পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর মানহানি হলে প্রতিবাদ করতে হয়। প্রতিবাদ যথাস্থানে প্রকাশিত না হলে প্রেসকাউন্সিলে মামলা করা যায়। ওই মামলার রায়ে সন্তুুষ্ট না হলে ৫০০/৫০১ ধারায় মানহানি মামলা হয়। কিন্তু সংবাদ প্রকাশের পর কোন সাংবাদিককে ৩৮৫ ধারায় চাঁদাবাজী মামলায় গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ হয়েছে কি না, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এ ছাড়াও শারিরিকভাবে স্বাভাবিক নয়, যার হাঁটতে লাঠি ভর করতে হয়, প্রতিবন্ধি হিসেবে তাকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট তদন্তের প্রয়োজন ছিল, যা করা হয়নি।
৪ নভেম্বর দুপুরে গাজীপুরের স্থানীয় দৈনিক মুক্তসংবাদের প্রধান সম্পাদক সোহরাব হোসেনকে নিজ কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করে গাজীপুর ডিবি পুলিশ। জেলা পুলিশ প্রথমে বলেছিল, তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরবর্তি সময় দেখা যায় ৫৭ ধারা নয়, সম্পাদককে ৩৮৫ ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রতিমাসে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা চাওয়ার অভিযোগে সাব-রেজিষ্টার মনিরুল ইসলাম ওই মামলা করেন। অতঃপর ওই মামলায় গ্রেফতার করে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠায়। বর্তমানে তিনি জেলহাজতে রয়েছেন।
এদিকে স্থানীয় দৈনিক মুক্তসংবাদের প্রধান সম্পাদক গ্রেফতার হওয়ার পর মিডিয়ায় ফলাও ভাবে সংবাদ প্রকাশ বা প্রচার হয়নি। স্থানীয় সংবাদকর্মীদের অভিযোগ, সোহরাব হোসেন তাদের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রাখতেন না। অনেকের বিরুদ্ধে মুক্তসংবাদে সংবাদও প্রকাশ হয়েছে, ফলে তারা সংক্ষুব্ধ। তাদের সংক্ষুব্ধতা যে বিক্ষব্ধতায় পরিণত হয়েছে তা সোহরাব গ্রেফতার থেকে এই পর্যন্ত মিডিয়া কভারেজ দেখেই বুঝা যায়। যাই হউক, ব্যাক্তি সোহরাব বা দৈনিক মুক্তসংবাদ এক বিষয় নয়। ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান এক নয়। মুক্তসংবাদ কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ দিলে মুক্তসংবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়। এতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। এই ধরণের ঘটনায় সোহরাব গ্রেফতার হলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু কোন সহকর্মীকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয় তবে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা সকলেরই কর্তব্য এবং বেশী দায়িত্ব, গণমাধ্যম কর্মীদের।
গাজীপুর জেলায় সাংবাদিক আহত, নিহত ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা ও মোকদ্দমা অনেক হয়েছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজী মামলাও হয়েছে। ওই সব মামলায় সাংবাদিক গ্রেফতারও হয়েছেন। কিন্তু সাংবাদিকদের দায়ের করা চাাঁদাবাজী মামলায় তেমন কেউ গ্রেফতার হয়নি। এছাড়া সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সংবাদের কারণে মিথ্যা নারী নির্যাতন মামলাও হয়েছে। কিন্তু কোন ঘটনায় জোড়ালো প্রতিবাদ হয়নি। সাংবাদিক মারা গেছে কিন্তু তার কফিনে সকলেই ফুল দিতেও যায়নি। বরং ফুল দিতে বাঁধাও এসেছে। এর কারণ, গাজীপুরের সাংবাদিকেরা ঐক্যবদ্ধ নন। এই অবস্থা থেকে বের হতে হলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোন বিকল্প নেই। না হলে সময়ের চাকায় সবাইকেই পিষ্ট হতে হবে এটা পরিস্কার।
সর্বশেষ দৈনিক মুক্তসংবাদ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক সোহরাব হোসেনকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে অভিজ্ঞ মহলে। কারণ কোন সংবাদের জন্য যদি কারো ক্ষতি হয়, মানের হানি হয়, তবে যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করা উচিত। কোন কারণে এর ব্যতয় ঘটালে
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। ফৌজদারী আইনের ৩৮৫ ধারায় চাঁদাবাজীর কথা বলা হয়েছে। কেউ মিথ্যা মামলা করলে তার প্রতিকারও আছে। কিন্তু ওই ধারায় সংবাদ সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত কিছু নেই। কিন্তু সংবাদে মানহানি হলে ৫০০ ও ৫০১ ধারায় মানহানি মামলা করা যায়। এই মামলার বিষয়ে ৪৯৯ ধারায় পর্যাপ্ত ব্যাখা রয়েছে। কোন সংবাদ মানহানি হয় আর কোনটা হয় না, তা ৪৯৯ ধারায় বিস্তারিত বলা হয়েছে। সুতরাং মিথ্যা বা সত্য সংবাদে কেউ সংক্ষুবদ্ধ হলে তার জন্য মানহানি মামলাই শ্রেয় এতে উভয় পক্ষের ন্যায় বিচার নিশ্চিত হয়। কিন্তু ৩৮৫ ধারায় সংবাদ সংক্রান্ত কোন বিষয় নিস্পত্তি করার তেমন কোন আইনী সংযোগ নেই।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোন সংবাদিকের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা হলে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা পর্যন্ত জারীর প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। এর মানে হল, কোন সাংবাদিক যেন হয়রানী না হয়। বিনা বিচারে যেন কোন সাংবাদিক হাজতবাস না করেন তা ভেবেই প্রধানমন্ত্রী এই কাজটি করেছেন। ফলে গাজীপুরের স্থানীয় দৈনিক মুক্তসংবাদের প্রধান সম্পাদক সোহরাব হোসেনকে চাাঁদাবাজী মামলায় গ্রেফতার করার বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদারতাকে ম্লান করে কিনা তা নিয়ে সহজেই প্রশ্ন এসে যায়।
এ ছাড়া মামলার বাদী সাবরেজিষ্টার মনিরুল ইসলাম সরকারি চাকুরীরত অবস্থায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে মামলাটি করেছেন কি না তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ এই মামলার বিষয়ে জেলা রেজিষ্টার গণমাধ্যমকে বলেছেন, তিনি কিছ্ইু জানেন না। এ ছাড়া মামলার সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করায় তদন্তের প্রক্রিয়াটিও প্রশ্নবিদ্ধ।
সুতরাং সোহরাব হোসেন কে সংবাদ সংক্রান্ত বিষয়ে চাঁদাবাজী মামলায় গ্রেফতার করার আইনী প্রক্রিয়াটি যাথাযথ হয়েছে কি না তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন থেকেই যায়।
এমতাবস্থায়, সাংবাদিক সহ সংশ্লিষ্ট সকল মহল আশা করে, কোন কারণে কেউ কোন সংবাদে আহত হলে যথাযথ আইনী প্রক্রিয়ায় বিচার চাওয়া উচিত। এই ক্ষেত্রে আইনী প্রক্রিয়ায় ব্যতয় ঘটলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা যেমন খর্ব হয়, তেমনি উদার মানষিকতার বর্তমান সরকার প্রধানের নিজ ইচ্ছার প্রতিফলনেও বাঁধার সৃষ্টি হয়।
সাধারণ মানুষ মনে করেন, আইন শৃংখলা বাহিনীকে যে কোন অভিযোগ আমলে নিয়ে আসামী গ্রেফতারের প্রক্রিয়াটি আরো সতর্কতার সঙ্গে পরিচালনা করা উচিত। না হলে আইন, আইনকেই ভিন্নপথে পরিচালিত করে আইনী সংঘর্ষ সৃষ্টিতে সক্রিয় হয়ে উঠবে, যা সকলের জন্যই অমঙ্গলজনক।
ড. এ কে এম রিপন আনসারী
এডিটর ইনচীফ
গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম