ফুটওভার ব্রিজ এবং আন্ডার পাস ব্যাবহার না করে নিয়ম ভেঙ্গে রাস্তা পারাপার বন্ধ করার লক্ষ্যে রাজধানীর হোটেল রূপসী বাংলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত প্রায় চারটি পয়েন্টে বসানো হয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সপ্তাহব্যাপী পুলিশের এই অভিযানের ইতিমধ্যে দুই দিন শেষ হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দিনেই তারা ৩৩১ জনের কাছ থেকে ২৪ হাজার পচানব্বই টাকা, এবং দ্বিতীয় দিনে ২৫৬ জনের কাছ থেকে ১৩ হাজার ৭ শত ১৫ টাকা জরিমানা আদায় করেছে সেই সাথে রয়েছে এক জনের কারাদণ্ড। দুইদিনের পরিসংখ্যান তুলনার মাধ্যমেই দেখা যাচ্ছে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বেশ কিছুটা সফলতা রয়েছে। অর্থাৎ জরিমানা আদায়ের মাধ্যমে তারা কিছুটা হলেও অবৈধ ভাবে রাস্তা পারাপারের পথচারী সংখ্যা কমিয়ে এনেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানা যায়, এই অভিযান চালানোর পাশাপাশি মাইকিং এবং লিফলেট বিতরনের মাধ্যমে সাধারন মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। ফুট ওভার ব্রিজ এবং আন্ডার পাস ব্যাবহারে উদ্বুদ্ধ করন এবং পাশাপাশি অবৈধ ভাবে রাস্তা পারাপার বন্ধ করার লক্ষ্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কতৃক পরিচালিত এই ভ্রাম্যমাণ আদালত কতটা সফল হবে?
বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকা শহর অনেক আগেই শীর্ষ জায়গা দখল করেছে। অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, সীমিত রাস্তায় সীমাহীন যানবাহনের দখল বাজি ইত্যাদি নিয়ে প্রায় সব রকমের দূষনেই প্রবলভাবে প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে ঢাকা শহর। দিন দিন যে হারে দূষণের পরিমান বাড়ছে, দূষণ বন্ধে সেই হারে বাড়ছে না পদক্ষেপ।
পথচারীদের নিরাপদে চলাচলের জন্য ঢাকা শহরের ফুটপাথ, ফুটওভার ব্রিজ এগুলো যেন দূষণের বাইরে নয়। একদিকে দূষণ আর অপরদিকে ফুটপাথ দখল করে বসে আছে হকাররা। এসব পারাপারে তাই নিয়মিত সমস্যায় পরে পথচারীরা। বাধ্য হয়ে তারা নিয়ম ভেঙ্গে রাস্তা পারাপারে বাধ্য হয়। তবে এটি সকল ক্ষেত্রে নয়। মাঝে মধ্যে হেয়ালিপনা, দ্রুত রাস্তা পারাপারের জন্য নিয়ম ভেঙ্গে রাস্তা পারাপার করে পথচারীরা। তবে নিয়ম ভেঙ্গে রাস্তা পারাপারে পথচারীদের জন্য জরিমানা করার সাথে সাথে ফুটপাথ এবং আন্ডারপাসগুলো দখল মুক্ত করে দিতে হবে এবং সেই সাথে দূষণ মুক্ত। পথচারীদের জরিমানা করার আগে পথচারীদের চলাচলের জন্য ফুট ওভার ব্রিজ এবং আন্ডার পাস জারা দখল করে আছে তাদের জরিমানা করা দরকার। এবং সেই সাথে আইন করে হকার কতৃক ফুটপাথ দখল, ফুটওভার ব্রিজ দখল, আন্ডারপাস দখল চিরতরে নির্মূল করতে হবে।
ঢাকা শহরের অনিয়ন্ত্রিত এবং ত্রুটি পূর্ণ যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি যেন কোন মতেই থামছে না। আর অসহ্য যানযাট দুর্বিষহ করে তুলেছে নগরজীবন। মাঝে মধ্যে এসব গাড়ি তাদের যাত্রীদেরকে রাস্তার মাঝখানেই নামিয়ে দেয়। ফলে যাত্রী উপায়ন্তর না দেখে রাস্তার উপর দিয়েই পার হয়ে যায়।
এইসব গাড়ির যত্রতত্র পারকিং এবং যাত্রী ওঠানো নামানো বন্ধ করতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য শুধু পথচারীকে জরিমানা করলেই চলবে না, পথচারীদের পারাপারের জন্য বিকল্প জায়গা ফুটওভার এবং আন্ডারপাস কে ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে হবে এগুলোকে দখলমুক্ত এবং দূষণ মুক্ত করতে হবে। তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের এই সফলতা একটি সুদূরপ্রসারী জনসচেতনতামূলক পথ দেখাতে পারে।
– আবু জাফর, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক- সাতকাহন