এর আগেও একবার পদত্যাগী কোচের মত বদলেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। কিন্তু এবার? আবারও কি বিসিবি চেষ্টা করবে বাংলাদেশের সফলতম এই কোচকে ধরে রাখার? নাকি গাইবে, যে চলে যেতে চায়, তা আগলে বসে রইব কত আর!
চণ্ডিকা হাথুরুসিংহের বাংলাদেশ অধ্যায় তবে শেষই হয়ে গেল! ১৫ নভেম্বর তাঁর ঢাকায় আসার কথা। কিন্তু এলেও যে হাথুরুর সিদ্ধান্তের নড়চড় হবে, সেটির সম্ভাবনা সীমিত। ডিন জোনস ও জেসন গিলেস্পিকে টপকে তাঁর শ্রীলঙ্কার প্রধান কোচ হওয়া অনেকটাই নিশ্চিত।
বাংলাদেশ দলের প্রতাপশালী কোচ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া হাথুরু হঠাৎ কেন এই সিদ্ধান্ত নিলেন, সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। এ নিয়ে কিছু বলতে চান না বিসিবির দায়িত্বশীল কর্তা, টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউই। তবে কিছু বিষয় পরিষ্কার, সিনিয়র খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাথুরুর দূরত্ব বেড়ে চলেছিল ক্রমেই। হাথুরু সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেয়েছেন গত আগস্টে অস্ট্রেলিয়া সিরিজে।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে মুমিনুল হককে স্কোয়াডের বাইরে রেখে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। সংবাদমাধ্যমের চাপ তো ছিলই, দলের চার সিনিয়র খেলোয়াড় পর্যন্ত মুমিনুলকে দলে রাখা নিয়ে কথা বলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের সঙ্গে। শেষ মুহূর্তে মোসাদ্দেক হোসেনের চোখের সংক্রমণে দলে সুযোগ পান মুমিনুল। সাধারণত নিজের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হতে দেখে অভ্যস্ত হাথুরু এ ঘটনায় বড় ধাক্কা খান। সিরিজের আগমুহূর্তে এক টুইট বার্তায় লিখেছিলেন, ‘কঠিন টানাপোড়েন। একটা পুরো জাতির আবেগ মেনে নেব, নাকি সেরা সমন্বয়টা বেছে নেব!’
মুশফিকুর রহিমকে একটা স্থিতিশীল জায়গা থেকে নাড়িয়ে দেওয়া, মাশরাফি বিন মুর্তজাকে টি-টোয়েন্টি থেকে দূরে সরে যেতে চাপ সৃষ্টি করা, নাসির হোসেন-মুমিনুলকে প্রায় অকেজো বানিয়ে ফেলা, ধারাবাহিক ছন্দে না থাকার পরও কিছু খেলোয়াড়ের কাঁধে আস্থার হাত রাখা, আবার ছন্দ হারিয়ে ফেলা একজন খেলোয়াড়ের খারাপ সময় গেলে তাঁকে ফর্ম ফিরে পেতে প্রয়োজনীয় সাহায্য না করে দূরে ঠেলে দেওয়া, নেটে বোলিং-ব্যাটিং দেখে আকস্মিক দলে সুযোগ দেওয়া—এমন নানা বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে সংবাদমাধ্যমে হাথুরুকে নিয়ে লেখালেখি হয়েছে প্রচুর।
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান কাল তাই বললেন, হাথুরুর এ সিদ্ধান্তের পেছনে দলের কিছু খেলোয়াড়ের সঙ্গে দূরত্ব ও সংবাদমাধ্যমে লেখালেখির ভূমিকা থাকতে পারে, ‘মিডিয়ার তো অনেক খুশি হওয়ার কথা, ও চলে যাচ্ছে। ক্রিকেটারদেরও অনেকে খুশি হবে। অবশ্য অনেকে বলবে ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ দলের জন্য ধাক্কা কি না জানি না। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আমাদের একটা পরিকল্পনা ছিল, সেটি বাধাগ্রস্ত হবে।’
নাজমুল এ-ও মনে করেন, ‘আবেগপ্রবণ’ সিদ্ধান্ত হতে পারে হাথুরুর।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাজে খেলায় কদিন আগে বিসিবি সভাপতি বলেছিলেন, কেন খারাপ খেলল দল সেটি জানতে প্রয়োজনে ডেকে আনা হবে ছুটিতে থাকা বাংলাদেশ কোচকে। এটিও নাকি স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেননি হাথুরু।
হাথুরুকে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধাই দিয়েছে বিসিবি। বলা যায়, গত তিন বছরে তিনি যেটাই চেয়েছেন, সেটাই পেয়েছেন। সেটির কারণও ছিল। হাথুরুর অধীনেই বাংলাদেশ দল পেয়েছে অবিশ্বাস্য কিছু সাফল্য। ঘরের মাঠে টানা পাঁচটি ওয়ানডে সিরিজ জেতা। ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলের বিপক্ষে সিরিজ জয়, বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা, চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে যাওয়া, টেস্টে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কাকে হারানো—হাথুরুর অবদানকে ভালোভাবেই পুরস্কৃত করেছে বিসিবি।
তা হাথুরুকে ধরে রাখতে এবার বিসিবি কী উদ্যোগ নেবে? কাল এ নিয়ে নাজমুল বলেছেন, ‘ওর সঙ্গে কথা বলতে হবে। অনেক সময় আবেগপ্রবণ হয়ে মানুষ চিঠি পাঠিয়ে দেয়। ও শেষ পর্যন্ত না থাকলে আরেকজন কোচ নিতেই হবে। আরেকজনকে পেতে হবে। ভালো মানের কোচ পাওয়া যায় কি না দেখতে হবে।’ অর্থাৎ বিসিবি এবার তাঁকে ধরে রাখতে মরণপণ চেষ্টা যে করবে না, তার আভাস মিলছে।
বিসিবির পরিচালনা বিভাগের প্রধান আকরাম খান এটি নিয়ে এখনই কিছু বলতে চাইলেন না। তবে হাথুরু যে থাকবেন, বিসিবি সভাপতির মতো তিনিও সেটি আশা করেন না, ‘আমরা তো চাই তাকে রাখতে। ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত যেহেতু ওর সঙ্গে আমাদের চুক্তি। তবে কেউ যদি চলে যেতে চায়, আমরা তাকে আটকাব কী করে? ওর সঙ্গে আমরা যোগাযোগই করতে পারছি না।’
কেউ চলে যেতে চাইলে যে আটকানো যায়, বিসিবি নিজেই তা অতীতে একবার দেখিয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত বোর্ডের যা অবস্থান, তাতে হাথুরুর বিদায়ী সংবর্ধনার জন্য তৈরি হতেই হবে।