সংবাদ সম্মেলনে সিইসির এই বক্তব্যের পর এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিষয়টি আবারও আলোচনায় আসে। ১৮ অক্টোবর ইসির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বৈঠকের পর দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, জিয়াকে নিয়ে সিইসির দেওয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যা পেয়েছেন, কিন্তু তিনি তা বলবেন না।
আওয়ামী লীগ কী ব্যাখ্যা পেয়েছিল, এটি এখন বিভিন্ন দলের নেতা ও সাধারণ মানুষের কাছেও আগ্রহের বিষয়। ওই দিন আওয়ামী লীগকে সিইসি কী ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, তা নিয়ে বৈঠকে উপস্থিত দলটির তিনজন নেতার কাছে জানতে চাওয়া হলে তাঁরা প্রথম আলোকে বলেন, ইসির সংলাপে এ নিয়ে কোনো কথাই হয়নি। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের দিনের কোনো আলোচনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়নি। ওই বক্তব্যের বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ কেবল তাদের ১১ দফা প্রস্তাব ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইসির কী করা দরকার, সে ব্যাপারে কথা বলেছে। নেতাদের কেউ কেউ ইসিকে বিতর্ক এড়ানোর কথা বলেছেন। ইসি বিতর্কিত হলে নির্বাচন সুষ্ঠু করা কঠিন বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন।
অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশনের পক্ষে যাঁরা কথা বলেছেন, তাঁরাও বিএনপির সঙ্গে সংলাপের প্রসঙ্গ টানেননি। আওয়ামী লীগের প্রস্তাব নিয়ে কথা বলেছেন। আর সিইসি তাঁর বক্তব্যেও জিয়ার প্রসঙ্গটি তোলেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগ একটি প্রাচীন দল। কোথায় কী কথা বলতে হয়, তারা তা জানে। স্বাভাবিক কারণেই এ নিয়ে কেউ কোনো কথা ওই বৈঠকে বলেননি।
তাহলে কি আওয়ামী লীগ এ নিয়ে কিছুই জানতে চায়নি?—এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এক নীতিনির্ধারক বলেন, ব্যাপারটি এমন নয়। কোথায় কী হচ্ছে, রাজনৈতিক দল হিসেবে সেটা খোঁজ রাখা আওয়ামী লীগের কাজ। প্রথম দিন সিইসির বক্তব্যের পর এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ তখন পর্যন্ত বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়ার মতো কোনো কারণে খুঁজে পায়নি। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও নিজ থেকে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলেছেন।
আওয়ামী লীগ মূলত দুটি ব্যাখ্যা পেয়েছে বলে জানান ওই নেতা। তিনি বলেন, যখন যে দল সংলাপে অংশ নিয়েছে, সেখানে দলটি সম্পর্কে কিছু না কিছু বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি সম্পর্কে বেশিই বলেছেন। কেননা, এই দলগুলো ক্ষমতায় ছিল। জাসদ, সিপিবিসহ বিভিন্ন দলের ইতিবাচক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বলেছেন। মূলত, সংলাপের পরিবেশকে স্বাভাবিক করতে ও কমিশনের প্রতি দলগুলোকে আস্থাশীল করতে সিইসি এমন বক্তব্য দিয়েছেন বলে আওয়ামী লীগ মনে করেছে। আর দ্বিতীয় ব্যাখ্যা হলো, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা বলতে পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ের কথা বলা হয়েছে। যেটা আওয়ামী লীগও বলে। অর্থাৎ সিইসির বক্তব্যটা এমন ছিল, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর গণতন্ত্র ছিল না। এরপর জিয়াউর রহমান অনেক দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করেন। মূলত, সিইসি সেটিকেই বহুদলীয় গণতন্ত্র বলেছেন।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, তাঁরা যে ব্যাখ্যা পেয়েছেন, তাঁরা চেয়েছেন এটা আওয়ামী লীগ প্রকাশ করবে না। সিইসি চাইলে সেটা বলতে পারেন। গত বৃহস্পতিবার সিইসি সেটা বলেছেন। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ কিছু বলতে চায়নি। এ কারণে সংলাপ শুরুর আগেই দলের সবাই একমত হন, এ নিয়ে বৈঠকে কোনো কথা তাঁরা তুলবেন না। ইসিকে আকারে-ইঙ্গিতে কথাবার্তায় সতর্ক থাকার কথা বলা হবে। বিতর্ক হয়—এমন বিষয় না তোলার পরামর্শ দেওয়া হবে। কিন্তু জিয়াকে নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে সরাসরি কোনো কথা তোলা হবে না।
সিইসির বক্তব্যের সঙ্গে আওয়ামী লীগ একমত কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে দুজন নেতা বলছেন, তাঁরা একমত নন। এটাকে সিইসির নিজস্ব বক্তব্য বলেই ধরে নিয়েছেন। কিন্তু এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হোক, এটা আওয়ামী লীগ চায়নি।
আগে আ.লীগ নেতারা যা বলেছিলেন
অবশ্য ১৫ অক্টোবর সিইসির বক্তব্যের পরদিন রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে ‘জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা’ বলা দলটিকে নির্বাচনে আনার কৌশলও হতে পারে বলে উল্লেখ করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে আওয়ামী লীগ কোনো অনুগ্রহ ও সুবিধা আশা করে না। নিরপেক্ষতা প্রত্যাশা করে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান প্রথম আলোকে বলেছিলেন, সিইসির বক্তব্য আমলে নেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, দেশের মানুষ ভালো করেই জানে, জিয়া বহুদলীয় নয়, বহুদলীয় সামরিক গণতন্ত্র চালু করেছিলেন। তিনি আরও বলেন, হতে পারে সিইসি বিএনপিকে খুশি করার জন্য এসব বলেছেন। এর আগে জাতীয় পার্টিকে খুশি করে বক্তব্য দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ যখন যাবে, তখন তাদেরও খুশি করার জন্য এমন বক্তব্য দিতে পারেন।
দলটির সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘সিইসির বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত নই। বঙ্গবন্ধুর বাকশালে সব দলই ছিল, সুতরাং ওটাকে একদলীয় শাসন বলা যাবে না। বাকশালে সফলতা আসেনি, সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু একজন সামরিক শাসক হ্যাঁ-না ভোট দিয়ে ক্ষমতা দখল করে কীভাবে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তক হন?’