গত কিছুদিন ধরে বক্স অফিসে তার ছবি ধুন্ধুমার ব্যবসা করছে না সত্য- কিন্তু যেকোনো সিনেমায় তার অভিনীত চরিত্রটি চমকাতে থাকে জ্বলজ্বলে স্বর্ণের মতো- সমালোচকরা এমনই মনে করেন। চরিত্র বাছাইয়ে তিনি খুবই সতর্ক থাকেন আর সেসব চরিত্রে ফুটিয়ে তোলেন নারীর শক্তিমত্তা, সাহস আর প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয়।
সেই বিদ্যা বালান নিজ দেশের এক সেনা সদস্যর দ্বারা ‘যৌন নিগ্রহের’ শিকার হওয়ার কথা প্রকাশ করেছেন সম্প্রতি।
বিদ্যা বালান বলেন, এখন এটা খুব ভালো হচ্ছে যে প্রত্যেক মেয়েই বুঝতে পারছে যে সে একা নয়। আজকাল সে নিজেকে দোষী মেনে না নিয়ে প্রকৃত দোষীরই মুখোশ খুলে দিচ্ছে। যখন আমি লোকাল ট্রেনে যাতায়াত করতাম তখন চেনবুর স্টেশন থেকে বিটি স্টেশনে আসা যাওয়া করতাম। কলেজে পড়ার ওই দিনগুলোতে প্রায়ই কেউ না কেউ আমার শরীরে চিমটি কেটে দিত, কেউ হাত চালিয়ে দিত। আমার খুব রাগ হতো আর চিৎকার করে হাত তুলে রুখে দাঁড়াতাম। আমি মনে করি এ ধরনের ঘটনায় চুপ করে থাকা অনুচিত।
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আজ আমি ১২ বছর পার করেছি, এখন পর্যন্ত আমার সঙ্গে এমন উল্টা-সিধা কিছু করার সাহস কারো হয়নি। তবে কলেজজীবনে এমনতরো হয়রানির শিকার হয়েছি।
এ ক্ষেত্রে অভিনয়ের ‘পাওয়ার হাউস’ হিসেবে খ্যাত সাহসী নারীর প্রতীক বিদ্যা তার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার বয়ান দেন। ওই ঘটনায় তিনি অভিযোগের আঙুল তোলেন নিজ দেশের অর্থাৎ খোদ ভারতীয় এক সেনা সদস্যের দিকে।
বলিউড তারকা বিদ্যা বলেন, কলেজে যাওয়ার পথে বিটি স্টেশনে দাঁড়ানো সেনাবাহিনীর এক জওয়ান আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। সে অনবরত আমার বুকের দিকে তাকিয়ে দেখছিল এবং একপর্যায়ে চোখাচোখি হতেই আমাকে চোখ মারে। প্রচণ্ড রাগে আমার সারা শরীরে আগুন ধরে যায়। আমি তার দিকে তেড়ে গেলাম এবং বললাম : আপনি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে দেখছেন কী? আমাকে চোখ মারলেন কেন? আপনি আমাদের দেশের সৈনিক। দেশের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব আপনার আর আপনি আমাকে চোখ মারছেন? এটা কোন ধরনের ছেঁচড়ামি?
ঘটনার সময়ে সঙ্গে আমার এক বান্ধবী ছিল। সে হাত টেনে আমাকে সরিয়ে নিতে চাচ্ছিল ওখান থেকে। কিন্তু আমি এতে থেমে যাইনি। আমার শাসানিতে শেষপর্যন্ত ওই জওয়ান খুবই লজ্জিত হলো।
বিদ্যা বালানের মতে, যৌন হয়রানির (নিপীড়ন) পরিভাষা খুবই ব্যাপক। এর অর্থ অনেক কিছুই হতে পারে। শুধু শরীরে হাত দেওয়া, অশ্লীল কথা বলা বা শ্লীলতাহানিই যৌন হয়রানি নয়- কখনো কখনো লোকজন আপনাকে চোখের ভাষায়ই বলাৎকার করে দেয়।
হলিউডের প্রভাবশালী প্রযোজক হার্ভে ওয়েইনস্টেইনের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর যেন খুলে গেছে নিপীড়নের শিকার নারীদের মুখের অর্গল। একে এক মুখ খুলেছেন সেলিব্রিটি অনেক নারী। এখন সিনে জগৎ ছাড়িয়ে ক্রীড়াঙ্গনের প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধেও উঠছে অধঃস্তন নারীদের ওপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ। অতিসম্প্রতি সাবেক ফিফা সভাপতি সেপ ব্লাটারের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন বিশ্বকাপজয়ী মার্কিন নারী ফুটবল দলের সাবেক গোলরক্ষক হোপ সোলো। ৩৬ বছর বয়সী সোলো দাবি করেন, ২০১৩ সালে ব্যালন ডি’অর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আগে দিয়ে সেপ ব্লাটারের দ্বারা নিপীড়নের শিকার হন তিনি। বর্তমানে অশীতিপর (৮১ বছর বয়স) ব্লাটার অবশ্য বিবিসিকে জানিয়েছেন, এ ধরনের অভিযোগ হাস্যকর। অপরদিকে, ওয়েনস্টেইন দাবি করেছেন, অভিযোগকারীরা তার সঙ্গে স্বেচ্ছায় বিছানায় গিয়েছেন।
সূত্র : এনবিটি