ঢাকা: বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবিলায় ডোনার কনফারেন্স বা দাতা সম্মেলন আহ্বান করার পরিকল্পনা করছেন জাতিসংঘের কর্মকর্তারা। এর উদ্দেশ্য রোহিঙ্গাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ ও তাদেরকে আশ্রয় দেয়া বাংলাদেশীদের সহায়তা করতে ৪৩ কোটি ৪০ লাখ ডলারের তহবিল সংগ্রহ করা। পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই সম্মেলন আগামী ২৩ শে অক্টোবর হতে পারে জেনেভায়।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি, জরুরি ত্রাণ সমন্বয়ক ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক লোকোক ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিষয়ক এজেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আওএম)-এর মহাপরিচালক উইলিয়াম লেসি সুইং এমন সম্মেলন করার পরিকল্পনা করছেন। জাতিসংঘের সাহায্য বিষয়ক এই তিন সংস্থার এসব প্রধান রোহিঙ্গা সঙ্কটকে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাওয়া সঙ্কট হিসেবে অভিহিত করেছেন। তারা এটাকে বড় একটি জরুরি মানবিক সঙ্কটও বলেছেন। তারা এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। সেই বিবৃতিটি পড়ে শুনিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরাঁর মুখপাত্র স্টিফেন ডুজাররিক। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২৫ শে আগস্ট মিয়ানমারের নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের ওপর বিদ্রোহীদের হামলায়র পর বৈষম্যমুলক সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকারে পরিণত হন রাখাইনের রোহিঙ্গারা। তারা আতঙ্গে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট আরেকটি ঘোষণায় জাতিসংঘ বলেছে, এ অঞ্চলে কয়েক দশকের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বেশি সংখ্যাক ‘শরণার্থীর’ প্রবেশ। সব মিলে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা কমপক্ষে আট লাখ। এ সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছেই। এসব রোহিঙ্গাকে সেবা দিতে বাংলাদেশ সরকার, স্থানীয় দাতব্য সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবক, জাতিসংঘ ও এনজিওগুলো কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। আরো বেশি কিছু জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন। বিবৃতিতে বলা হয়, এ প্রচেষ্টা আরো অনেক বৃদ্ধি করতে হবে। রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। তাদের মৌলিক অধিকার আশ্রয় নিশ্চিত করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে গ্রহণযোগ্য বসবাসের পরিবেশ। প্রতিদিনই অধিক সংখ্যক বিপন্ন মানুষ আসছে বাংলাদেশে। তাদের সঙ্গে কিছু নেই বললেই চলে। তারা এসেই মানুষে ঠাসাঠাসি অস্থায়ী তাঁবুতে তৈরি ক্যাম্পের ভিতর মাথা গুঁজছে। তাদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন খাদ্য, পানি, স্বাস্থ্য অন্যান্য মোলিক চাহিদা পূরণ করা। কিন্তু এখন তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, অনেক স্থানে এখনও সুপেয় পানির সুবিধা নেই। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই। এতে আশ্রয় গ্রহণকারী ও স্থানীয়দের উভয়ের জন্য বৃদ্ধি পাচ্ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের এই তিন প্রতিষ্ঠানের মূল কর্মকর্তারা সঙ্কট মোকাবিলায় সীমান্ত উন্মুক্ত রাখা, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন। প্রশংসা জানিয়েছেন স্থানীয়ভাবে এগিয়ে আসা মানুষকে। বিপন্ন রোহিঙ্গাদের সহায়তায় অর্থ সংগ্রহের জন্য তাই এমন সম্মেলনের উদ্যোগ নিয়েছে জাতিসংঘের ওই তিন সংস্থা। তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন ও কুয়েত। তারাও একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, এই সঙ্কট সারা বিশ্বের সরকারগুলোর কাছে দায়িত্ব পালনের সংহতি ও এই দায় ভাগাভাগি করে নেয়ার সুযোগ এনে দিয়েছে। এ লক্ষ্যে একটি জয়েন্ট রেসপন্স প্লান এরই মধ্যে হাতে নেয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য, ৪৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার সংগ্রহ করা। এ অর্থ দিয়ে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জীবন রক্ষা করা হবে এবং তাদেরকে আশ্রয় দেয়া মানুষের সেবা দেয়া হবে। সব মিলিয়ে এমন মানুষের সংখ্যা হতে পারে ১২ লাখ। জাতিসংঘের ওই তিন সংস্থার প্রধানরা তাদের বিবৃতিতে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের দুর্দশা শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান, তাদের দেশত্যাগ যাতে বন্ধ হয়, আশ্রয়দানকারী বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে আমাদের তৎপরতা আরো বৃদ্ধি করার জন্য আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানাই। আমাদেরকে আশ্রয় গ্রহণকারীদের অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে, যার অধীনে তরা নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে দেশে ফিরে যেতে পারেন।