কাউকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারীর মস্তিষ্ক বেশি সাড়া দেয়। লন্ডনভিত্তিক গবেষণা সাময়িকী ‘নেচার হিউম্যান বিহেভিয়র’-এ প্রকাশিত সমীক্ষায় এমন তথ্যই জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষকেরা দেখেছেন, কাউকে টাকা ধার দেওয়ার ক্ষেত্রে মেয়েদের মস্তিষ্ক বেশি ইতিবাচকভাবে সাড়া দেয় পুরুষের তুলনায়। টাকা কাছে রাখার প্রবণতা পুরুষেরই বেশি। জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোইকোনমিকস এবং সোশ্যাল নিউরোসায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক ফিলিপ টবলার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘মেয়েরা সামাজিক আচরণকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে এবং পুরুষের কাছে স্বার্থপরতাই বেশি দামি। মস্তিষ্কের কোন জায়গা থেকে সিদ্ধান্তের এ পার্থক্য হয়ে থাকে, সেটা আমাদের অজানা। তবে দুটি লিঙ্গের ক্ষেত্রেই এসব সিদ্ধান্তে ডোপামিন সিস্টেম সংকেত দেয়।’
‘সংকেত’ বলতে টবলার বোঝাতে চেয়েছেন, সমাজে চলার পথে বিভিন্ন সময়ে নেওয়া সিদ্ধান্তের সঙ্গে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাও আনুপাতিক হারে পাল্টে যায়। নারী ও পুরুষ কেন সমান স্বার্থপর নয়—এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে ‘ডোপামিন সিস্টেম’ নিয়ে গবেষণা করেছেন টবলার এবং তাঁর সহকর্মীরা। আমাদের জীবনে প্রেরণা, কোনো কিছু পাওয়ার ইচ্ছা, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে মস্তিষ্কের ‘রিওয়ার্ড সিস্টেম’—যেখানে ‘ডোপামিন সিস্টেম’-এর ভূমিকা একেবারেই মৌলিক।
নারী ও পুরুষের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ‘ডোপামিন সিস্টেম’-এর প্রভাব বুঝতে বিজ্ঞানীরা বেশ কিছু পরীক্ষা চালান। এর মধ্যে একটি পরীক্ষায় ৫৬ জন নারী ও পুরুষের হাতে কিছু টাকা দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এ টাকা তারা নিজেদের কাছে রাখতে পারে কিংবা একে অপরের সঙ্গে ভাগ করতে পারে। এ পরীক্ষায় দেখা গেছে, টাকা ধার দেওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের তুলনায় বেশি স্বার্থপর আচরণ করেছে পুরুষেরা।
তবে দ্বিতীয় পরীক্ষায় তাদের ‘অ্যামিসালপ্রাইড’ নামে একটি ওষুধ খাওয়ানোর পর ভিন্ন ফল পাওয়া যায়। এ ওষুধ মস্তিষ্কে ‘ডোপামিন সিস্টেম’-এর কার্যক্ষমতা ব্যাহত করে। দেখা গেছে, ওষুধটি খাওয়ার পর মেয়েরা বেশি স্বার্থপর হয়ে উঠছে পুরুষের তুলনায়। অন্যদিকে সহজাত আচরণ পাল্টে পুরুষ হয়ে উঠছে বেশি উদার। সাধারণত ‘সিজোফ্রেনিয়া’য় আক্রান্ত রোগীদের ‘অ্যান্টিসাইকোটিক’ হিসেবে এ ওষুধ ব্যবহৃত হয়। টবলার মনে করেন, ‘মস্তিষ্কের ডোপামিন সিস্টেমে হস্তক্ষেপের ফলে তারা একে অপরের অগ্রাধিকারকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।’