সিলেট প্রতিনিধি :: পাথর খেকোদের লোভে সিলেটে পাথর কোয়ারিতে দীর্ঘ হচ্ছে লাশের বহর। মাটি ধসে কিংবা দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে মারা যাচ্ছে শ্রমিক বাড়ছে ঘরে ঘরে কান্না। শ্রমিকদের এ কান্নার শেষ কোথায়। শুধু চলতি বছরে বিভিন্ন কোয়ারি ও টিলা কেটে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের সময় মাটি চাপায় মারা গেছেন ৩৫ জন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার সকালে কানাইঘাটের মোলাগুল বাংলাটিলা এলাকায় লোভাছড়া নদীর তীর কেটে পাথর উত্তোলনের সময় মাটি ধসে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের সাথে রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালীরা জড়িত থাকায় প্রশাসনও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না বলে অভিযোগ করছেন পরিবেশবাদীরা। তবে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, স্থানীয় জনসাধারণকে সচেতন করা না গেলে শুধুমাত্র অভিযান চালিয়ে প্রকৃতি ধ্বংসের এই তান্ডব বন্ধ করা সম্ভব হবে না।
সিলেটের জাফলং, ভোলাগঞ্জ, শাহ আরফিন টিলা, বিছনাকান্দি, লোভাছড়াসহ জেলার বিভিন্ন কোয়ারি থেকে দীর্ঘদিন থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করে আসছে প্রভাবশালী চক্র। অভিযোগ রয়েছে ওই চক্রটিকে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। ফলে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় শ্রমিকদের প্রাণহানীর ঘটনা ঘটলেও তা সহজেই ধামাচাপা দিয়ে দেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিবেশ ধ্বংস করে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধে মাঝে মধ্যে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন অভিযান চালালে দু’একদিন বন্ধ থাকে পাথর উত্তোলন। এরপর আবারও শুরু হয় যথারীতি পাথর উত্তোলনের মহোৎসব। বেপরোয়াভাবে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণহানীর ঘটনা ঘটে শ্রমিকদের।
চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শাহ আরফিন টিলা কেটে পাথর উত্তোলনের সময় ভূমি ধসে পাঁচ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। একই টিলা থেকে পাথর তুলতে গিয়ে চলতি বছরে প্রাণহানী ঘটে আরও ৬ জনের।
এছাড়া গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি, জাফলং, কানাইঘাটের লোভাছড়া কোয়ারিতে চলতি বছরে আরও ২৪ জনের প্রাণহানী ঘটে।
অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের ফলে সিলেটের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র প্রকৃতিকন্যা খ্যাত জাফলং এখন বিরাণভূমি।
জাফলংকে ইতোমধ্যে ‘পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু থেমে নেই পাথর উত্তোলনের নামে পরিবেশ ধ্বংসের তান্ডবলীলা। এনিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশবাদীরা আন্দোলন করে আসছেন। কিন্তু কোনভাবেই রক্ষা করা যাচ্ছে না জাফলংকে।
পরিবেশ ধবংসের জন্য পরিবেশবাদীরা দায়ি করছেন এর নেপথ্যে থাকা রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কীম বলেন, পরিবেশ ধ্বংস করে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের নেপথ্যে রয়েছেন রাজনৈতিক নেতারা। ফলে প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নিতে চায় না। মাঝে মধ্যে দু’একটি অভিযান চালানো হলেও তা ফলপ্রসু হচ্ছে না। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে অল্পদিনে কোটিপতি হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় রাজনৈতিক নেতারাও কোয়ারিগুলোতে প্রভাব খাটাচ্ছেন।
কোয়ারিগুলোতে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন পুরোপুরি বন্ধ না হওয়ার কথা স্বীকার করে সিলেটের পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, জেলা ও পুলিশ প্রশাসন মিলে কোয়ারিগুলোতে অভিযান চালায়। কিন্তু অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন পুরোপুরি সম্ভব হচ্ছে না। জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া পরিবেশ বিধবংসী এই কর্মকান্ড বন্ধ করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশাসনের উদ্যোগে নানা কর্মকান্ড হাতে নেয়া হয়েছে। এই উদ্যোগ সফল হলে পাথর কোয়ারিগুলোর পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব হবে।