স্বাস্থ্যহানি ঘটে কিংবা শরীরের জন্য ক্ষতিকর, এমন যেকোনো কিছু আমরা এড়িয়ে চলি। আবার এমন অনেক খাবার সম্পর্কে আমাদের আছে ইতিবাচক ধারণা। বিজ্ঞান কিন্তু বলছে, অতিরিক্ত যেকোনো কিছুই খারাপ। নিরীহ বলে বিবেচিত এমন অনেক খাবারই হতে পারে মৃত্যুর কারণ। যদি সেটা মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করেন। আসুন, জেনে নিই এমন কিছু খাবার বা পানীয়র কথা, যেগুলো আপাত নিরীহ হলেও হতে পারে মৃত্যুর কারণ:
৬ লিটার পানি ‘আততায়ী’
পানির অপর নাম জীবন। তবে সীমা অতিক্রম করলে মরণ! শরীরের পানির অভাব পূরণে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ লিটার পানি করলেই চলে। এখন ১৬৫ পাউন্ড (৭৪.৮ কেজি) ওজনের কারও যদি প্রতিদিন ৬ লিটার করে পানি পানের অভ্যাস থাকে? তাহলে সেটা অভ্যাস নয়, বদভ্যাস এবং প্রাণ বাঁচাতে আজই সীমার মধ্যে চলে আসুন। যুক্তরাষ্ট্রের ‘কেমিস্ট্রি সোসাইটি’র মতে, ১৬৫ পাউন্ড ওজনের কেউ প্রতিদিন ৬ লিটার করে পানি খেলে তা মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।
অতিরিক্ত পানি শরীরে জমা হওয়া লবণের সঙ্গে খুব বিপজ্জনক মাত্রায় মিশে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যার অপর নাম, ‘হাইপোন্যাট্রেমিয়া’। এতে মস্তিষ্কের কোষগুলো ফুলে ওঠে এবং বমি বমি ভাব ছাড়াও শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয়। ২০০৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি রেডিও স্টেশনে পানি পানের প্রতিযোগিতায় প্রায় ৬ লিটারের মতো পানি করে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন জেনিফার স্ট্রেইঞ্জ। বমি এবং প্রচণ্ড মাথাব্যথা নিয়ে বাসায় ফেরার পর তিনি মারা যান।
কফি মাত্র ৭০ কাপ!
শরীরে অতিমাত্রায় ক্যাফেইনের আধিক্য ঘটলে বুক ধড়ফড়ানি বেড়ে যায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে ‘হার্ট প্যালপিটেইশন’। এতে হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন অনিয়মিত হয়ে পড়ে, যা গড়াতে পারে ‘হার্ট অ্যাটাক’ কিংবা মৃত্যু পর্যন্ত! এখন প্রশ্ন হলো, ঠিক কী পরিমাণ ক্যাফেইন মৃত্যু ডেকে আনতে পারে?
ইউটিউবে ভীষণ জনপ্রিয় বিজ্ঞানভিত্তিক চ্যানেল ‘এএসএপি সায়েন্স’ জানাচ্ছে, যমদূতের সঙ্গে এ প্রক্রিয়ায় সাক্ষাৎ করতে হলে আপনাকে দিন-রাত মিলিয়ে ঘণ্টায় তিন কাপ করে কফি খেতে হবে। ২৪ ঘণ্টার হিসেবে মোট ৭২ কাপ কফি। চ্যানেলটির সহপ্রতিষ্ঠাতা মিচেল মোফিটের মতে, ‘এ পরিমাণ কফি আপনার প্রতি কিলোগ্রাম ওজনের বিপরীতে প্রায় ১৫০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন উৎপাদন করবে।’ তাঁর ব্যাখ্যা, ১৪৫ পাউন্ড ওজনের কেউ দিন-রাত মিলিয়ে ন্যূনতম ৭০ কাপ কফি খেলেই মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে। তবে কাপের সংখ্যাটা নির্ভর করছে কফির জাত এবং বানানোর প্রক্রিয়ার ওপর।
চকলেটে সাবধান
চকলেট দেখলে অনেকের জিবে জল আসে। মেয়েদের ক্ষেত্রে এ প্রবণতা একটু বেশি। চকলেটে পুষ্টি কম নেই। খান ঠিক আছে, তবে সীমা অতিক্রম করবেন না। চকলেট ‘বার’-এ থাকে বিষাক্ত থিওব্রোমাইন। চকলেট তৈরি হয় ‘কোকোয়া’র বীজ থেকে। এই কোকোয়া বীজে থাকে থিওব্রোমাইন অ্যালকালয়েড। থিওব্রোমাইন এমনিতে ছোটখাটো পশুপাখিকে মেরে ফেলতে পারলেও হজমশক্তি ভালো হওয়ায় আমরা বেঁচে যাই। তবে পরিমাণটা বেশি হলে নিস্তার নেই। যেমন ধরুন, এক বসায় ৮৫টি চকলেট ‘বার’ সাবাড় করে দিলে মারাও যেতে পারেন! অর্থাৎ প্রতি কিলোগ্রামে ১০০০ মিলিগ্রাম থিওব্রোমাইন গ্রহণ করলে মৃত্যু ঘটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
আপেল ও চেরি ফলের বীজ জীবনঘাতী
কথায় আছে, ‘অ্যান অ্যাপল অ্যা ডে কিপস দ্য ডক্টর অ্যাওয়ে’। সত্যিই আপেল ভীষণ পুষ্টিকর ফল আর উপাদেয়ও। আবার একই সঙ্গে ফলটি হতে পারে জীবনঘাতী! এর বীজ খেয়ে ফেললে বিপদে পড়তে পারেন। আপেলের বীজ শরীরের মধ্যে ‘হাইড্রোজেন সায়ানাইড’-এ পরিণত হয়। এই বিষাক্ত জিনিসটি মানুষের শরীরে বেশ দ্রুত কাজ করে, যে কারণে বমি বমি ভাব থেকে শুরু করে কিডনি পর্যন্ত বিকল হতে পারে! বিজনেস ইনসাইডার বলছে, আপেলের সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপারটি হলো, একটানা ন্যূনতম ২২টি আপেলের বীজ খেয়ে ফেললে মৃত্যু অস্বাভাবিক কিছু নয়।
চেরি ফলের বিপদ আরও বেশি। ন্যূনতম দুটি চেরি ফলের বীজে যে পরিমাণ ‘সায়ানাইড’ থাকে, তা একজন মানুষের মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। ‘সায়ানাইড’ আমাদের শরীরে কোষের অক্সিজেন ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করে। গত জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যের ল্যাঙ্কাশায়ারের এক ব্যক্তি দুটি চেরি ফলের বীজ খেয়ে ফেলার পর ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। পরে হাসপাতালে গিয়ে প্রাণে বেঁচে যান।
শেষ কথা
অতিরিক্ত যেকোনো কিছুই খারাপ। যেমন ধরুন, টানা ১৩ পেয়ালা মদ খেলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা নষ্ট হতে পারে, যার পরিণতি মৃত্যু। কিংবা ১৫ মিনিটে ৬৮০ কিলোগ্রাম মারিজুয়ানা সেবনে একই পরিণতি ঘটতে পারে। যদিও এটা বাস্তবে কতটুকু সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিন্তু টানা ১১ দিনের বেশি না ঘুমানোর খেসারত গুনে মৃত্যুর ঘটনা আছে। আবার ১৮৫-২০০ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ আপনার জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। অর্থাৎ শুধু খাবার নয়, আসলে অতিরিক্ত যেকোনো কিছুই জীবনঘাতী। তাই সীমার মধ্যে থাকুন; জানেন তো, নিয়ন্ত্রণই জীবন।