আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এ দেশে যারা সাম্প্রদায়িক শক্তির পৃষ্ঠপোষকতা করেছে, জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটিয়েছে, তাদের মুখে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনার কথা ‘ভূতের মুখে রামনাম’ নয় কি?
আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ মন্তব্য করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেসকোর প্রামাণ্য দলিল শাখায় স্বীকৃতি পাওয়া উপলক্ষে ‘সাংবাদিকদের আনন্দ সম্মিলন’ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।
ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশে তারাই (বিএনপি) বেশি নীতিকথা বলেন, যাঁরা বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত। এ দেশে যাঁরা নষ্ট রাজনীতি করেছেন, তাঁরা এখন রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের কথা বলেন। বিএনপির মুখে এটা মানায় না।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির প্রতিহিংসার রাজনীতির কারণে অনেক মানুষ তাদের জীবন হারিয়েছে। বিএনপির প্রতিহিংসার আগুনে শিক্ষক, গাড়িচালক, শিক্ষার্থীসহ অনেকে জীবন হারিয়েছেন। তারা এখন রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে চায়।
১৮ নভেম্বর আওয়ামী লীগের নাগরিক সমাবেশ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সমাবেশ নিয়ে কোনো রাজনীতি করছি না, আমাদের সমাবেশ পাল্টাপাল্টি না।’ তিনি বলেন, রোববার বিএনপির চেয়ারপারসন সমাবেশ করেছেন। ১৮ তারিখ আওয়ামী লীগ সমাবেশ করবে।
এটাকে পাল্টাপাল্টি না বলার অনুরোধ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখন দু-এক দিনের মধ্যে আমি দেখব অনেকে লিখছেন, আমরা পাল্টা সমাবেশ দিয়েছি। প্লিজ, আমরা পাল্টাপাল্টি কোনো সমাবেশে যাচ্ছি না।’
আওয়ামী লীগ কোনো বিভাজনের রাজনীতি করছে না উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যা ছিল বাঙালির সম্পদ, সেটা আজকে বিশ্বের সম্পদ। যা ছিল বাঙালির প্রামাণ্য দলিল, তা আজকে বিশ্বের হেরিটেজ। এটা নিয়ে আমরা কোনো রাজনীতি, কোনো ডিভাইসিভ পলিটিকস করছি না।’ তিনি বলেন, বিএনপির সমাবেশের তারিখ ঘোষণার আগেই বঙ্গবন্ধুর সম্মানে এই সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
সাংবাদিকদের সুবিধাগুলো দেখতে তথ্যমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর উদ্দেশে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সাংবাদিকদের বিষয়গুলো দেখবেন, সাংবাদিকদের সুবিধাগুলো দেখবেন। একটি মানবিক বিষয় আছে, এ মানবিক দৃষ্টিকোণটাও উপেক্ষিত নয়। কেন তাঁরা সংঘাতের দিকে যাবেন। সাংবাদিকেরা তো ভিন্ন কোনো গ্রহের বাসিন্দা নন। তাঁদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে সমাধান করতে হবে। সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ডের বিষয়টির যুক্তিসংগত সমাধান করে দিন।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সাংবাদিকেরা এখন এই পেশাটাকে যে কী অবস্থায় নিয়ে গেছেন। আমার এলাকার আশপাশের এলাকার এক সাংবাদিক আছে, আমি জানি না সে এক লাইন শুদ্ধ ভাষায় বাংলা লিখতে পারে কি না। সে একটি কাগজের সাংবাদিক। পেশাটাকে যে কী অবস্থায় আপনারা নিয়ে গেছেন! ব্যাঙের ছাতার মতো মিডিয়া সৃষ্টি হয়েছে।’
তথ্যমন্ত্রীকে সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখন সাংবাদিকেরা যা পান, তাতে চলে না। সাংবাদিকেরা বাসায় বসে পড়াশোনা করার জন্য তো একটা মুড লাগে। তাঁদের ইন্সপাইরেশন তো দরকার। আমার পেটে নেই ভাত, সংসারের ছেলেমেয়েদের খরচ দিতে পারছি না, বাড়িভাড়া দিতে পারছি না। এ রকম করে কীভাবে তিনি ভালো সাংবাদিকতা করবেন?’
বেশির ভাগ সাংবাদিক ‘কপি-পেস্ট’ করছেন, অভিযোগ কাদেরের
বেশির ভাগ সাংবাদিকেরা এখন ‘কপি-পেস্ট’ করছে অভিযোগ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, সাংবাদিকদের মধ্যে যা দেখব, তা লিখব এটা কি আছে? একজন রিপোর্ট লেখেন অন্যদের কাছে শুনে শুনে, এখন দেখা যাচ্ছে, একজন গেছেন অন্য কেউ যাননি। অন্যের কাছ থেকে নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করছেন। পরের দিন দেখা যায় একই প্রতিবেদন সব পত্রিকায়।
বিএফইউজের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য কামরুল হাসান খান, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সমকাল পত্রিকার সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, বিএফইউজের মহাসচিব ওমর ফারুক চৌধুরী, ডিইউজের সভাপতি শাবান মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী প্রমুখ।