এস. এম. মনিরুজ্জামান মিলন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁওয়ে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে ফিরোজ আহম্মেদ পাপ্পু নামে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউপির ১৫৭নং বাসুদেবপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনাটি ঘটে।
এ বিষয়ে অভিভাবক, পরিচালনা কমিটি ও সুশীল সমাজের পক্ষে দীনেশ চন্দ্র রায় নামে এক ব্যক্তি সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
দীনেশ চন্দ্র রায়ের লিখিত অভিযোগে জানা যায়, গত ১৮ অক্টোবর ওই বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক ফিরোজ আহম্মেদ পাপ্পু শ্রেণীকক্ষ পরিষ্কারের কথা বলে চতুর্থ শ্রেণীর এক ছাত্রীকে রেখে সকল শিক্ষার্থীকে বের করে দেন। ঐ ছাত্রীর ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও শ্রেণীকক্ষ ঝাড়ু দেয়ার কথা বলে রুমের ভিতরে জোর করে নিয়ে যান। ফিরোজ আহম্মেদ ঝাড়ু দেয়ার নামে ঐ শিক্ষার্থীর শ্লীলতাহানি (জোর পূর্বক বুকে জড়িয়ে ধরেন এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে হাত দেন) এবং এই ঘটনা কাউকে না বলার জন্য ঐ ছাত্রীকে হুমকি-ধামকি প্রদান করেন। অভিযুক্ত শিক্ষক এ ধরণের ঘটনা এর আগেও ঘটিয়েছেন বলে তিনি তার অভিযোগে উল্লেখ করেন।
ঘটনার পর ঐ শিক্ষার্থী ভয় ও লজ্জায় বাড়ি গিয়ে কান্নাকাটি করে। কান্নার বিষয়ে জানতে চাইলে সে তার মাকে ঘটনাটি খুলে বলে। বিষয়টি জানাজানি হলে অভিভাবক, এলাকাবাসী ও সুশীল সমাজের লোকজন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জগদীশ চন্দ্র রায়কে বিষয়টি সম্পর্কে অভিযোগ করলে তিনি সত্যতা স্বীকার করেন।
শনিবার সদর উপজেলার ১৫৭নং বাসুদেবপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, ঐ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসেননি।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক জগদীশ চন্দ্র রায় জানান, এ বিষয়ে তিনি একটি অভিযোগপত্র পেয়েছেন। বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা অফিস তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা রয়েছে।
নির্যাতিত শিক্ষার্থীর বাড়িতে গিয়ে তার মা’র সাথে কথা বললে তিনি জানান, তার মেয়ে বাড়িতে নেই। বিদ্যালয়ে যায়নি এবং সে আর বিদ্যালয়ে যেতে চাইছে না। ঐ দিনের ঘটনা তার মেয়ে তাকে বলেছে এবং বলেছে সে আর বিদ্যালয়ে যেতে চায় না। তাকে ঐ শিক্ষক প্রায়দিন শ্রেণীকক্ষ ঝাড়ু দিতে বলে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার লিয়াকত আলী সরকার জানান, এ জাতীয় একটি অভিযোগপত্র পেয়েছি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাসিমুল বারীকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি ব্যস্ত থাকায় আগামী রবি-সোমবার তদন্তের জন্য ঐ বিদ্যালয়ে যাবেন এবং অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করবেন।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার নাসিমুল বারীর সাথে কথা বললে তিনি জানান, তদন্তের জন্য তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় তদন্ত হয়নি। ২/৩ দিনের মধ্যেই তদন্ত করা হবে।
অভিযুক্ত শিক্ষক ফিরোজ আহম্মেদ পাপ্পুর কাছে উল্লেখিত বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ জাতীয় কোন ঘটনা সেদিন ঘটেনি। তবে ঐ শিক্ষার্থীর কোন সমস্যা থাকতে পারে। সে বিদ্যালয়ে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা মাঠে খেললেও টিফিনের সময় ক্লাসে মন খারাপ করে বসে থাকে। তাকে মাঠে খেলতে যেতে বললেও সে বলে, আমার খেলা ভাল লাগেনা।
দিনেশ চন্দ্র রায় তার লিখিত অভিযোগে বিস্ময় প্রকাশ করে জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ঐসব শিক্ষক নিজেকে রক্ষা করার জন্য নানা মহল থেকে চাপ প্রয়োগ করছে এবং বিষয়টি নিয়ে বিচার থেকে বিরত রাখার জন্য নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন। তারা উল্লেখিত বিষয়টির ন্যয়বিচারের স্বার্থে এবং এলাকার সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশ সেই সাথে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান সুষ্ঠভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে জরুরী ভিত্তিকে ঐ শিক্ষকের শাস্তি ও বিচারের দাবি জানিয়েছেন।