নাটোরের উত্তরা গণভবনের ‘গ্র্যান্ড মাদার হাউস’ থেকে বেরিয়ে যাওয়া কর্মচারী আবুল কাশেম গতকাল বুধবার রাতে বসবাসের জন্য আবারও সেখানে ফিরে গেছেন। নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা) আসনের সাংসদ শফিকুল ইসলাম ও তাঁর সহযোগীরা গণভবনে গিয়ে তাঁকে সেখানে তুলে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত মঙ্গলবার প্রথম আলোর প্রথম পাতায় ‘রাজপালঙ্কে ঘুমান কর্মচারী, প্রাচীন গাছ কেটে সাবাড়’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর গঠিত তদন্ত কমিটি গাছ কাটাসহ বিভিন্ন অনিয়মের প্রমাণ পায়।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সংবাদ প্রকাশের পর মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উত্তরা গণভবন ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সভায় গণপূর্ত বিভাগের কর্মচারী আবুল কাশেম ও সবুর তালুকদারকে বুধবার সকালের মধ্যে ‘গ্র্যান্ড মাদার হাউস’ ছেড়ে যেতে বলা হয়। কাশেম ও সবুর তাঁদের ব্যক্তিগত মালামাল সরিয়ে নিয়ে সন্ধ্যার মধ্যে গ্র্যান্ড মাদার হাউস ত্যাগ করেন। বুধবার রাত নয়টার দিকে হঠাৎ করেই কাশেম ও তাঁর স্ত্রী আবারও সেখানে ফিরে আসেন। এর পরপরই সাংসদ শফিকুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোর্তুজা আলী বাবলু সেখানে আসেন। আগে থেকেই সেখানে অবস্থান করছিলেন নেজারত শাখার দায়িত্বরত নির্বাহী হাকিম (এনডিসি) অনিন্দ্য মণ্ডল ও তাঁর কার্যালয়ের নাজির আবদুল কুদ্দুস।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সাংসদ ওই সময় নাজির কুদ্দুসকে আবুল কাশেমের থাকার কক্ষে তালা না লাগানোর নির্দেশ দেন। উপস্থিত এনডিসি ও নাজির তাতে সম্মত না হলে সাংসদ ও আওয়ামী লীগ নেতা বাবলু তাঁদের প্রতি ক্ষুব্ধ হন। একপর্যায়ে এনডিসি অনিন্দ্য মণ্ডল জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুনকে ফোন করে সব ঘটনা খুলে বলেন। পরে তিনি কাশেমকে আরও সাত দিন জায়গায় থাকার সুযোগ দিয়ে সেখান থেকে চলে যান। পরে অন্যরা সেখান থেকে চলে আসেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে গ্র্যান্ড মাদার হাউসে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে লোকজন বসবাস করছেন। এ সময় কাশেমের বোন নুরুন্নাহার বেগম জানান, সাংসদ তাঁর ভাইকে (কাশেম) এখানে আরও সাত দিন থাকতে বলে গেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তালা খুলে দিতে না চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা বাবলু নাজির কুদ্দুসকে গালিগালাজ করেন। এ সময় এনডিসি তাঁকে স্মরণ করিয়ে দেন যে তাঁরা সরকারি কর্মকর্তা। তাঁদের সঙ্গে এ আচরণ করার কোনো এখতিয়ার তাঁর নেই।
গণভবনের এ ঘটনায় বিভিন্ন মহলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পরিচয় প্রকাশ করে এ ঘটনা নিয়ে অনেকে কথা বলতে চাননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলেন, একই সঙ্গে কর্মচারী সবুর ও কাশেমকে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে গ্র্যান্ড হাউস ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা ছেড়েও যান। আবার কী কারণে আবুল কাশেমকে সেখানে তুলে দেওয়া হলো তা সবার জানা। তাঁরা বলেন, আবুল কাশেমের স্ত্রী শামীম আরা শিল্পী নাটোর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তাঁর অনুরোধে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে আবুল কাশেমের বক্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁর বাসায় গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
উত্তরা গণভবন ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসচিব এনডিসি অনিন্দ্য মণ্ডল বুধবার রাতেই গণমাধ্যমকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘সাংসদের অনুরোধে মানবিক কারণে আবুল কাশেমকে গ্র্যান্ড মাদার হাউসে আরও সাত দিনের জন্য থাকতে দেওয়া হয়েছে।’
সাংসদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আবুল কাশেম ২৭ বছর ধরে গ্র্যান্ড মাদার হাউসে ছিলেন। তাঁকে হঠাৎ করে সেখান থেকে উচ্ছেদ করা উচিত নয়। তাই তাঁকে সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কাশেম সাহেবের থাকার ব্যাপারটার চেয়েও বড় ব্যাপার এখন পর্যন্ত গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মামলা না হওয়া। জেলা প্রশাসক বাইরে আছেন। আমি তাঁকে বলে দিয়েছি নির্বাহী প্রকৌশলীকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য।’