হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

Slider রংপুর

IMG_20171023_135321_739

এস. এম. মনিরুজ্জামান মিলন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার সেন্টারে দায়িত্বরত উপ-সহকারী উদ্যান কর্মকর্তা মো. এজারউদ্দীন সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

বছরব্যাপী পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের অনিয়মিত শ্রমিকের মজুরী, বছরব্যাপী ফল উৎপাদন প্রকল্পের সিএইচপির সম্মানী ভাতায় অনিয়ম, প্রকল্পের প্রদর্শনীর মালামাল সরবরাহে অনিয়ম, ৭শ আমের চারা নিজ বাড়িতে নেয়া, ভিয়েতনামী নারিকেলের চারায় অনিয়ম সহ অভিযোগের যেন শেষ নেই তার বিরুদ্ধে।

বছরব্যাপী পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের কমিউনিটি হর্টিকালচার প্রমোটর (সিএইচপি) ইদ্রিস আলী লিখিত অভিযোগে জানান, ঐ প্রকল্পের সিএইচপি হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন তার স্বাক্ষর জাল করে ৩ হাজার টাকা করে ৭ মাসের সম্মানীর টাকা আত্মসাত করেন মো. এজারউদ্দীন সরকার।

একই অভিযোগ আরেক সিএইচপি সাদেকুল ইসলামেরও।

এ বিষয়ে ইদ্রিস আলী আরও জানান, তার পরিবারের বানিজ্যিক মিশ্র ফল বাগানের ৩টি প্রদর্শনীতে আলাদা মালামাল দেয়ার কথা থাকলেও মাত্র একটি মালামাল প্রদান করা হয়। বাকি ২টির মালামাল উপ-সহকারী উদ্যান কর্মকর্তা আত্মসাত করেন।

একই প্রকল্পের দৈনিক মজুরী ভিত্তিতে অনিয়মিত শ্রমিক মহেষ, মিনতি খালকো ও মুক্তা কেরকেটির সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের মজুরী সীটে সই দেখিয়ে প্রায় ৬০ হাজার টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন এজার উদ্দীন সরকার। তারা এই মজুরীর টাকা পাননি।

অন্যদিকে উপ-সহকারী উদ্যান কর্মকর্তা মো. এজারউদ্দীনের বিরুদ্ধে সরকারী নার্সারী থেকে বারী-৪ জাতের ৭শ আম গাছের চারা নিজের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

নার্সারীতে কর্মরত কয়েকজন শ্রমিক জানান, এজারউদ্দিনের নির্দেশে তারা ৭শ আম গাছের চারা পিক-আপ গাড়িতে উঠিয়ে দেন। এ চারাগুলি তার গ্রামের বাড়ি গড়েয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।

নার্সারীতে ৪ হাজার ১০২ টি ভিয়েতনামী নারিকেলের চারা কোটেশনের মাধ্যমে মল্লিকা সীডস কোম্পানী থেকে ক্রয় করা হয়।

পরবর্তীতে প্রদর্শনীতে ১ হাজার ২০১ টি চারা বিতরন করা হলেও ২ হাজার ৯০১ টি চারার কোন হদিশ মিলেনি। অথচ প্রতিটি নারিকেলের চারা ৫৩২ টাকায় ক্রয় করা হয়।

এছাড়াও হর্টিকালচার সেন্টারে মাটি ভরাটের ক্রয়, সরবরাহ ও সেবা বাবদ ব্যয়ের বিল দেখিয়ে প্রায় ২ লাখ টাকার কাজ পান জে.আর সেন্টারের মেসার্স আলিম কন্সট্রাকশন নামে প্রতিষ্ঠান।
তারা সমস্ত টাকা উঠিয়ে নিয়ে নামমাত্র মাটি ভরাট করে।

এ ব্যাপারে আলিম কন্সট্রাকশনের ঠিকাদার আলিমের সাথে কথা বললে তিনি জানান, মাটি ভরাটের কাজটি তার লাইসেন্সে তার এক আত্মীয় করেছেন। মাটি ভরাট হয়েছে কিনা তার জানা নেই।

অথচ সঠিকভাবে মাটি ভরাট না করায় এ বছরের বন্যায় হর্টিকালচার সেন্টারটি পানিতে ভরে যায়। নার্সারীর চারাগুলি দীর্ঘীদন পানিতে ডুবে থাকে।

এ ব্যাপারে উপ-সহকারী উদ্যান কর্মকর্তা মো. এজারউদ্দিন সরকার জানান, ঐ সময়কার নার্সারী তত্তাবধায়ক আব্দুল হামিদ এ সমস্ত ব্যাপারে সব জানেন। উনিই বিস্তারিত বলতে পারবেন। আমার বিরুদ্ধে এ সকল অভিযোগ অসত্য। কেউ ষড়যন্ত্র করে এমন করতে পারে।

তৎকালীন নার্সারী তত্তাবধায়ক আব্দুল হামিদের সাথে এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার মুঠোফোনটি দীর্ঘ সময় বন্ধ পাওয়া যায়।

বর্তমান নার্সারী তত্তাবধায়ক আব্দুর রহিম জানান, আমি নতুন এসেছি। এ বিষয়ে তেমন কিছু জানা নেই।

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কে. এম. মাউদুদুল ইসলাম জানান, ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক হর্টিকালচার উইংয়ের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

তিনি ঠাকুরগাঁওয়ে এসে তদন্ত করবেন। এছাড়াও নতুন অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *