রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ বা তুলে নেওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আদৌ কোনো চেষ্টা আছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন স্বজনেরা। তাঁরা বলছেন, দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা নেই।
গত আড়াই মাসে নিখোঁজ হওয়া ১০ জনের পরিবারে উদ্বেগ বাড়ছে। একই সময়ের মধ্যে নিখোঁজ হওয়ার পর যে দুজনের ফিরে আসার ঘটনা আলোচিত হয়েছে, তাঁদের কারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল, সে বিষয়টিও এখনো স্পষ্ট হয়নি।
গুলশান থেকে নিখোঁজ ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশে বেলারুশের অনারারি কনসাল অনিরুদ্ধ রায়কে খোঁজার বিষয়ে তাঁর ভাগনে ও তাঁর নিখোঁজের ঘটনায় করা সাধারণ ডায়েরির বাদী কল্লোল হাজরা বলেন, অনিরুদ্ধকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা তো সিসি টিভির ফুটেজেই দেখা গেছে। তবু এত দিনেও জানা গেল না ঘটনাটা আসলে কী।
২৬ আগস্ট নিখোঁজ ছাত্র ইশরাকের বাবা জামালউদ্দীন বলেন, ‘আমি নিয়মিতই র্যাব-পুলিশের কাছে যাচ্ছি। কিন্তু কেউ কোনো খবর দিতে পারছে না। কোথাও কোনো কাজই হচ্ছে না। তবু আজ (মঙ্গলবার) আবার যাব।’ আরেক স্বজন বলেছেন, ‘পুলিশ-র্যাব যেকোনো কাজ করছে না বা তাদের করতে দেওয়া হচ্ছে না, বিষয়টা তো পরিষ্কার। কিন্তু আমাদের তো পুলিশ-র্যাবের কাছে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।’
যদিও গত রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘তাঁদের উদ্ধারে কাজ করছেন গোয়েন্দারা। অপেক্ষা করুন। গোয়েন্দারা ব্যর্থ নন।’
গত দুই দিনে পুলিশের মাঠপর্যায়ের তিনজন কর্মকর্তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়। তাঁরা বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরই পুলিশ কাজ শুরু করে। প্রথম কাজটা হচ্ছে নিখোঁজ ব্যক্তিদের সর্বশেষ লোকেশন কোথায়, তা প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে বের করা। এরপর ফোনের কল লিস্ট ঘেঁটে তাঁরা যাদের সঙ্গে সর্বশেষ কথা বলেছিলেন, তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া। একই সঙ্গে তাঁদের স্বজন ও বন্ধুদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তাঁদের ফেসবুক আইডি ঘেঁটে দেখা হয়। তবে সম্প্রতি নিখোঁজ কয়েকজনের বিষয়ে সাধারণ ধারণা হচ্ছে, রাষ্ট্রেরই অন্য কোনো সংস্থা তাঁদের তুলে নিয়ে যেতে পারে। আর কারও কারও পরিবার এর মধ্যেই জেনে গেছে তাদের স্বজনদের কারা ধরে নিয়ে গেছে। বিশেষ করে এক পুলিশ কর্মকর্তা গুলশান থেকে নিখোঁজ এক ব্যবসায়ীর বিষয়ে ইঙ্গিত করে বলেন, ওই ব্যবসায়ীর পরিবার সব রকম তৎপরতা ও যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। হয়তো তাদের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, যে অভিযোগগুলো র্যাবের কাছে আসে, তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটা ব্যাটালিয়নই চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে কীভাবে চেষ্টা চলছে বা কাজের ধরনটা কী, সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কীভাবে র্যাব কাজ করে, এ বিষয়টা সবাইকে জানানো ঠিক হবে না। তিনি বলেন, কাউকে জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। আবার কয় দিন আগে দেখা গেল, এক নারীর কাছে অনেকেই টাকা পান সেই নারী হঠাৎ নিখোঁজ। পরে তাঁকে র্যাব খুঁজে বের করল। এ রকম অনেক ঘটছে। কেউ বিদেশে লোক পাঠানোর নামে প্রতারণা করে পরে গা ঢাকা দেন। আবার জঙ্গিবাদে যুক্ত হতে অনেকেই নিখোঁজ থাকেন।
মানববন্ধন করতে পারেনি মিঠুনের পরিবার
সদ্য গঠিত বাংলাদেশ জনতা পার্টির (বিজেপি) নিখোঁজ হওয়া সভাপতি ও মুখপাত্র মিঠুন চৌধুরীর সন্ধানের দাবিতে তাঁর পরিবার ও কর্মীদের মানববন্ধন করতে দেয়নি পুলিশ। তবে পুলিশ বলেছে, ঢাকা মহানগর পুলিশ—ডিএমপি বা শাহবাগ থানার অনুমতি ছাড়াই মানববন্ধন করায় তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এর কিছুক্ষণ আগে মিঠুনের পরিবার ও বিজেপির লোকজন সেখানে মানববন্ধন করার জন্য দাঁড়ালে পুলিশ তাদের সরে যেতে বলে এবং ব্যানার নিয়ে যায়। পাশেই অপর একটি সংগঠনের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি চলছিল।
পরে মিঠুন চৌধুরীর স্ত্রী সুমনা চৌধুরীসহ দলের কর্মীরা ফুটপাতে অবস্থান নেন। সুমনা চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, ‘মিঠুনের সন্ধানের দাবিতে আমাদের মানববন্ধনও করতে দেওয়া হচ্ছে না। এতে প্রমাণ হয়, সরকার মিঠুনকে ভয় পায়।’
জানতে চাইলে সেখানে উপস্থিত এক পুলিশ সদস্য বলেন, অনুমতি না নেওয়ায় মানববন্ধন করতে দেওয়া হয়নি।
মিঠুন চৌধুরী ও একই দলের নেতা আশিক ঘোষকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে গত ২৭ অক্টোবর পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জ থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্যরা।