পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্র ফাঁস!

Slider সারাবিশ্ব

 

112726mamata-banerjee

 

 

 

 

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে খুনের দায়িত্ব দিতে চেয়ে পশ্চিমবঙ্গেরই এক কলেজ ছাত্রকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার একটি মোবাইল নম্বর থেকে পাঠানো হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি। সোমবার দুপুরে মুর্শিদাবাদের আদি গ্রামের বাসিন্দা, বর্তমানে বহরমপুর পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র কৃষ্ণেন্দু রোজ নামের এক ছাত্রের মোবাইলে ৯৪১ কোড নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা পাঠানো হয়।

তাঁকে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে খুন করার জন্য ভারতে এক জন লোক খোঁজা হচ্ছে। এ কাজের জন্য দেওয়া হবে এক লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড। এই মেসেজের ভিত্তিতে অভিযোগ জানানো হলেও প্রথম দিকে জেলা পুলিশ তেমন গুরুত্ব দেয়নি। মঙ্গলবার সিআইডি তদন্ত হাতে নেওয়ার পর তৎরতা শুরু হয়েছে।

ওই কলেজ পড়ুয়া বলেন, ‘আমি মেসেজ পাওয়ার পর প্রথমে গুরুত্ব দিইনি। কিন্তু ওরা একটা ছবি পাঠিয়ে বলে আমার লোকেশন ফলো করা হচ্ছে। তার পরেই ভয় পেয়ে যাই। সন্ধ্যা নাগাদ বহরমপুর থানায় গিয়ে পুরোটা জানানোর পর আমাকে বলা হয় মোবাইল কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে রাখুন। তা হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।

আমি থানা থেকে বেরিয়ে সব ডিলিট করে দিয়ে ওই নম্বরটি ব্লক করে দিই। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে ফের অন্য একটি নম্বর থেকে আমার লোকেশন জানানো হয়। তাতেই ঘাবড়ে যাই। বিষয়টি জানাই দুমকায় থাকা আমার দাদা সুমনকে। ’

পুলিশ আপাতত তদন্তে জানতে পেরেছে, কোড নম্বরটি আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার। ইন্ডিয়ান স্কুল অফ এথিক্যাল হ্যাকিংয়ের অধিকর্তা সন্দীপ সেনগুন্ত অবশ্য বলছেন, ‘বাইরের নম্বর ব্যবহার করে এ রাজ্যে বসেই এই কাজ করা সম্ভব। কেউ আমেরিকার নম্বর নিয়ে এখানে এলে কল না করলেও হোয়াটসঅ্যাপ চালু রাখতে পারেন। এটা সে ভাবেও হতে পারে। ’

সোমবার বেলা একটা নাগাদ বহরমপুরে কলেজ হোস্টেলে থাকার সময় কৃষ্ণেন্দুর মোবাইলে হঠাৎ করেই একটি অচেনা নম্বর থেকে মেসেজ আসে। অন্য প্রান্ত থেকে বলা হয়, ‘আমার নাম লাতিন। আমেরিকায় থাকি। ’ কৃষ্ণেন্দু পাল্টা জানতে চান, ‘আমাকে কেন এসএমএস করেছেন ?’ এ বার ও -প্রান্ত থেকে জবাব আসে, ‘আমরা এক জন জঙ্গি খুঁজছি। ভারতে এক জনকে চাই। এ জন্য এক লাখ পাউন্ড দেওয়া হবে। তোমার কোনও চিন্তা নেই। তুমি নিরাপদে থাকবে। তুমি কি তৈরি আছ ?’ কৃষ্ণেন্দু অপেক্ষা করতে বলেন। কৃষ্ণেন্দু বলেন, ‘আমি পরিচিত এক বন্ধুকে ফোন করি। সে বলে কথা চালিয়ে যেতে।

এর পর ফের ওপার থেকে বলা হয়, ‘দ্রুত জানাও না হলে অন্য কাউকে খুঁজতে হবে। ’ এ বার সরাসরি না করে দেন কৃষ্ণেন্দু। এও বলেন, ‘আমি দেশের ক্ষতি হয় এমন কোনও কাজ করব না। ’ উত্তর আসে, ‘আমরা ভারতের ক্ষতি করতে চাই না। শুধু এক জনকে মারতে হবে। তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। ’ এর পরেই থানার দ্বারস্থ হন কৃষ্ণেন্দু। কিন্তু রাত আটটা পঞ্চাশ নাগাদ আবার মেসেজ আসে। বলা হয়, ‘আমরা থানার আশেপাশে তোমার লোকেশন পাচ্ছি। তুমি আমাদের বোকা বানাতে পারবে না। বেশি চালাকি করলে তোমাকেও মেরে ফেলা হবে। ’

মঙ্গলবার সকালে দুমকায় ফোন করে আতঙ্কিত কৃষ্ণেন্দু তাঁর দাদা সুমনকে বিষয়টি জানান। তিনি কলকাতা রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাসকে জানান। অম্বরীশ সিআইডির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপারকেও বিস্তারিত জানানো হয়। কলেজের পক্ষ থেকেও পুলিশে যোগাযোগ করা হয়। সিআইডি সূত্রে জানানো হয়েছে, বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

তবে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, সম্ভবত এখান থেকেই কাজটি করা হয়েছে। কিন্তু এর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা জড়িত থাকায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *