সাকিব হোসেন একটি দুটি নয়, এবার দেশের চারটি সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তিনি এবার বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তিনি বুয়েটে ভর্তি হতে চান। কিন্তু ভর্তির টাকা এখনো জোগাড় করতে পারেননি। তিনি জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের রুকিন্দীপুর গ্রামের চা-বিস্কুটের দোকানদার আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে।
এদিকে মিনারুল ইসলাম এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ সেশনে ভর্তি পরীক্ষায় খ ইউনিটে ২০৬৯তম হয়েছেন। তিনিও টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছেন না। তাঁর বাড়ি রংপুরের কাউনিয়ার নাজিরদহ শিশুবাড়ী কলোনিতে। ছয় ভাইবোনের মধ্যে মিনারুল দ্বিতীয়। তাঁর বাবা আবদুল লতিফ দিনমজুর।
সাকিবের পরিবার সূত্রে জানা যায়, সাকিব জামালগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ গোল্ডেন-৫ পেয়েছিলেন। রাজশাহী কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
সাকিব বলেন, ‘আমার চারটি বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তির সুযোগ হয়েছে। তবে আমি বুয়েটে ভর্তি হতে চাই।’ সাকিবের বাবা আবু বক্কর বলেন, ‘আমি ফুটপাতে চা বিক্রি করে সংসার ও ছেলের উচ্চমাধ্যমিকের খরচ চালিয়েছি। কিন্তু এখন ছেলের ভর্তির টাকা ও লেখাপড়ার খরচা কীভাবে চালাব, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি।’
আক্কেলপুর উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান আছিয়া খানম বলেন, ‘সাকিব আমার প্রতিবেশী। সাকিবের বাবার জমিজমা বলতে বাড়িঘর ছাড়া কিছুই নেই। সাকিবের বাবা জামালগঞ্জ বাজারে চায়ের দোকান করেন। তিনি চায়ের দোকানের আয় রোজগারে সংসার চালান।’
আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালাহউদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, ‘সাকিব তাঁর বাবাকে সঙ্গে নিয়ে আমার কার্যালয়ে এসেছিলেন। সাকিব চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এটি একটি অভাবনীয় সাফল্য।’ উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কমল বলেন, সাকিবের বাবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা পরিষদের তহবিল থেকে পাঁচ হাজার টাকা সহযোগিতা করা হয়েছে।
মিনারুল বলেন, ‘স্কুল-কলেজের শিক্ষকেরা আমাকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। সংসারে অভাবের তাড়নায় কখনো মনে হতো পড়ালেখা ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালাই। কিন্তু পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই। তাই নিজেকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে গ্রামে টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ চালিয়ে এতদূরে এসেছি। কিন্তু এখনো জোগাড় করতে পারিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ফিসহ আনুষঙ্গিক খরচের টাকা। তাই চিন্তিত হয়ে পড়েছি।’
মিনারুলের বাবা আবদুল লতিফের (৬২) ছয় শতক বসতভিটা ছাড়া আর কোনো জমি নেই। বৃদ্ধ বয়সে দিনমজুরির কাজ করে সাত সদস্যের সংসার চালান। বড় ছেলে বিয়ে করে ঢাকায় রিকশা চালান। মিনারুল ছাড়াও তাঁর চার মেয়ে ও এক ছেলে স্থানীয় স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করছেন।
নাজিরদহ একতা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুল কুদ্দুস বসুনিয়া বলেন, মিনারুলের পড়ালেখার প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ রয়েছে। তাঁর উচ্চশিক্ষায় পাড়ি দিতে এখন দরকার একটু সহযোগিতা।