ছোটবেলা থেকে নাচ, গান, আবৃত্তি শিখেছেন জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি। কচিকাঁচা ও ছায়ানটের শিক্ষার্থী হওয়ার সুবাদে বিটিভির শিশুতোষ অনেক অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন তখন থেকেই। এখন ব্যস্ত অভিনয় আর মডেলিংয়ে। নাটক ও সিনেমায় অভিনয়ের পর এ বছর অংশ নেন ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায়। চূড়ান্ত পর্বে প্রথমে ‘মিস বাংলাদেশ’ হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়। পরে অনুষ্ঠানের আয়োজক জানান, ভুল করে তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এরপরে আরেকজনকে বিজয়ী ঘোষণা করায় এ নিয়ে অনেক জলও ঘোলা হয়। সব বিতর্ককে পেছনে ফেলে হিমি আবার কাজে মনোযোগী হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে সঙ্গে আলাপে জানালেন তাঁর কাজ ও পরিকল্পনার কথা।
কিছুদিন বিরতির পর আবার কাজ শুরু করলেন। কেমন লাগছে?
‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার কারণে কিছুদিন সব কাজ বন্ধ রেখেছিলাম। প্রতিযোগিতার নিয়ম অনুযায়ী তখন অন্য কোনো কাজ করতে পারিনি। সাময়িক বিরতির পর এখন আবার কাজ শুরু করেছি। কিছুদিন আগে একটি গানের ভিডিওর কাজ করলাম। কক্সবাজারে এই গানের শুটিং করেছি। এর আগেও একটি গানের ভিডিওতে কাজ করেছিলাম। কিন্তু এবারের কাজটিকে বলা যায় পূর্ণাঙ্গ মিউজিক ভিডিও। শহীদের গাওয়া ‘দূরত্ব’ শিরোনামের এই গানের ভিডিওতে একটি দারুণ গল্প আছে। শিগগিরই ইউটিউবে এটি মুক্তি দেওয়া হবে।
এ ছাড়া এখন আর কী কাজ করছেন?
সামনে খাদি উৎসব আছে। সেখানে র্যাম্পে হাঁটার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ ছাড়া কয়েকটি বিজ্ঞাপনচিত্রের কাজ শেষ করেছি। সেগুলোর পোস্ট প্রডাকশনের কাজ চলছে।
আপনি তো এর আগেও একটি সুন্দরী প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। এরপর এ বছর ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’-এ অংশ নিলেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো প্রতিযোগিতায় কি আর অংশ নেওয়ার ইচ্ছা আছে?
২০১৪ সালে ‘মডেল হান্ট’ নামে একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আমি চ্যম্পিয়ন হয়েছিলাম। যখন জানতে পারলাম, এবার ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ আসরে আমাদের দেশ থেকে অংশ নেওয়ার সুযোগ আছে, তখন নাম লেখালাম। কিন্তু অনুষ্ঠান আয়োজকদের সম্পর্কে তখনো আমি খুব বেশি কিছু জানতাম না। এরপর যদি আমি কোনো দেশীয় বা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিই, তাহলে এর পেছনে কারা আছেন, তাঁদের ব্যবস্থাপনা কেমন—সবকিছু জেনেই যাব।
‘লাভেলো মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’-এর আয়োজকদের সম্পর্কে এখন এমন কী জানতে পেরেছেন, যেটা আগে জানতেন না?
এ প্রতিযোগিতার আয়োজক প্রতিষ্ঠান অন্তর শোবিজের সম্পর্কে আমার পরিষ্কার কোনো ধারণা ছিল না। শুধু জানতাম, তারা এর আগে বিদেশের অনেক তারকাকে বাংলাদেশে এনেছেন। এখানে তাদের নিয়ে অনেক অনুষ্ঠান করেছে। কিছু অনুষ্ঠানে অব্যবস্থাপনাও ছিল। এসব আগে জানা থাকলে এ প্রতিযোগিতায় নাম লেখানোর আগে চিন্তাভাবনা করতাম। ভবিষ্যতে আর এমন ভুল করব না।
আপনি কি মনে করেন এ প্রতিযোগিতায় আপনার প্রতি ন্যায়বিচার করা হয়নি?
এ অনুষ্ঠানে আসার পর আমি অনেক মানুষের সমর্থনও পেয়েছি। ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার পরও এবার ঢাকার বাইরে এক জায়গায় যাচ্ছিলাম। বিমানবন্দরে ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করছি; এমন সময় একজন এসে বললেন, আমার সঙ্গে যা হয়েছে, তার জন্য যেন মন খারাপ না করি। অপরিচিত এমন অনেক মানুষের ভালোবাসা আর শুভকামনায় আমি সত্যি অভিভূত। দর্শকদের সমর্থন সব সময় আমার সঙ্গে আছে। আর তাঁরা আমাকে পছন্দ করেন, এটা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।
আপনার মনে কোনো আফসোস আছে?
না, আফসোস ঠিক নেই।
শেষ পর্যন্ত জেসিয়া ইসলামকে ‘মিস বাংলাদেশ’ ঘোষণা করা হলো। ইতিমধ্যে তিনি ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ প্রতিযোগিতার মূল আসরে যোগ দিতে চীনে গেছেন।
জেসিয়ার জন্য অনেক শুভকামনা। আমরা সবাই তো সেই প্রতিযোগিতায় সেরা হওয়ার জন্যই গিয়েছিলাম। প্রতিনিয়ত সবাই নিজেকে প্রমাণের চেষ্টা করেছি। এখন অনেকে জেসিয়াকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছেন। আমি বলব, এটা একেবারেই ঠিক নয়। সবার মনে রাখতে হবে, সে বিশ্ব আসরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। দেশের মানুষের উচিত তাকে সমর্থন করা। আর জেসিয়াকে বলতে চাই, তারকাদের নিয়ে অনেক কথা হয়। সেসব ঠান্ডা মাথায় ম্যানেজ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। আমি আশা করি, জেসিয়া বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে সম্মানিত করবে।
এবার আপনার পড়াশোনার খবর বলুন।
আমি এবার উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পাস করেছি। নভেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে পরীক্ষা দেব। ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ প্রতিযোগিতায় থাকাকালীন ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালোভাবে নিতে পারিনি। ওই সময়টায় সরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা মিস করেছি। আইবিএর পাশাপাশি তাই বেসরকারি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়েও পরীক্ষা দেব।
তাহলে তো হাতে সময় খুব কম। ভালোভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিন, প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
হ্যাঁ, সময় একেবারেই নেই। প্রতিবারই আমার পরীক্ষার আগে এমন অবস্থা হয়। এসএসসি পরীক্ষার আগে ‘মডেল হান্ট’ প্রতিযোগিতা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। আর এসএসসি পরীক্ষার আগে ছিল ‘হঠাৎ দেখা’ সিনেমার শুটিং ও প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ততা। এবারও তাই। তবে সবকিছু করেই পড়াশোনাটা ঠিকভাবে চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। এ জন্য পরীক্ষার ফলও ভালো হয়েছে।