মধ্যে ৭ জন অনুপস্থিত। এই ৭ জনের মধ্যে ৫ জন মেয়ে।
বিদ্যালয়ের তানজিলা আক্তার ও যুথি আক্তার বলে, তাদের দুই বান্ধবীর বিয়ে হয়ে গেছে। তাই ওরা পরীক্ষা দিতে পারছে না। অথচ ওদের খুব ইচ্ছা ছিল পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার।
প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকার পর খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন পাঁচটি মেয়েরই বিয়ে হয়েছে। বিষয়টি তিনি সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। অথচ এরা প্রত্যেকেই মেধাবী ছাত্রী ছিল।
হাবিবুর আরও বলেন, দরিদ্র ও অসচেতন অভিভাবকেরা বয়স গোপন রেখে ভুয়া জন্মসনদ দিয়ে মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছে।
দৌলতদিয়া আক্কাস আলী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, ৭০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬ জন অনুপস্থিত। এর মধ্যে ২ জন মেয়ের বিয়ের কথা তিনি শুনেছেন। নদীভাঙনের কারণে ২ জন মেয়ে এবং ২ জন ছেলে পরীক্ষা দিতে পারছে না।
জামতলা উচ্চবিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী সোনিয়া আক্তার ও ফাতেমা খাতুন বলে, ফরম পূরণের কয়েক দিন পর তাদের দুই সহপাঠীর বিয়ে হয়ে যায়। এখন ওরা স্বামীর বাড়িতে আছে।
ইউএনও আবু নাসার উদ্দিন বলেন, তিনি নতুন এসেছেন। গতকাল সোমবার উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আইনশৃঙ্খলা-বিষয়ক সভায় বাল্যবিবাহ ও ভিক্ষুকমুক্ত উপজেলা গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাল্যবিবাহের কারণে কারও পড়ালেখা বন্ধ হলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া উপজেলার কোথাও বাল্যবিবাহ হলে তাৎক্ষণিক তাঁকে জানানোর অনুরোধ করেন তিনি।