বৃষ্টির বাধায় জলস্থলে স্থবির জীবন

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি ঢাকা

7f58d58f6b7843acbf0794c3ced9c35e-59eb2066d59fc

 

 

 

 

 

টানা তিন দিন ধরে বৃষ্টি। বাইরে বেরোলেই দুর্ভোগ। সড়কপথে যানজট, নৌপথেও দুর্গতি। বৈরী আবহাওয়ার কারণে মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ি নৌপথে গতকাল শুক্রবার রাত ১১টার পর থেকে সব ধরনের নৌ যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে ঘাট কর্তৃপক্ষ। ঘাট এলাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন চালক ও যাত্রীরা। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল এখন সীমিত। লঞ্চ চলাচল বন্ধ।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গতকাল ভোররাত থেকে শুরু হওয়া যানজট এখনো রয়েছে। এতে মহাসড়কে চলাচল করা যানবাহন সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না। যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মহাসড়কের গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে মির্জাপুরের সোহাগপুর পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার এলাকায় এবং টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে করটিয়া পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার যানজট। চন্দ্রা থেকে নবীনগর সড়কের আট কিলোমিটার পর্যন্ত যানজট। চন্দ্রা থেকে গাজীপুর রাস্তাতেও তিন কিলোমিটার পর্যন্ত যানজট।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়কের বিভিন্ন জায়গায় এমনিতেই গর্ত। বৃষ্টিতে এসব গর্তে জমেছে পানি। একই সঙ্গে চলছে চার লেন তৈরির খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। এতে গতকাল ভোররাত থেকে শুরু হয় যানজট। রাস্তা পার হতে সময় লাগছে দ্বিগুণের বেশি।

শিমুলিয়া ও কাঁঠালবাড়ি নৌপথ
শিমুলিয়া ও কাঁঠালবাড়ি নৌপথে ফেরি যোগাযোগ বন্ধ থাকায় দুই ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় সহস্রাধিক ছোট-বড় যানবাহন। ঘাট এলাকার যাত্রী, চালক ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে প্রচুর বৃষ্টি ঝরেছে। নদীতে তীব্র বাতাস ও ঢেউ থাকায় ১৭টি ফেরির মধ্যে তিনটি ফেরি চলাচল করলেও গতকাল রাত ১১টার পরে তা বন্ধ করে দেয় বিআইডব্লিউটিসি। এর আগে গতকাল সকালে লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ করে দিয়েছে শিমুলিয়ার অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

ঈগল পরিবহরে চালক মো. শমসের আলী খান বলেন, ‘গতকাল ভোরে যাত্রীবোঝাই বাস নিয়ে ঘাটে এসেছিলাম। কালকে বিকেল পর্যন্ত পারাপারের অপেক্ষায় ছিলাম। বাসের যাত্রীরা বৃষ্টিতে থাকা-খাওয়া নিয়ে খুব কষ্ট করছিলেন।’ ট্রাকচালক মো. সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ চার দিন হলো শিমুলিয়া ঘাটে আছি। ফেরিতে ওঠার সিরিয়াল পাইলেও আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় আর ফেরিতে উঠতে পারি নাই।’

ট্রাকচালক বাবুল শিকদার বলেন, ‘গতকাল সকাল থেকে আজ শনিবার পর্যন্ত রাস্তায় ট্রাক নিয়ে বসে আছি। বৃষ্টিতে রাস্তায় থাকা-খাওয়া নিয়ে খুব কষ্টে আছি। ট্রাকের মালামাল নিয়ে বরিশাল যেতে হবে।’

আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিমুলিয়া ঘাটের দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) মো. কাজলের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, গতকাল রাত থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ। গত রাত থেকে চারটি ঘাটে যানবাহনের চাপ আরও বেড়েছে। বর্তমানে সাত শতাধিক যানবাহন ঘাটে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে অনেক যাত্রীকে এ পথ থেকে চলে যেতে দেখা গেছে। ফেরি চলাচল স্বাভাবিক না হলে যানবাহনের চাপ কমবে না।

fdfa9025f6e97ce7cdb501171dc71037-59eb2068d6d91

 

 

 

 

শিমুলিয়া ঘাট বিআইডব্লিউটিএর নৌ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) মো. সোলায়মান বলেন, ‘আবহাওয়া চরম খারাপ থাকায় গতকালের মতো আজও লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ রেখেছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তা বন্ধ রাখা হবে।’ এ সময় যাত্রীদের বিকল্প পথ ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি।

কাঁঠালবাড়ি ঘাট ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) নাসির উদ্দিন সরকার বলেন, ফেরি বন্ধ থাকায় পারাপারের জন্য তিন শতাধিক মালবাহী ট্রাক ও ৫০ থেকে ৬০টি বাস ও ছোট গাড়ি অপেক্ষমাণ।

শিমুলিয়া ঘাটের বিআইডব্লিউটিসির সহকারী পরিচালক খন্দকার খালিদ নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ার কারণে বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৭টি ফেরির মধ্যে মাত্র তিনটি ফেরি পারাপারের কাজে ব্যবহার করতে পারলেও রাতে তা আর সম্ভব হয়নি। নদীর প্রচণ্ড ঢেউয়ের কারণে ২ নম্বর ঘাটের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। নদীতে পানি বাড়ার ফলে ৩ নম্বর ঘাটের পন্টুন ডুবে গেছে। তাই সাময়িকভাবে সব ফেরি বন্ধ। ঘাট এলাকায় কিছুটা দুর্ভোগ বেড়েছে। আমরা ঘাট সংস্কারের কাজ করছি।’ আবহাওয়া ঠিক হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে তিনি জানান।

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথ
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গতকাল দিবাগত রাত দুইটা থেকে আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। এতে পাটুরিয়া প্রান্তে দুই শতাধিক যাত্রীবাহী বাস ও দুই শতাধিক মালামালবাহী ট্রাক আটকা রয়েছে।

বর্তমানে এ পথে ১৬টি ফেরি রয়েছে। সীমিত আকারে ১২টি চলাচল করছে, চারটি বন্ধ। চারটির মধ্যে দুটি পাটুরিয়ার ভাসমান কারখানায় মেরামতের জন্য রয়েছে। আর দুটি প্রচণ্ড বাতাস ও ঢেউয়ের কারণে চলতে পারছে না। এ তথ্য জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মহিউদ্দিন রাসেল।

দৌলতদিয়া প্রান্তে প্রায় চার কিলোমিটার পর্যন্ত গাড়ির সারি রয়েছে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে থাকা পুলিশ ও ভুক্তভোগী যানবাহনের চালকেরা জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। এ ছাড়া মহাসড়কের মির্জাপুর অংশের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত। এরই মধ্যে গতকাল ভোররাত থেকে শুরু হয় বৃষ্টি, যা এখনো চলছে। বৃষ্টির কারণে এসব গর্তে পানি জমে। ফলে যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল করতে পারছে না। একপর্যায়ে সৃষ্টি হয় যানজট।

গতকাল মির্জাপুর উপজেলার সোহাগপুর থেকে গোড়াই শিল্পাঞ্চলের স্কয়ার এলাকা পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় দিনভর তীব্র যানজট ছিল। বিকেল থেকে যানজটের পরিধি বাড়তে থাকে। সন্ধ্যার পর থেকে স্কয়ার থেকে মির্জাপুর বাইপাসের পোষ্টকামুরী পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় রাত তিনটা পর্যন্ত যানজট লেগে যায়। আজ বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজট কমতে থাকে। তবে ক্যাডেট কলেজ এলাকায় মালবোঝাই দুটি ট্রাক আটকে গেলে যানবাহন চলাচল আবার বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে ওই এলাকার স্কয়ার থেকে ধেরুয়া পর্যন্ত এবং দেওহাটা থেকে পোস্টকামুরী পর্যন্ত যানজটে যানবাহন স্থবির হয়ে আছে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে করটিয়া পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার এলাকায় খানাখন্দে ভরা রাস্তায় গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে তীব্র যানজট দেখা দেয়। যানজটের কারণে উভয়মুখী যানবাহন স্থবির হয়ে পড়ে।

আজ সকাল পৌনে নয়টা থেকে সাতে নয়টা পর্যন্ত মহাসড়কের মির্জাপুর বাইপাসে অবস্থান করে দেখা গেছে যানবাহনের খুবই ধীরগতি। বাওয়ার কুমারজানী এলাকায় ঢাকাগামী যানবাহন একেবারেই কম দেখা গেছে। এর মধ্যে বাস ছিল মাত্র চারটি। টাঙ্গাইল হয়ে উত্তরাঞ্চলগামী কোনো বাস দেখা যায়নি। ট্রাক ও পিকআপ ভ্যান ছিল প্রচুর। মহাসড়কের চন্দ্রা ও এলেঙ্গা যানজট এবং বৃষ্টির কারণে বাসের সংখ্যা কম ছিল বলে চালকেরা জানিয়েছেন।

টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহ আলম জানান, খানাখন্দে ভরা রাস্তায় যানবাহনের খুবই ধীরগতি ছিল। এর মধ্যে আজ ভোররাত রাত চারটার দিকে পৌংলী এলাকায় ঢাকাগামী কলাবোঝাই একটি ট্রাক রাস্তার ওপর উল্টে পড়ে। এতে যান চলাচল ব্যাহত হয়। আজ সকালে ট্রাকটি রেকার দিয়ে সরানোর পর যান চলতে শুরু করে।

মির্জাপুরের গোড়াই হাইওয়ে থানার এসআই মোতালেব হোসেন জানান, মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের কাছে রাস্তার গর্তে আটকে যাওয়া ট্রাক পুলিশ রেকার দিয়ে সরানোর চেষ্টা করছে।

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *