১২ সেপ্টেম্বর। রাজধানী ঢাকার মিরপুরের কাজীপাড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া একজন ছাত্র। মা আর ভাইয়ের সঙ্গে রাস্তা পারাপারের সময় ঘটনাস্থলেই নিহত হয় সে। তার মতো প্রায়ই এমন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা। প্রতি সপ্তাহেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এমন ধরনের দুর্ঘটনার সংবাদ গণমাধ্যমে চোখে পড়ে। দেশে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বছরের পর বছর বাড়ছে কিন্তু দুর্ঘটনা বাড়লেও সাধারণ মানুষ হিসেবে আমাদের সচেতনতার অভাবে মারাত্মক সব দুর্ঘটনা ঘটছে।
সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামছে না
গত ছয় মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন দুই হাজারের বেশি ব্যক্তি। এ সময় প্রতিদিন গড়ে ৯ জনের বেশি প্রাণ ঝরেছে সড়কে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সাম্প্রতিক গবেষণায় সড়ক দুর্ঘটনার সবচেয়ে বড় শিকার হিসেবে পথচারীদের কথা উল্লেখ আছে। নিহত ব্যক্তিদের ৪১ শতাংশ পথচারী। পথচারীদের বিশাল অংশই স্কুলগামী শিক্ষার্থী।
দুর্ঘটনা এড়ানোর উপায়
দুর্ঘটনা এড়ানোর উপায় কী, তা জিজ্ঞেস করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) প্রবীর কুমার রায় জানান, বেশির ভাগ সড়ক দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ হচ্ছে অসচেতনতা। ফুটপাত ছেড়ে রাস্তা হেঁটে চলা, ওভারব্রিজ-আন্ডারপাস-জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার না করায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি প্রতিনিয়ত বাড়ছে কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অনেক ক্ষেত্রেই নাগরিকদের বাধ্য করছেন নিয়ম পালন করতে, কিন্তু নাগরিক নৈতিকতা ও সচেতনতা না বাড়ালে কেউ এমন দুর্ঘটনা কমাতে পারবে না। এই পুলিশ কর্মকর্তা রাস্তা পারাপারে চোখ-কান খোলা রেখে সচেতন ভূমিকার ওপর গুরুত্ব দেন। রাস্তা পার হওয়ার সময় যে বিষয়গুলোর দিকে তিনি খেয়াল রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন—
- কোনোভাবেই ফুটপাত ছেড়ে রাস্তায় হাঁটবেন না। যেখানে ফুটপাত নেই, সেখানে অবশ্যই সামনে-পেছনে তাকিয়ে, খেয়াল রেখে রাস্তায় চলাচল করুন।
- রাস্তায় চলাচলের সময় কখনোই মুঠোফোন ব্যবহার করবেন না। ফোন কিংবা খুদে বার্তা পাঠানোর প্রয়োজন হলে এক পাশে দাঁড়িয়ে নিরাপদ স্থান থেকে মুঠোফোন ব্যবহার করুন।
- ওভারব্রিজ-আন্ডারপাস আর জেব্রা ক্রসিং অবশ্যই ব্যবহার করুন। সন্তান ও শিশু-কিশোরদের এসব ব্যবহার করতে
উৎসাহ দিন। - যেখানে ফুট ওভারব্রিজ-আন্ডারপাস-জেব্রা ক্রসিং নেই, সেখানে পুলিশ কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সহায়তা নিয়ে রাস্তা পার হবেন।
- রাস্তা পার হওয়ার সময় অবশ্যই সেই চিরায়ত নিয়ম প্রথমে ডানে, তারপরে বাঁয়ে; তারপরে পেছনে, তারপরে সামনে, সব শেষে ডানে তাকিয়ে রাস্তা পার হোন।
- চৌরাস্তা কিংবা যেখানে রাস্তায় ডিভাইডার নেই, সেখানে খুবই সতর্কভাবে রাস্তা পার হোন।
- আপনার থেকে যানবাহন কত দূরে আছে, কত দ্রুত চলছে, তা বুঝে সচেতনভাবে রাস্তা পার হবেন।
- নারী ও শিশুদের নিয়ে রাস্তা পার হওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিন।
- দুই বা ততোধিক শিশু-কিশোরকে রাস্তা পার করানোর সময় একজন একজন করে হাত ধরে রাস্তা পার করুন। শিশুদের কোনোভাবে রাস্তায় দৌড় দিতে উৎসাহ দেবেন না।
- শিশু-কিশোরদের একা রাস্তা পার হওয়া উচিত নয়, এ ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক কোনো মানুষকে অনুরোধ করে রাস্তা পার হতে হবে।
- ভারী জিনিসপত্র কিংবা স্কুলব্যাগ নিয়ে কখনোই রাস্তার মাঝখান দিয়ে দৌড়ে পার হওয়া উচিত নয়।