বায়ুমণ্ডলে রেকর্ড কার্বন নিঃসরণ

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি

90432f9fdd40f886051c573d69cb2035-59f7df60a3b71

 

 

 

 

২০১৬ সালে বিশ্বের বায়ুমণ্ডলে যে পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড জমা হয়েছে, তা বিগত ৮ লাখ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। শুধু গত বছর যে পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়েছে, তা এর আগের ১০ বছরের গড়ের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি। বিশ্বের আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) এসব তথ্যের উল্লেখ করে বলছে, মানবসৃষ্ট দূষণ ও এল নিনোর মতো প্রাকৃতিক কারণে বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বেড়ে গেছে।

বিশ্বের ৫১টি দেশের গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এবারের প্রতিবেদন দিয়েছে ডব্লিউএমও। গতকাল সোমবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, ২০১৬ সালে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস মেশার গড় হার ছিল ৪০৩ দশমিক ৩ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন)। এর আগের বছর এই হার ছিল ৪০০ পিপিএম।

এই প্রতিবেদনে দেশভিত্তিক কার্বন নিঃসরণের তথ্য তুলে ধরা হয়নি। তবে বিশ্বব্যাংকের ২০১৫ সালের গ্লোবাল কার্বন অ্যাটলাস শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই বছর বিশ্বে ৩৬ হাজার ২৬২ মেট্রিক টন কার্বন নিঃসরণ হয়। সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ করেছিল চীন—১০ হাজার ৩৫৭ টন। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত যথাক্রমে ৫ হাজার ৪১৪ টন ও ২ হাজার ২৭৪ টন নিঃসরণ করেছে। বাংলাদেশের নিঃসরণ করা কার্বনের পরিমাণ ছিল ৭৭ টন।

বিশ্বের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকলে এই শতাব্দীর মধ্যে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়তে না দেওয়ার যে পরিকল্পনা জাতিসংঘ নিয়েছিল, তা পূরণ করা অসম্ভব হয়ে যাবে। ব্যর্থ হবে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা।

এ ব্যাপারে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, ‘কার্বন নিঃসরণ যে হারে বাড়ছে বলে এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, তা আমাদের আতঙ্কিত করছে। কেননা, বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের যে ধরন দেখা যাচ্ছে, তা সামনের দিনগুলোয় আরও বাড়বে বলেই এই প্রতিবেদনে স্পষ্ট হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোয় বন্যা, ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মতো দুর্যোগ বাড়বে। এই পরিস্থিতি মাথায় রেখে আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো নিতে হবে।’

ডব্লিউএমওর বৈশ্বিক বায়ুমণ্ডল পর্যবেক্ষণ কর্মসূচির প্রধান ওকসানা তারাসোভা বলেন, এর আগে ১৯৯৭-১৯৯৮ সাল ছিল এল নিনোর বছর। ওই বছরও কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের হার বেড়ে গিয়েছিল। ২০১৬ সালের কার্বন নিঃসরণের হার ছিল ওই বছরের চেয়েও বেশি।

এল নিনো হলো প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের একটি জলবায়ু চক্র। বিশ্বব্যাপী আবহাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে। প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম ক্রান্তীয় অঞ্চলের উষ্ণ জলরাশি যখন বিষুবরেখা ধরে দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে, তখন এল নিনোর সূচনা ঘটে। এ সময় অয়ন বায়ু দুর্বল হয়ে পড়ার পাশাপাশি পুরো উল্টো দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। সেই সঙ্গে মহাসাগরের উষ্ণ তাপমাত্রা ও ঝড়বৃষ্টি দিক পরিবর্তন করে পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়। এল নিনোর সময় তীব্র দাবদাহের কারণে খরাও হয়। এতে উদ্ভিদের কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণের পরিমাণ সীমিত হয়ে পড়ে।

ডব্লিউএমওর তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ বরফ যুগের তুলনায় ৭০ বছর ধরে ১০০ গুণ বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে মিশছে। এই গ্যাসসহ অন্যান্য গ্যাসের এই দ্রুত বৃদ্ধি জলবায়ুতে কল্পনাতীত পরিবর্তন আনতে পারে। এতে বাস্তুসংস্থান ও অর্থনীতিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

এ ব্যাপারে জাতিসংঘের সবুজ জলবায়ু তহবিলের স্বাধীন কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশের জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আহসান উদ্দিন আহম্মেদ  বলেন, ‘বিশ্বে এখন পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের যে ধরনগুলো আমরা দেখতে পাচ্ছি, তার প্রভাব বাংলাদেশেও স্পষ্ট হচ্ছে। এ বছর আমরা দুটি বন্যা ও একটি ঘূর্ণিঝড় দেখলাম। এতে আমাদের যে ফসলের ক্ষতি হলো, তা সামলাতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। দুর্যোগ সামনে বাড়লে এ ধরনের পরিস্থিতি আরও বাড়বে। এর জন্য আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *