দুই দেশের গোয়েন্দাদের মধ্যে রিয়েল টাইম কমিউনিকেশন তৈরি হলে যে কোন ধরণের সন্ত্রাসবাদ দমন করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশের শীর্ষ স্থানীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। তার ভাষায়, ভারতীয় কেন্দ্রেীয় তদন্তকারি সংস্থা এনআইয়ের গোয়েন্দারা বর্ধমান কাণ্ডের পরপর বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের সঙ্গে যেভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সেটি এক অভাবনীয়। এভাবে দুই দেশের গোয়েন্দাদের মধ্যে যদি রিয়েল টাইম কমিশনিউকেশন তৈরি হয় তবে ভারত কিংবা বাংলাদেশ কোথাও জঙ্গিদের স্থান হবে না। আজ শনিবার সকালে কলকাতার একটি হোটেলে কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম এ কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, তিন দিনের কলকাতার এই সরকারি সফর সফল। তিনি জানান, শুক্রবার সকাল থেকে সল্টলেকের অস্থায়ী এনআইয়ের অফিসে এনআইয়ের গোয়েন্দাদের মাধ্যমে সাজিদ, খালিদ এবং হাকিমকে জেরা করেছেন বাংলাদেশ থেকে আসা এনএসআই, ডিজিএফআই, র্যাব, সিআইডি, পুলিশ সদর দপ্তরের সাতজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা। সাজিদই যে বাংলাদেশের ফেরার জেএববি সদস্য মাসুদ সেটিও স্বীকার করেন ওই শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
মনিরুল ইসলাম কালের কন্ঠকে জানান, মূলত তিনটি বিষয়কে সামনে রেখেই এনআইয়ের মাধ্যমে এমন তদন্ত সফর। এই বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারী ত্রিশালে প্রিজনভ্যান থেকে এক জেএববি সদস্যকে ছিনতাই করে নেওয়ার ঘটনার তদন্ত, জঙ্গিদের উদ্দেশ্য এবং বাংলাদেশে তাদের রুট সম্পর্কে তথ্য নেওয়া। এই তিনটি বিষয়ে প্রকৃত অগ্রগতি সম্পর্কে পুরোটা খুলে না বললেও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা প্রধান জানিয়েছেন, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
এসব তথ্য যথাযথ সময়ে কাজে আসবে। তবে ওই কর্মকর্তা মনে করেন, বাংলাদেশের বড় কোন নেতা-নেত্রীকে টার্গেট করে বর্ধমানে এই ধরণের পরিকল্পনা হয়েছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে না। তবে বাংলাদেশের বোমা বিস্ফোরণ করার পরিকল্পনা ছিল বর্ধমানের এই গ্রুপটির। বর্ধমান যাওয়ার প্রশ্নে মনিরুল ইসলাম বলেছেন, ঘটনাস্থলে যাওয়ার কোন পরিকল্পনা ছিল না আমাদের। তাছাড়াও ঘটনাস্থল থেকে যে নমুনা-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন এনআইয়ের গোয়েন্দারা, সেই সব নমুনা-উপাত্ত কলকাতার এনআইয়ের দপ্তরে।
আজ শনিবার দুপুরের পর আবার এনআইয়ের দপ্তরে এনআইয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশের গোয়েন্দা প্রতিনিধি দলের সসদ্যরা। বৈঠকে এই ঘটনার পরবর্তী পদক্ষেপ সস্পর্কে আলোচনা হয় বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে কলকাতায় আসেন বাংলাদেশের গোয়েন্দা প্রতিনিধি দলের সাত সদস্য। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত তারা এনআইয়ের দপ্তরে দফায় দফায় বৈঠক করেন। গোয়েন্দাদের মধ্যে তথ্য-আদান প্রদান হয়। দুপুর পর্যন্ত কোর্টে তোলার আগে বর্ধমান কান্ডের মূল মাস্টার মাইন্ড বলে সন্দেহভাজন সাজিদ ওরফে মাসুদ, মায়ানমারের বাসিন্দা রহিঙ্গা জঙ্গি খালিদ এবং বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণস্থল থেকে আহত উদ্ধার হওয়া হাকিম গাজিকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন বাংলাদেশের গোয়েন্দারা।
এই প্রসঙ্গে গোয়েন্দা প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, দেখুন সরাসরি জিজ্ঞাসাবাদে আইনি জটিলতা রয়েছে। তাই আমরা এনআইয়ের মাধ্যমে এই জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। আমরা যা জানতে চেয়েছি সেগুলো এনআইয়ের গোয়েন্দারা জেরা করেছেন এবং ওরা যা উত্তর দিয়েছে সেটি এনআইয়ের আমাদের সহযোগী গোয়েন্দারা আমাদের সেটা জানিয়েছেন। তবে এই জিজ্ঞাসাবাদ প্রক্রিয়া অত্যান্ত সুন্দরভাবে এবং সফল বলেই মনে করছেন তিনি।