সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১২ নভেম্বরের সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি। দুই বছর পর অনুষ্ঠেয় সমাবেশটিকে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন দলটির নেতারা। বড় ধরনের শোডাউনের মাধ্যমে বিএনপি সরকারের কাছে নিজেদের জনপ্রিয়তা এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে বার্তা দিতে চায়। এ জন্য লক্ষাধিক লোক সমাগমের ওপর জোর দিচ্ছে দলটি।
সর্বশেষ গত বছরের ৫ জানুয়ারি নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করেছিল বিএনপি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের দুই বছর পূর্তিতে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে সমাবেশটি করে বিএনপি। তারা ওই সমাবেশটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করতে চেয়েছিল, পরে প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় নয়াপল্টনে সমাবেশ করে। এবারের সমাবেশ দুই বছর পর হওয়ায় এবং বছরখানেকের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন থাকায় বিএনপি এই সমাবেশটিকে যেকোনো মূল্যে সফল করতে চাইছে।
সমাবেশ ঘিরে বিএনপির নেতা-কর্মীরাও অনেক বেশি তৎপরতা হতে শুরু করেছেন। গত কয়েক দিনে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের ভিড় লক্ষ করা গেছে। গত কয়েক দিনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সংবাদ সম্মেলন ও ব্রিফিংয়ে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক বেশি। নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য মাঠের রাজনীতিতে আরও সক্রিয় হবে। এ ছাড়া সরকারও বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করতে দিয়ে ‘গণতান্ত্রিক পরিবেশ’ ফিরিয়ে আনবে।
এই সমাবেশে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের জেলার নেতা কর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে এবারের সমাবেশে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও নেতা কর্মীরা আসবেন বলে ধারণা করছে বিএনপি।
গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ১২ তারিখের সমাবেশের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। দলের বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরা যৌথ সভা করছেন। কীভাবে সমাবেশ শান্তিপূর্ণ ও সফল করা যায়, তা এখন মুখ্য বিষয়। তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) আছাদুজ্জামান মিয়া তাদের সমাবেশ করার জন্য আশ্বাস দিয়েছেন এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন।
সমাবেশের প্রস্তুতি এবং জনসমাগমের বিষয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার যদি অগণতান্ত্রিক কোনো কার্যকলাপ না করে, তাহলে বড় ধরনের লোক সমাগম হবে। সরকার কোনো শর্ত দিয়ে সমাবেশ সীমাবদ্ধ করবে কি না? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার দিতে চায় না। সরকার বিরোধী দল দমনে যেসব কর্মকাণ্ড করে, তা গণতান্ত্রিক রীতির অংশ হতে পারে না। সরকারের এসব আচরণ থেকে বিরত থাকা উচিত এবং মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।
বিএনপির সমাবেশ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল। তারা তো সমাবেশ করার অনুমতি পাবেই। ঢাকা শহরে সমাবেশ করলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন ভালো থাকে, সে জন্য মহানগর পুলিশের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের সমাবেশ করার অধিকার আছে। কিন্তু সমস্যা হলো, অতীতে রাজনীতির নামে বিএনপি যেভাবে সন্ত্রাস করেছে, সেটাই মূল ভয়। সামনে নির্বাচন আসছে, অবশ্যই ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি করা হবে। সকল রাজনৈতিক দল যেন সমান অধিকার ভোগ করে, সেটা নিশ্চিত করা হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য সমাবেশ বিষয়ে বলছেন, বিএনপির সমাবেশে জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ হয়। এখানে আয়োজন করার কিছু নেই। সরকার বিরোধী দলকে গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা থেকে বিরত রেখেছে। এর ফলে মানুষও তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা এবং সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের নিজেদের বঞ্চনা বোধ থেকে এবার সমাবেশে জনগণের ঢল নামবে। এ ছাড়া সরকার আবারও অন্য কোনো উপায়ে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছে কি না, এটা নিয়েও দেশের জনগণ অনেক বেশি উদ্বিগ্ন রয়েছে। এ কারণেও ব্যাপক জনসমাবেশ হবে। ঢাকার বাইরে থেকে মানুষ না এলেও এবার সাধারণ মানুষের উপস্থিতি অন্য সব সময়ের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সমাবেশে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকবে। সরকারের শোষণ, নিপীড়নের কারণে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। এ কারণে মানুষ বিএনপির সমাবেশে অংশগ্রহণ করবে। এই সমাবেশে নেতা–কর্মীদের উপস্থিতি তো থাকবেই, তবে জনগণের উপস্থিতি অন্য সব সময়ের তুলনায় অনেক বেশি হবে।
প্রতিটি সমাবেশে বিপুল জনসমাবেশ হয় উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লোকে বলেন, সমাবেশের জন্য স্বাভাবিক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এটা মূলত ৭ নভেম্বর উপলক্ষে সমাবেশ, অন্য কিছু না। এই সরকার আসার পর থেকে যেসব সমাবেশ করা হয়েছে, প্রায় প্রতিটিতেই বিপুল জনসমাগম হয়েছে। এবারও তেমনই হবে।
৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি’ দিবস উপলক্ষে আগামী ১২ তারিখের সমাবেশটি আয়োজিত হলেও বিএনপি এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে চায়। এ জন্য গত বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একটি যৌথ সভা করে দলটি। সভায় ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর এবং নরসিংদী জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া বিএনপির সহযোগী সংগঠন এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতারাও যৌথ সভায় অংশ নেন।