আমীন মোহাম্দ
কান্ট্রিকরেসপন্ডেন্ট
সৌদি আরব
রিয়াদ: শুক্রবার ( ২৮ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটা। একে একে রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দুতাবাস প্রাঙ্গনের প্রধান ফটকের সামনে সাতটি দেশের পতাকা এবং ফুল নিয়ে দাড়িয়ে আছে ফুটফুটে সাতটি শিশু। তাদের পাশেই দাড়িয়ে আছেন ওরিয়েন্টাল লেডিস গ্রুপের (OLG) বাংলাদেশ দুতাবাসের প্রথম সচিব (লোকাল) ফারজানা মান্নান। এরপর প্রধান ফটক থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা নিয়ে একে একে দুতাবাস কার্যালয়ে প্রবেশ করেন সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদুত মুহা: শহীদুল ইসলাম, মিসেস শাহনাজ ইসলাম, ভারতের রাষ্ট্রদূত মোঃ হামিদ আলী রাও, মিসেস আছিয়া রাও, নেপালের রাষ্ট্রদূত উদাই রাজা পাণ্ডে মিসেস কল্পনা রিজাল, পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত খোইয়াম আকবর, মিসেস লুবনা খোইয়াম, কাজাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত বিটারসেইব, মিসেস সালতানা, ব্রুনাই এর রাষ্ট্রদূত আবদুল মকিত, মিসেস যালিনা ওমর , ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত এডি বাসকি, ইন্ডা দিয়ানতো।
আর এভাবেই শুরু হয় সাতটি দেশের কুটনৈতিকদের স্ত্রী এবং নারী কুটনৈতিকদের নিয়ে গঠিত চ্যারিটেবল (দাতব্য) সংগঠন ওরিয়েন্টাল লেডিস গ্রুপের (OLG) বার্ষিক ফ্যামিলি ইভেন্টের দিনটি।দিনটি উপলক্ষ্যে রিয়াদ দুতাবাস প্রাঙ্গনে বসে জমজমাট মেলা।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ দূতাবাসের শিশুরা সদস্য দেশসমুহের পতাকার রঙ ও ডিজাইনের জামদানি শাড়ি পরে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানায় যা ছিল অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন।
দুতাবাসের কনফারেন্স হলে কুশল বিনিময় করে পতাকাবাহী শিশুদের নিয়ে সস্ত্রীক ফটোসেশন এবং মেলার সবগুলো স্টল পরিদর্শনে সস্ত্রীক অংশ নেন সাত দেশের রাষ্ট্রদুতগণ। এর পর পরই জনসাধারণের জন্য উম্মোক্ত করা হয় মেলাস্থল।
এরপর আগত অতিথিদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদুত মুহা: শহীদুল ইসলাম পত্মী ও ওএলজি’র পৃষ্টপোষক মিসেস শাহনাজ ইসলাম।
শাহনাজ ইসলাম তার বক্তব্যে মেলায় স্বতস্ফুর্ত অংশ গ্রহণ করায় উপস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশি এবং সদস্য দেশগুলোর নাগরিকদের ধন্যবাদ জানান।
ওএলজি একটি চ্যারিটাবল (দাতব্য) সংগঠন উল্লেখ্য করে এটিকে আরও সক্রিয় রাখতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান শাহনাজ ইয়াসমিন।
ওরিয়েন্টাল লেডিস গ্রুপের (ওএলজি) প্রেসিডেন্ট ফারজানা মান্নান বলেন, ওরিয়েন্টাল লেডিস গ্রুপের সদস্য দেশ হিসাবে বাংলাদেশের জন্য এবারের মেলার আয়োজনটা ছিল অত্যন্ত গর্বের এবং আনন্দের। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে ব্যাপক পরিসরে তুলে ধরার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কমিউনিটির জন্য এটা ছিল অনন্য এক সুযোগ।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ কমিউনিটির সুশৃঙ্খল এবং স্বতস্ফুর্ত উপস্থিতি অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। এ মেলার মাধ্যমে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্ব যেমন জোরদার হয় তেমনি দেশগুলির সংস্কৃতি কৃষ্টি ঐতিহ্য জানবার সুযোগ ঘটে।
ফারজানা মান্নান বলেন, এই মেলা থেকে প্রাপ্ত আয়ের পুরাটাই চ্যারিটেবল (দাতব্য) খাতে অর্থাৎ বাংলাদেশের দরিদ্র ও দুস্থদের জন্য ব্যয় করা হবে।
অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা এবং রাষ্ট্রদুতগণ ও আমন্ত্রিত অতিথিরা বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। বিকাল চারটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত চলে মেলা। সন্ধ্যা সাতটায় অনুষ্ঠিত হয় আকর্ষণীয় র্্যাফেল ড্র। ড্রতে বিজয়ীদের জন্য ছিলো এলইডি টিভি, সোনার রিং, মাইক্রোওভেনসহ অসংখ্য পুরস্কার।
সদস্য দেশ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ব্রুনাই, নেপাল, কাজাকিস্তান এবং ইন্দোনেশিয়ার রাষ্টীয় সাতটি স্টল ছাড়াও মেলায় স্থান পায় ২২টি বানিজ্যিক স্টল।
স্টলগুলোর মধ্যে অনলাইন এক্টিভিস্ট ফোরাম, বাংলার মেলা, লাইবাস, এনজাজ ব্যাংকিং নেপাল ইনভেস্টমেন্ট, ফ্যাশন টেক্স, আটিএল ওয়াল্ড ট্রাভেল কোম্পানি রিয়াদ, জুবাইদাহ ফ্যাশন, নেস্টার ট্রেডিং, সাউথ আফ্রিকা, সি বিউটি পার্লার, মিসেস ছারা সুলতান, বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড কসমেটিকস, এএনবি টেলিমানি, এপারিজ ইন্টারন্যাশনাল, মাকাতা ক্রিস্টাল, টিফফানী এন্ড কোম্পানি, চাইনা টাউন, ঘরোয়া ফুড স্টল, বাংলাদেশ ফুড কর্নার উল্লেখযোগ্য।
সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে কানায় কানায় পুর্ণ হয় মেলা প্রাঙ্গণ। উপস্থিত দর্শনার্থীদের ভাষ্যমতে, সৌদি আরবে বাংলাদেশিদের আয়োজনে এটাই সবচেয়ে জমজমাট এবং আকর্ষনীয় মেলা। যেখান বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রবাসীদের উপস্থিতি ছিলো লক্ষনীয়।
মেলায় সদস্য রাষ্ট্র ছাড়াও শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, সিঙ্গাপুর, দক্ষিন আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত, জেদ্দা বাংলাদেশ কন্স্যুলেটের কনসাল জেনারেল একেএম শহীদুল করিমসহ বিভিন্ন দেশের কুটনৈতিক এবং কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সস্ত্রিক উপস্থিত ছিলেন।