ভারতের সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন, মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের অবশ্যই ফেরত নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি বলেন, সন্ত্রাস দমন অভিযানে মিয়ানমার নিরীহ মানুষকে শাস্তি দিতে পারে না।
আজ সন্ধ্যায় গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সুষমা স্বরাজের উদ্ধৃতি দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমার সন্ত্রাসীদের শাস্তি দিতে পারে, নিরীহ মানুষকে নয়।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেন।
মিয়ানমারের বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার বাংলাদেশে আগমনকে একটি বড় সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশের জন্য একটি বিরাট বোঝা।
দুই দেশের যৌথ পরামর্শ কমিশন (জেসিসি)-এর বৈঠকে যোগ দিতে আজ দু’দিনের সফরে সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশে আসেন।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিমত রোহিঙ্গা ইস্যুটির একটি স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রাখাইন রাজ্যের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে আরো বেশি করে এগিয়ে আসা উচিত।
সুষমা স্বরাজ বলেন, যারা দুস্কৃতকারী এবং সন্ত্রাসী তাদের শাস্তি দিতে পারে মিয়ানমার। কিন্তু সাধারণ জনগণ কেন ভুক্তভোগী হবে?
এ সময় সুষমা স্বরাজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মিয়ানমারের নেতা অং সান সুকীকে দেয়া পরামর্শের কথা উল্লেখ করে বলেন, মোদী বলেছেন, তার (সুকী) আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যে সুনাম ও সুখ্যাতি রয়েছে তা যেন কোনভাবেই বিনষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে।
প্রেস সচিব বলেন, মিয়ানমারের শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদানে বাংলাদেশের মানবিক ভূমিকারও প্রশংসা করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে এবং ’৭৫-এ জাতির পিতাকে হত্যার পর তাঁদের দুইবোনকে আশ্রয় প্রদানে ভারতের অবদানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমার থেকে ২৫ আগস্টের পর শরণার্থীদের আগমন এবং বতর্মানে তাদের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছি মানবিক কারণে এবং ১৬ কোটি লোককে যদি খাওয়াতে পারি তবে মিয়ানমার থেকে আশ্রয়ের জন্য আগতদেরও খাওয়াতে পারবো। এছাড়া, মিয়ানমারের সঙ্গেও আমাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও মিয়ানমার যাচ্ছেন।
সুষমা স্বরাজ এ সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর দ্বিপাক্ষিক বিষয়াবলী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।
লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) নিয়ে যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হওয়ার কথা সেগুলোতে খানিকটা বিলম্ব হচ্ছে- যা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বতর্মান অবস্থা নিয়েও তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, ভারতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী, মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী এবং পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক উপস্থিত ছিলেন।
ভারতের পক্ষে তাদের পররাষ্ট্র সচিব ড. জয় শংকর এবং বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রীংলা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের শুরুতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ প্রধানমন্ত্রীর কাছে জাতীয় জাদুঘরের জন্য একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ধরনের ঐতিহাসিক স্মারক ও দলিল হস্তান্তর করেন।
যার মধ্যে রয়েছে, ১টি এম আই ফোর হেলিকপ্টার, ২টি পিটি ৭৬ ট্যাংক এবং ২৫টি সমরাস্ত্র।
অরিজিন্যাল সারেন্ডার সার্টিফিকেট’র কালার কপি, রিফিউজি রিলিফের অরিজিন্যাল পোস্টাল স্ট্যাম্প, অরিজিন্যাল রিফিউজি রিলিফের পোস্টাল স্টেশনারি, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে বিতরণের জন্য বিমান থেকে ফেলা লিফলেট, ইন্ডিয়ান আর্মি ইউনিটের ওয়ার ডায়েরি’র কপি, ইন্ডিয়ান আর্মি’র অ্যাকশন রিপোর্টের কপি, যুদ্ধকালীন মানচিত্রের সফট ও হার্ড কপি, আর্কাইভাল অডিও ক্লিপিংস এন্ড রেকর্ডিংয়ের কপি, যুদ্ধের আলোকচিত্র, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কিত প্রামাণ্য চিত্র, ইন্ডিয়ান আর্মির যুদ্ধের ভিডিও ক্লিপিংস, বই, যুদ্ধকালীন ভারতীয় সংবাদপত্রের ক্লিপিংস, জেলা ওয়ারি রিফিউজি ক্যাম্পের তালিকা প্রভৃতি।