‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবিতে আপনার অভিনয় নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। কেমন লাগছে?
অনেক ভালো লাগছে। দীপনদা (দীপঙ্কর দীপন) আর সানী ভাই (সানী সানোয়ার) দুজনই আমার পছন্দের মানুষ। ছবি মুক্তির সময় আমি দেশে আসতে পারিনি বলে তাঁদের মন খুব খারাপ। আমারও খুব খারাপ লাগছে। আমাদের বিশ্বাস ছিল দর্শক ছবিটি পছন্দ করবে। কিন্তু এতটা যে ভালো লাগবে, সেটা ভাবিনি। আমি শুধু নিজের কথা বলছি না, পুরো ছবিটা মানুষ কতটা পছন্দ করবে, এটাই ছিল মূল লক্ষ্য। শুনলাম, ছবির ব্যাপারে এখন পর্যন্ত খারাপ কিছু শোনা যায়নি। সবাই ইতিবাচক কথা বলছেন। অনেক দিন পর দেশি কোনো ছবির ক্ষেত্রে এমন ঘটছে। এটা আমার কাছে অনেক বড় বিষয়।
‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমার শুটিংয়ের শুরু থেকেই প্রচারণার সব জায়গায় আরিফিন শুভসহ অন্য শিল্পীদের দেখা গেছে। আপনাকে কোথাও দেখা যায়নি।
এটা ঠিক যে জিসান চরিত্রের পেছন দিকে তাকালে দেখতে পাবেন, আমার কিন্তু কোথাও কোনো নাম যায়নি। এগুলো সবই আমাদের পরিকল্পনা ছিল। আমাকে দীপনদা যখন গল্পটা বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে আমাকে নিয়ে আত্মবিশ্বাস ছিল। তবে কোথা থেকে তিনি এই কনফিডেন্স পেয়েছেন, আমি জানি না।
‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হলেন কীভাবে?
‘আদি’ সিনেমার শুটিংয়ে ২০১৫ সালে সিডনি থেকে ঢাকায় গেলাম। সে সময়ই দীপনদা আমার সঙ্গে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন, একটা দৃশ্য করে দেখাতে। তখন আমি বলেছিলাম, দাদা, আপনি আমাকে কিছুক্ষণ রুমে একা করে দেন। শুধু ক্যামেরা থাকুক। ওই দৃশ্যটা ছিল, হাত থেকে বুলেট পড়ার দৃশ্য। এরপর সবকিছু ম্যাজিক ছিল। আমরা সবাই খুব পরিশ্রম করেছি। শুটিংয়ের সময় দীপনদাকে বলেছিলাম, আমার চরিত্রটি সম্পর্কে সবাইকে জানান। তিনি আমাকে বলেছিলেন, তুমি শান্ত থাকো। দেখো কী হয়। এখন মনে হচ্ছে, দাদা আমাকে ঠিকই বলেছিলেন।
‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমার এত সাফল্য! দেশে আসছেন কবে?
আগামী নভেম্বরে সিডনিতে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ মুক্তি পাবে। এদিকে বাংলাদেশের অনেক প্রেক্ষাগৃহে নাকি ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমার টিকিট পাচ্ছেন না দর্শক। সব শুনে ইচ্ছে করছে, উড়ে আসি। তবে সিনেমা মুক্তির সময় যে আমি ঢাকায় থাকতে পারব না, এটা নিশ্চিত ছিলাম। এ জন্য মাস দুয়েক ধরে মানসিকভাবে নিজেকে তৈরি করেছি। এতটা ইতিবাচক রেসপন্স পাব আশা করিনি।
আপনি সিডনিতে কবে থেকে আছেন?
২০০২ সাল থেকে আমি সিডনিতে থাকি। অনেক দিন হয়ে গেছে। এখানে এসে আমি শুরুতে ফরেনসিক সায়েন্সের ওপর ব্যাচেলর ডিগ্রি করেছি। এরপর মাস্টার্স করেছি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে। বিজনেস অ্যাডমিনের ওপর ডিপ্লোমাও করেছি। ইচ্ছে আছে নিউরো সায়েন্স নিয়ে পিএইচডি করার। তাই আমি কিছু গবেষণা করছি। সিডনিতে আমি এখন একটা সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছি। ক্রাইম স্টপ ডিভিশন।
সিনেমার প্রতি ভালোবাসার কথা বলুন।
আমাদের পরিবার খুব সংস্কৃতিমনা। আমার বাবা আনিসুর রহমান তনু একজন সুরকার ও সংগীতপরিচালক। আমার রক্তে মিউজিক, আর্ট অ্যান্ড মুভি অনেক আগে থেকে বইছে। আমি কিন্তু ছবি আঁকি, গান কম্পোজ করি, গান গাই। এ বছর মার্চে আমি সিডনিতে অয়েল পেইন্টিংয়ের ওপর প্রদর্শনীও করেছি। আমি বিটিভির তালিকাভুক্ত শিল্পী। বিটিভিতে ‘শীতের পাখি’ নাটকে হুমায়ুন ফরীদি স্যারের সঙ্গে কাজ করেছি। এরপর আরও কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছি। আবুল হায়াত, ডলি জহুর—তাঁরা আমাকে ভালো করেই জানেন। শাওনের সঙ্গে (মেহের আফরোজ শাওন) বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। ঈশিতা আপুর সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক। ছোটবেলা থেকেই ভাইয়া (নির্মাতা তানিম রহমান অংশু) আর আমার আর্ট ও ক্রিয়েটিভি ছাড়া ভাবার কিছুই ছিল না। এসব নিয়ে খেলে বড় হয়েছি।
‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবির সাফল্য আপনাকে কতটা অনুপ্রাণিত করেছে?
আমি যখন ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমায় সাইন করি, তখন আশাবাদী ছিলাম। ‘আদি’ নিয়েও আমার আশা অনেক। তখন থেকে ইচ্ছে ছিল, ‘আদি’ অথবা ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমার কোনোটি যদি বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়, তাহলে লম্বা সময়ের জন্য বাংলাদেশে চলে আসব। আমার ইচ্ছে, কয়েকটি ভালো কাজ করব। আমি এখন আর পড়াশোনা করছি না। কাজের ফাঁকে অবসর সময়ে গবেষণার কাজ করছি।
অভিনয় কি তাহলে পেশা হিসেবে নিচ্ছেন?
আমি অভিনয়কে প্রফেশনালি নিয়েছি। ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এর সাফল্যে এখন লম্বা সময়ের জন্য চলে আসতে পারব।
‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমায় আপনি খলনায়ক। আপনার অভিনয় দেখে অনেকেই বলছেন, আপনি তো নায়ক হিসেবেই কাজ করতে পারেন।
আমি খুব সৌভাগ্যবান। আমি এও শুনেছি, জিসানের মারা যাওয়ার সময় প্রেক্ষাগৃহের দর্শক খুব কষ্ট পেয়েছেন। এটা অভিনয়শিল্পী হিসেবে আমার জন্য অনেক আনন্দের। ‘আদি’ সিনেমায় কিন্তু আমি ভিলেন না। আরও যে দুটি সিনেমা আসছে—‘মৃত্যুপুরী’ আর ‘অপরেশন অগ্নিপথ’—এগুলোতেও ভিলেন না। সব ধরনের চরিত্রে কাজ করতে চাই। আমি গল্পের হিরো হতে চাই। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশের দর্শকের মানসিকতার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তাঁরা এখন সিনেমা ভালো বোঝেন। আশা করছি, সামনে দর্শক আমাকে অন্য চরিত্রেও দেখতে পাবেন।