সম্পাদকীয়: ঈশান কোনে মেঘের ঘনঘটা, বৃষ্টি না ঘূর্নিঝড়!

Slider টপ নিউজ বাধ ভাঙ্গা মত সম্পাদকীয়

images

 

 

 

 

গতকাল ঢাকায় বেগম জিয়ার জনসভার মাধ্যমে আওয়ামীলী-বিএনপির মধ্যে দূরত্ব আরো বেড়ে গেলো। বেশ কিছু মৌলিক বিষয়ে ওই দূরত্ব আরো বেড়ে গেছে। আসন্ন নির্বাচনে দুই দলের যৌথ অংশ গ্রহনের সম্ভাবনা আরো ক্ষীন হয়ে যাচ্ছে। যার যার অবস্থান আরো পিছিয়ে যাচ্ছে। ফলে রাজনীতির আকাশে মেঘ আরো গাঢ় হচ্ছে। জাতির আশা ছিল এই জনসভার মাধ্যমে দুই নেত্রীর মধ্যে দূরত্ব কমে আসতে পারে। কিন্তু তা না হয়ে হিতে বিপরীত হয়ে গেছে।

দুই বড় দলের দুই নেত্রীর জনসভার আগ পর্যন্ত অবস্থান কিছুটা নমনীয় হয়েছিল বলে অনেকের ধারণা ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে বিএনপি সরে গিয়ে সহায়ক সরকারে এসেছিল। কিন্তু সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে বেগম জিয়ার ভাষন সহায়ক সরকারকে আঁড়াল করে দিয়েছে। বেগম জিয়ার সহায়ক সরকারের প্রস্তাবে সরকার নমনীয় হলে হয়ত বেগম জিয়া পূর্বের অবস্থানে নাও ফিরে যেতে পারতেন। আবার নমনীয় আচরণে বেগম জিয়া আরো শর্ত দিতেও পারতেন। তবে স্বাভাবিকভাবে মনে হয়েছিল, সরকার সহায়ক সরকারকে গুরুত্ব দিলে বেগম জিয়া হয়তবো তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরে নাও যেতে পারতেন।

এ দিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিএনপির দাবীকে মেনে নিয়ে আশ্রয় দেয়া ও জনসভার অনুমতি দেয়ার  জন্য প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনাকে বেগম জিয়া ধন্যবাদ দিলেও পারতেন। আবার জনসভার দিনে যানবাহন বন্ধ  করায় ও টিভিতে লাইভ অনুষ্ঠান করতে না দেয়ায় সরকারের সমালোচনা বেশী করেও করতে পারতেন তিনি।

আবার বিএনপির সমাবেশে কারা বাঁধা দিয়েছে খোঁজ নেয়ার কথা বলে ওবায়দুল কাদের আরেকটি মন্দ কাজ করেছেন। কারণ তিনি জানেন কি ভাবে কেন কারা এটা করেছেন। তিনি স্বীকার না করলেও জাতির কাছে পরিস্কার যে, জনসভার দিনে ওই সব ঘটনা কারা ঘটিয়েছিল। বেগম জিয়া গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় জনাব কাদের সাহেবের বক্তব্য দায়িত্বশীলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

জনসভার পর  তোফায়েল সাহেব যে ধরণের বক্তব্য দিয়েছেন তাও কাংখিত নয়। তারা বলেছেন, সেনাবাহিনীকে কেন বিচারিক ক্ষমতা দেয়া হবে? এটাও যৌক্তিক নয়। কারণ অতীতে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর যে নির্বাচনে তোফায়েল সাহেব ক্ষমতায় এসেছেন সেই সময় সেনাবাহিনীর হাতে বিচারিক ক্ষমতা ছিল।

পর্যবেক্ষন করলে দেখা যায়, যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বেগম জিয়া সহজে দেন নি, সে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখন তিনিই দাবি করছেন। আর যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য রক্তাক্ত হয়েছে রাজপথ, সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিদার আওয়াীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানছেন না। সুতরায় ক্ষমতার প্রয়োজনে তারা সব পারেন। আজ যা বলছেন কাল বলবেন তার উল্টো। যারা ক্ষমতায় থাকেন আর যারা ক্ষমতার বাইরে যান তাদের বক্তব্য বিপরীতমুখী।

সাধারণ মানুষ বলছেন, দুই দলের মধ্যে বিরোধ যত তুঙ্গে উঠবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তত উত্তপ্ত হবে। তবে তাদের মধ্যে সমঝোতা না হলে কি পরিণতি হয় তা তারাও জানেন ও দেশবাসীরও অজানা নয়।

সুতরাং সময় থাকতেই দুই দলের সমঝোতা জরুরী। কারণ সময় চলে গেলে আর সমঝোতা করে লাভ নেই। একই কারাগারে বসে ভাল মন্দ খাবার পাওয়া যায় কিন্তু সহজে সমঝোতা করা যায় না।

তাই জাতির প্রত্যাশা, দুই নেত্রীর শুভ বুদ্ধির উদয় হউক। জাতি চায়, তারা কেউ অপমানিত না হউক। সম্মানের সাথে তারা মিলে মিশে দেশ পরিচালনা করুক। তা না হলে, বর্তমানে রাজনীতির আকাশে মেঘের ঘনঘটা দৃশ্যমান।  ঈশান কোনে কালো মেঘ জমছে। ক্রমান্বয়ে গাঢ়ও হচ্ছে মেঘ। সমাধান না হলে মেঘ বিভিন্ন আকারে যে ভাবে পৃথীবিতে আসে সেভাবেই আসবে এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম।

 

ড. এ কে এম রিপন আনসারী

এডিটর ইনচীফ

গ্রামাবাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *